প্রতীকী ছবি
সারা রাত সদ্যোজাতদের দেখভাল করে বাড়ি ফিরেছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগের নার্স। করোনায় আতঙ্কিত বাড়িওয়ালা তাঁকে বললেন, ‘‘ঘর ছেড়ে দিন!’’ তিন বছরের শিশুকে নিয়ে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে কোথায় যাবেন, এখন সেই চিন্তা করছেন এসএনসিইউ-এর নার্স বৈশাখী জানা।
বৈশাখীর মতো অনেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীকেই এমন বয়কটের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। কোথাও ডাক্তারবাবুর গাড়ি চালাতে বেঁকে বসেছেন চালক! কোথাও আবার বেসরকারি সংস্থার নিযুক্ত রক্ষী এবং সাফাইকর্মীরা হাসপাতালে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। সোমবার সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর পর থেকে সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা ফতোয়ার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ। বাবা সেখানে কাজ করায় মেয়েকে টিউশন নিতে আসতে নিষেধ করার অভিযোগও উঠেছে।
এক শ্রেণির মানুষের এমন হাবভাব দেখে গত রবিবার জনতা কার্ফুর দিন যে ভাবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশ্যে অভিবাদন জানানো হয়েছিল, তার আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
স্বামী এবং তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে গড়িয়ায় ভাড়ায় থাকেন আর জি করের নার্স বৈশাখী। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ করিনি এখনও। সেবার ধর্মে সে কাজ করতে হলেও অস্বীকারের সুযোগ নেই। লকডাউনের মধ্যে কোথায় গিয়ে বাড়ি খুঁজব?’’ বাড়ির মালিকের বক্তব্য, তিনি গৃহশিক্ষক। আপাতত তাঁকে পড়াতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে যেতে চান তিনি। সে জন্য ওই নার্সকে বাড়ি খুঁজতে বলা হয়েছে! যা ঘুরিয়ে নিদান কার্যকর করার পন্থা বলেই মনে করছেন ওই নার্স।
একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে বেলেঘাটা আইডি-র এক নার্সের। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বুঝতে পারছি মানুষ কত স্বার্থপর!’’ প্রতিবেশীদের চাপের মুখে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজির চিকিৎসক অনির্বাণ দত্তও ভাড়াবাড়ি ছেড়ে হাসপাতালের কোয়ার্টার্সে থাকছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের লড়াই করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ সেই লড়াইয়ে পাশে থাকবেন, এটুকুই চাওয়া।’’
ফতোয়ার শিকার হওয়া এক বেসরকারি হাসপাতালের পুরুষ নার্সের কথায়, ‘‘যে কোনও পরিস্থিতিতে সেবা করতেই শিখেছি। এখন শিক্ষিত মানুষ বাড়ি ছাড়তে বলায় মনে হচ্ছে শিক্ষার কোনও দাম নেই।’’
সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, লকডাউন কার্যকর হওয়ার পরে গত দু’দিন কর্মস্থলে পৌঁছতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। যেমন, সল্টলেক থেকে এ দিনই হেঁটে আইডি পৌঁছেছেন এক চিকিৎসক। পাতিপুকুর থেকে হেঁটে সোম এবং মঙ্গলবার রাতে ডিউটিতে গিয়েছেন আর জি করের এক নার্স। অপরিচিতের থেকে লিফট নিয়ে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থলে গিয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে।
যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ভবনের নার্সিং বিভাগের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হবেন না বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। সমাজের একটি অংশের মানুষের অনভিপ্রেত আচরণ তাঁদের মনোবলে আঘাত করছে।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি, চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ভয়াবহ পরিস্থিতি। করোনাভাইরাসের সঙ্গে যখন অসম যুদ্ধে লড়ছি, তখন সমাজকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়? এক শ্রেণির মানুষের এমন আচরণের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছেও কড়া অবস্থান আশা করছেন চিকিৎসকেরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy