Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Janata Curfew

কম আয়ের রেকর্ড গড়ল ফাঁকা মেট্রো

এর আগে ধর্মঘটে শহরবাসী ফাঁকা মেট্রো দেখেছেন। কিন্তু আজ, সোমবার থেকে টানা ন’দিন ধরে দিনভর পরিষেবা বন্ধ, মেট্রোর ইতিহাসে প্রথম।

বহন-চিত্র: জনতা কার্ফুর ছাপ পড়েছে মেট্রোতে। ফাইল চিত্র।

বহন-চিত্র: জনতা কার্ফুর ছাপ পড়েছে মেট্রোতে। ফাইল চিত্র।

আর্যভট্ট খান ও ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৩:০৬
Share: Save:

বিকেল পাঁচটা। প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে শ্যামবাজার স্টেশনে ঢুকল কবি সুভাষগামী মেট্রো। এত সময়ের ব্যবধান সত্ত্বেও অবশ্য যাত্রীদের মধ্যে কোনও হেলদোল নজরে পড়ল না। ধীরে-সুস্থে গন্তব্যে পৌঁছতে মেট্রোয় চড়ে বসলেন জনা কয়েক যাত্রী। বহু আসন ফাঁকা। এসপ্লানেড, পার্ক স্ট্রিট, কালীঘাট, টালিগঞ্জের মতো স্টেশন থেকে কোনও ট্রেনে এক জন, কোনও ট্রেনে যাত্রীই উঠতে দেখা গেল না। অন্য যে কোনও দিনে একই সময়ের ছবির সঙ্গে তুলনা টানলেই বোঝা যাবে যে, রবিবার স্বাভাবিক দিন ছিল না। এ দিন ছিল প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘জনতা কার্ফু’। মেট্রো তো বটেই, সম্ভবত স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে প্রথম এমন কার্ফুর সাক্ষী রইলেন ভারতবাসী।

এর আগে ধর্মঘটে শহরবাসী ফাঁকা মেট্রো দেখেছেন। কিন্তু আজ, সোমবার থেকে টানা ন’দিন ধরে দিনভর পরিষেবা বন্ধ, মেট্রোর ইতিহাসে প্রথম। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ যাত্রী নিয়ে অবিরাম ছুটে চলা মেট্রোর এই দীর্ঘ বিশ্রাম কী ভাবে দেখছেন শহরবাসী? হাতে গোনা যে ক’জন মেট্রোযাত্রীকে এ দিন দেখা গেল, তাঁরা প্রায় সকলেই কর্মস্থলে যেতে নির্ভর করেন মেট্রোর উপরে। পরিষেবা বন্ধ হলে সমস্যায় পড়বেন ওই যাত্রীদের অনেকেই। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে জরুরি পরিষেবার অঙ্গ হিসেবে কর্মস্থলে তাঁদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। তবুও রেল মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, কাছাকাছি গন্তব্য হলে হেঁটে বা সাইকেলে চলে যাবেন তাঁরা। অনেকে আবার মনে করছেন, কাজের জায়গায় থেকে যাওয়াই ভাল। প্রত্যেকেরই মত, ‘‘দেশ বাঁচলে তবেই তো নিজে বাঁচবেন।’’

কাজে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই? অনেক ক্ষণ স্টেশনে অপেক্ষা করতে গিয়ে বিরক্ত হননি? প্রশ্ন শুনে তাকালেন মাঝবয়সি বিদ্যাসুন্দর ঘোষ। খড়দহ থেকে রোজ ট্রেনে দমদমে নেমে মেট্রোয় টালিগঞ্জে যান বেকারি সংস্থার কর্মী বিদ্যাসুন্দর। তাঁর কথায়, ‘‘আজ যে এমন হবে সেটা জানতামই। তাই সময় নিয়ে বেরিয়েছিলাম।’’ কাল কী করবেন? ‘‘এত দূরে থাকি যে মেট্রো ছাড়া

ভাবতেই পারি না। আমাদের সংস্থায় কাউকে না কাউকে থাকতেই হয়। ঠিক হয়েছে, কয়েক দিন অফিসেই থাকব। বাড়িতে সব প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে রেখে এসেছি।’’ বলে উঠলেন বিদ্যাসুন্দরবাবু।

শ্যামবাজারের বাসিন্দা দেবাশিস পাত্রের অফিসে যেতে মেট্রোই ভরসা। আজ, থেকে অফিস বন্ধ। কিন্তু অসুস্থ দিদিকে দেখতে প্রতিদিনই তাঁকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যেতে হয়। তিনটি স্টেশন হেঁটেই চলে যাবেন বলে জানালেন তিনি। কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের ব্যবসায়ী দমদমের বাসিন্দা অনামিকা বসুর ভরসা মেট্রো। আপাতত দোকান বন্ধ। তাই রেহাই মিলেছে মেট্রো বন্ধের দুশ্চিন্তা থেকে। খুব প্রয়োজনে মোটরবাইক ব্যবহার করার পক্ষপাতী অনামিকা মেট্রো বা যানবাহন বন্ধ করে ভাইরাস-বিপর্যয় ঠেকানোর সরকারি প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

রবিবার সারাদিনের পরে কেমন অবস্থা মেট্রো রেলের? মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, কোনও স্টেশন থেকে ৪০০, কোথাও ২০০, কোথাও আবার তারও কম যাত্রী টোকেন কিনেছেন। সকাল ন’টা থেকে চলেছিল মেট্রো পরিষেবা। রাত আটটা পর্যন্ত ৯,৮৩১ জন যাত্রী মেট্রোয় চড়েছেন। রবিবার দিনের শেষে মেট্রোর ভাঁড়ারে এসেছে এক লক্ষ টাকা। গত রবিবার ওই সময়ের মধ্যে যাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লক্ষ। দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু ছিল ইস্ট-ওয়েস্ট পরিষেবা। মোট ১১৪ জন যাত্রী নিয়ে ছুটেছে ওই মেট্রো। স্মার্ট কার্ড ছাড়া ছ’টি স্টেশন থেকে নগদে রোজগার হয়েছে ৪৮০ টাকা! মেট্রোর ইতিহাসে এত কম যাত্রী আদৌ হয়েছে কি না, সেটাই মনে পারছিলেন না আধিকারিকেরা।

এই ক’দিন ধরে ডিউটিতে যোগ দিতে গিয়ে খানিকটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল মেট্রোর কর্মীদের। তাই জনতা কার্ফুর আগের রাতেই অনেকে থেকে গিয়েছিলেন কর্মস্থলে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে যাত্রীদের পাশাপাশি তাই স্বস্তি ফেলছেন তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Janata Curfew Coronavirus Kolkata Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE