Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

‘মেট্রো তো গ্যালপিং নয়, যাত্রী নিয়ন্ত্রণ হবে কী ভাবে’

সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হন এবং ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি এড়ানোর চেষ্টা না করেন তা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে বলেই মত চিকিৎসকদের।

কলকাতা মেট্রোর এই ভিড় কি এড়ানো সম্ভব? —ফাইল চিত্র

কলকাতা মেট্রোর এই ভিড় কি এড়ানো সম্ভব? —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০৩:৪৩
Share: Save:

মেট্রো চললে বাসের উপরে চাপ কমবে। তাই শুক্রবারই শর্তসাপেক্ষে শহরে মেট্রো চলাচলের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কী ভাবে তা সম্ভব তা এখনও স্পষ্ট নয় মেট্রোকর্তাদের কাছে। বিশেষত দিনের ব্যস্ত সময়ে কী ভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে ব্যাপারেও অনেক ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশও মনে করেন, ট্রেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী ওঠার পরে বাকিদের ওঠা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা হতে পারে। তাই সেই দিকটিও বিচারে রাখা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে ফের মেট্রো চলবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।

মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার জানান, রাজ্য সরকারের তরফে রেলমন্ত্রকের কাছে প্রথমে প্রস্তাব যাবে। কলকাতার বর্তমান পরিস্থিতিতে মেট্রো চালানো সঙ্গত হবে কি না ও আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় খতিয়ে দেখার পরেই রেলবোর্ড থেকে মেট্রোর কাছে নির্দেশ আসবে। তিনি বলেন, ‘‘চালানোর নির্দেশ আসার পরেই ঠিক হবে কী ভাবে ও কত ক্ষণ অন্তর পরিষেবা দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

তবে সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হন এবং ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি এড়ানোর চেষ্টা না করেন তা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে বলেই মত চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, সমস্ত দায়িত্ব প্রশাসনের উপরে না ছেড়ে মানুষকে নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে বিপর্যয় ঠেকানো কার্যত অসম্ভব। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘ট্রেন বা মেট্রো যা-ই হোক না কেন, একে অপরের কাছাকাছি থাকলে, সেখানে যদি ঠিক মতো নিয়ম মানা না হয় তা হলে তো সংক্রমণ ছড়াতেই পারে। আর মেট্রোয় যে গাদাগাদি ভিড় দেখা যায় তাতে সেই আশঙ্কা থেকেই যায়।’’

শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মেট্রো চলাচল শুরু হলে মানুষের সুবিধা হবে। তবে তাঁর পরামর্শ ছিল, মেট্রোয় যতগুলি আসন তার বেশি যেন যাত্রী বহন করা না হয়। একসঙ্গে অনেক লোক ঢোকানো যাবে না। যত জন টিকিট কাটবেন তত জনই গেট দিয়ে ঢুকবেন। পাশাপাশি যাত্রীদের তাড়াহুড়ো করতে বারণ করেন তিনি।

কিন্তু এই পরামর্শ কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে সংশয়ে মেট্রোকর্মী থেকে শুরু করে বহু যাত্রীই। কারণ, ধরা যাক নোয়াপাড়া বা দমদম কিংবা কবি সুভাষ থেকে যখন মেট্রো ছাড়ছে তখনই সব আসন ভর্তি হয়ে গেল। তা হলে কি পরবর্তী বা মাঝের স্টেশন থেকে যাত্রী উঠবেন না? এক যাত্রীর কথায়, ‘‘লোকাল ট্রেন গ্যালপিং হয় জানতাম। মেট্রো তো গ্যালপিং নয়। যাত্রী নিয়ন্ত্রণ হবে কী ভাবে?’’ সংশয় রয়েছে আরও অনেক জায়গাতেই। যেমন, টিকিট কাটার পরে সেই যাত্রী যখন ট্রেনে উঠবেন তখন কী ভাবে জানা সম্ভব তিনি কোন স্টেশনে নামবেন? যদি তা বোঝা না যায় তা হলে কী ভাবে জানা যাবে কোথায় কখন কত আসন খালি হল?

জানা যাচ্ছে, স্টেশনে ঢোকার আগে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা হবে। প্রশ্ন উঠছে, সব মেট্রো স্টেশনের বাইরেই কি দূরত্ব-বিধি মেনে দাঁড়ানোর উপায় রয়েছে? এক যাত্রীর কথায়, ‘‘দমদম বা নোয়াপাড়ার মতো স্টেশনের বাইরে ঘিঞ্জি সঙ্কীর্ণ রাস্তা। সেখানে লাইনে দাঁড়ানো মানে একে অন্যের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা।’’ আর এক নিত্য যাত্রীর কথায়, ‘‘যদি কত আসন ফাঁকা আছে তা দেখেই যাত্রী তোলা হয়, তা হলে তো শহরের স্টেশনের বাইরের ফুটপাতে লম্বা লাইন লেগেই থাকবে।’’ সব মিলিয়ে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে গিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাবে কি না, সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata Kolkata Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE