Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

করোনা-আতঙ্ক বিয়ের অনুষ্ঠানেও

শুধু শৌনক বা রাহুলই নন। অনুষ্ঠান বাড়ি যাঁরা ভাড়া দেন, যাঁরা কেটারিংয়ের কাজ করেন, চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালেও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০২:৪১
Share: Save:

মুষড়ে পড়েছেন শৌনক। শ্রীরামপুরের এই যুবকের বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে আগামী ১৮ এপ্রিল। সে দিনই তাঁর হবু স্ত্রী সুমনার জন্মদিন। কিন্তু, এই আনন্দ-অনুষ্ঠানে বড়সড় থাবা বসিয়েছে করোনা। শৌনকের নিজের দাদা কৌশিক দাস থাকেন আমেরিকায়। করোনা-আতঙ্কে আপাতত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর ভারতে ঢোকা নিষেধ। শৌনক বলছেন, ‘‘আমার বিয়ে, অথচ দাদার থাকা নিয়েই অনিশ্চয়তা! বাড়ি ভাড়া, কেটারার সব ঠিক। এখন বিয়ের দিন পিছোনো যাচ্ছে না। সিডনিতে থাকা মামা তো জানিয়েই দিয়েছেন, আসতে পারবেন না।’’

গুগল-এ গাইড হিসেবে কাজ করার সুবাদে বহু বিদেশি বন্ধু রয়েছে শৌনকের। কেউ থাকেন বাংলাদেশ, কেউ শ্রীলঙ্কা, কেউ আমেরিকায়। তাঁদের অনেককেই আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কেউ কেউ আসার টিকিটও কেটে ফেলেছিলেন। কিন্তু, আপাতত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও বিদেশিকেই ভারতে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সব মিলিয়ে মন ভাল নেই শৌনকের।

আগামী ১৭ এপ্রিল কলকাতায় বিয়ে হওয়ার কথা ছিল বেলেঘাটার যুবক রাহুল বিশ্বাসের। চাকরি সূত্রে তিনি এখন দুবাইয়ে। তাঁর হবু স্ত্রী রয়েছেন কম্বোডিয়ায়। করোনার জন্য একের পর এক আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল হচ্ছে। দুবাই থেকে ভারতে এসে ফেরার পথে দুবাই বিমানবন্দরে ১৫ দিনের জন্য আলাদা করে রাখা (কোয়ারেন্টাইন) হচ্ছে যাত্রীদের। রাহুলের বন্ধু প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘এই অবস্থায় ১৭ এপ্রিল বিয়ে ঝুঁকির হয়ে যাবে। বাড়ি ভাড়া করা হয়ে গিয়েছিল। কার্ডও প্রায় ছাপার মুখে। কিন্তু, আপাতত সব পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন বিয়ে হবে। কী আর করা!’’

শুধু শৌনক বা রাহুলই নন। অনুষ্ঠান বাড়ি যাঁরা ভাড়া দেন, যাঁরা কেটারিংয়ের কাজ করেন, চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালেও। শহরের এক নামী কেটারিং সংস্থার মালিক দেবকুমার গুঁই জানিয়েছেন, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান বাতিল না হলেও চিকিৎসকদের একটি সম্মেলন বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেখানে তাঁদের খাবার সরবরাহ করার কথা ছিল। ট্র্যাভেল এজেন্টস ফেডারেশন-এর কর্তা অনিল পঞ্জাবি জানিয়েছেন, ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ বা দলবল নিয়ে ভিন্‌ দেশে গিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা মার খেয়েছে করোনার জন্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে এই ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল হচ্ছে।

এতে এক দিকে কমছে খরচও। প্রতি বছর এই ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এক-একটি ক্ষেত্রে ১৫০ থেকে ৩০০ জন যান বিয়ের নিমন্ত্রণে। কলকাতা থেকে দলবল নিয়ে গিয়ে প্রধানত তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ম্যাকাও, বালি-তে এই বিয়ে হয়। পুরোহিত থেকে সানাই — সব জোগাড় করে দেন ‘ওয়েডিং প্ল্যানার’। এমনই এক জন ওয়েডিং প্ল্যানার ঋতু আগরওয়াল বলছেন, ‘‘অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা ভেবে আপাতত সব ডেস্টিনেশন ওয়েডিং বাতিল করা হয়েছে।’’ বিদেশে যাতায়াতের এই নিষেধাজ্ঞা যত দিন না পুরোপুরি উঠছে, তত দিন এই অবস্থা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। যে লক্ষ লক্ষ টাকা এই কারণে খরচ হওয়ার কথা, সেটাও আপাতত বেঁচে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Marriage Chicken
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE