বে-হুঁশ: সোমবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়েছে লকডাউন। কিন্তু তার পরেও হুঁশ নেই অনেকেরই। বিকেল ৫টা ৩৭ মিনিট। ধর্মতলা চত্বরে এক বাইকচালককে আটকালেন পুলিশকর্মী। সন্ধ্যা ৭টা ১০। শিয়ালদহ এলাকায় তখনও পথে একাধিক গাড়ি ও বাইক। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য, রণজিৎ নন্দী
জনতা কার্ফুর দিন সংযম দেখিয়েছিলেন শহরবাসী। কিন্তু, সোমবার লকডাউন চালুর পরে দেখা গেল তারই উল্টো ছবি!
রবিবার জনতা কার্ফুর দিনই রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, সোমবার বিকেল ৫টা থেকে শহরে চালু হবে লকডাউন। তা জানা সত্ত্বেও এ দিন ৫টার পরে শহরের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। কোনও পাড়ায় চলেছে পুজোর আয়োজন। কোথাও আবার চলেছে তাস, ফুটবল খেলা। এমনকি শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন মদের দোকানের সামনে ক্রেতাদের লাইন এতটাই লম্বা ছিল যে, ৫টা বেজে গেলেও দোকান বন্ধ করা যায়নি।
এ সব দেখে শহরের রাস্তায় কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিকের প্রশ্ন— ‘‘দেশ জুড়ে যখন আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তখনও কি এই সব লোকজনের হুঁশ ফিরবে না?’’ পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার নির্দেশে এ দিন বিকেলে সমস্ত ডেপুটি কমিশনার শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গিয়ে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখেন। তবে মূল রাস্তাগুলিতে তাঁরা নজরদারি চালালেও পাড়ার ভিতরে তেমন কোনও পুলিশি টহলদারি না থাকার সুযোগে মোড়ে মোড়ে জটলা, আড্ডা চলেছে বলেও অভিযোগ শহরবাসীর।
এ দিন শহরে লকডাউন চালু হওয়ার পরেও ধর্মতলার সরকারি বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে অসংখ্য যাত্রীকে। তাঁদের অধিকাংশই মূলত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা। আদৌ বাস মিলবে কি না, বুঝতে না-পেরে অনেক যাত্রী মালবাহী গাড়ি ভাড়া করেই রওনা দিয়েছেন গন্তব্যে। আর যাঁরা বাসে উঠতে পারেননি, তাঁদের রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাসস্ট্যান্ডে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই গত শনিবার তামিলনাড়ু, কেরল থেকে ট্রেনে চেপে এ দিন কলকাতায় এসে নেমেছেন।
লকডাউনের পরে বহু জায়গায় এ দিন যাত্রিবাহী গাড়ি থামিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকেরা জানতে চেয়েছেন, কোথায় যাওয়া হচ্ছে। কী উদ্দেশ্যে রাস্তায় বেরিয়েছেন ওই যাত্রী। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ধর্মতলা চত্বরে ঘুরে বেড়ানো দুই যুবকের পথ আটকান টহলরত পুলিকর্মীরা। জানতে চান, ‘‘রাস্তায় ঘুরছেন কেন? কী প্রয়োজন?’’ সদুত্তর দিতে না পেরে শেষমেশ ভুল স্বীকার করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে পা বাড়ালেন ওই যুবকেরা। আবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টাতেও গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে একটি পানের দোকান খোলা দেখে পুলিশকর্মীরা দোকানিকে সতর্ক করে গেলেন। ওই দোকানির কথায়, ‘‘আমি প্রায় বন্ধ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু এক-এক জন করে এসে জিনিস দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। তবে আর খোলা রাখব না।’’
এ দিন লকডাউন শুরুর পরেও চাঁদনি চক এলাকায় খোলা থাকা একটি চায়ের দোকান অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় পুলিশ। ওই চায়ের দোকানি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম চা তৈরির
সরঞ্জাম বাড়ি নিয়ে যাব। কিন্তু পুলিশের ধমক খেয়ে সব দোকানে রেখেই ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছি।’’ রাস্তার ধারে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে স্তব্ধ শহরটার ছবি মোবাইল-বন্দি করছিলেন এক উৎসাহী যুবক। তা দেখে এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘এঁদের কি কোনও কিছুতেই শিক্ষা হবে না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy