Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রেড রোড দুর্ঘটনা

সুবিচার পাবেন অভিমন্যু, প্রত্যয়ী সেনা

অনেকেই তুলছেন ২০০২ সালের কুখ্যাত ঘটনাটার কথা। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে চার ফুটপাথবাসীকে চাপা দিয়ে পালানোর এক মামলা। অভিযুক্তের নাম সলমন খান! ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। কিন্তু ১৩ বছর ধরে চলা মামলায় ফাঁকফোকর ধরা পড়েছিল অজস্র। দুই প্রধান সাক্ষীর এক জন দেশ ছাড়েন, অন্য জন বেঘোরে মারা যান। মহারাষ্ট্র সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বারবার অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী বলেই হাইকোর্টে ছাড় পেয়ে গেলেন সলমন!

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

অনেকেই তুলছেন ২০০২ সালের কুখ্যাত ঘটনাটার কথা। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে চার ফুটপাথবাসীকে চাপা দিয়ে পালানোর এক মামলা। অভিযুক্তের নাম সলমন খান!

‘বজরঙ্গি ভাইজান’ বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। কিন্তু ১৩ বছর ধরে চলা মামলায় ফাঁকফোকর ধরা পড়েছিল অজস্র। দুই প্রধান সাক্ষীর এক জন দেশ ছাড়েন, অন্য জন বেঘোরে মারা যান। মহারাষ্ট্র সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বারবার অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী বলেই হাইকোর্টে ছাড় পেয়ে গেলেন সলমন!

গত বুধবার রেড রোডে বেপরোয়া অডির নীচে বায়ুসেনা অফিসার অভিমন্যু গৌড়ের মৃত্যুর পর সলমন-মামলার কথাই মনে পড়ছে তাঁর সিনিয়র-জুনিয়র অফিসারদের অনেকের। এবং তাঁরা জানিয়ে দিচ্ছেন, অভিমন্যুর মৃত্যুকে ‘আরও একটা সলমন-কাণ্ড’ হতে দেবেন না তাঁরা। দু-এক জন বায়ুসেনা অফিসার বলেই ফেললেন, ‘‘মুম্বইয়ের ফুটপাথবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না। কিন্তু রেড রোডে কোনও ফুটপাথবাসী চাপা পড়েননি। বায়ুসেনার এক অফিসার মারা গিয়েছেন। গোটা সেনাবাহিনী তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছে।’’ সেনা মুখপাত্র, উইং কম্যান্ডার এস এস বিরদি শুক্রবার বলেন, ‘‘অভিমন্যুর পরিবারকে আমরা কথা দিয়েছি, প্রকৃত দোষীকে শাস্তি দেওয়া হবে। খুব তাড়াতাড়ি যাতে দোষী সাজা পায়, তা-ও দেখব আমরা।’’

ঘটনার দিন থেকেই অন্যতম প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এসেছে তৃণমূল নেতা তথা ব্যবসায়ী মহম্মদ সোহরাবের ছোট ছেলে সাম্বিয়ার নাম। যদিও সোহরাব ও তাঁর দুই ছেলের এখনও কোনও পাত্তা নেই। কেউ গ্রেফতারও হয়নি। অভিমন্যুর সহকর্মীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে গত কয়েক দিনে সাম্বিয়ার পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন তাঁরা। জেনেছেন, সোহরাবের টাকার জোর যথেষ্ট। পুলিশের বেশ কিছু অফিসারের সঙ্গে সোহরাবদের দহরম-মহরমের খবরও তাঁরা পেয়েছেন। তাই পুলিশি তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সেনাবাহিনীর একাংশও সন্দিহান।

সেনা-সূত্র বলছে, পুলিশি তদন্তের উপরে নজর রাখছে তারা। সেনার নিজস্ব তদন্তও চলছে। সেনা মুখপাত্র বিরদি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা সব তথ্যই পুলিশের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন সবার আগে সেনাবাহিনী কুচকাওয়াজ করছিল। তার পরে গোলন্দাজ বাহিনী, বায়ুসেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, পুলিশ ও স্কুল-ছাত্রছাত্রীরা ছিল। আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের নিজস্ব সিসিটিভি ফুটেজও আছে।’’

সেনা জানাচ্ছে, তাদের তদন্তকারী অফিসারেরা যে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন জোর দিয়ে জানিয়েছেন, ঘাতক অডির চালককে তাঁরা শনাক্ত করতে পারবেন। কারণ, সে দিন যথেষ্ট স্পষ্ট ভাবেই সেই ব্যক্তিকে দেখেছিলেন তাঁরা। সেনা অফিসারদের মতে, সে দিন গাড়িতে যে ব্যক্তি ছিলেন, তিনি ছাড়া অন্য কাউকে অভিযুক্ত বলে দাঁড় করালে আপত্তি জানাবেন ওই প্রত্যক্ষদর্শীরাই। বিরদি এ দিনও বলেছেন, ঘাতক অডিতে মাত্র এক জন ছিলেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

ঠিক এই কথাই বলছে সাম্বিয়া-ঘনিষ্ঠ শাহনওয়াজ খান ওরফে শানুর পরিবার। শানুর নামে নিখোঁজ ডায়েরি করতে গিয়ে তাঁর পরিবার দাবি করেছে, সে দিন অডি গাড়িটি সাম্বিয়াই চালাচ্ছিলেন বলে শানু ফোনে তাঁদের জানিয়েছেন। যদিও পুলিশ এখনও বলছে, গাড়িতে একাধিক ব্যক্তির থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন রিপন স্ট্রিটে সাম্বিয়ার বাড়িতে যায় পুলিশ। তখন সেখানে শুধু নিরাপত্তারক্ষীরা ছিলেন। আর ছিল তিনটি বিদেশি গাড়ি। পুলিশ জানিয়েছে, সাম্বিয়ার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বুধবার ভোরে বাড়িতে সোহরাব ও তাঁর বড় ছেলে আম্বিয়া থাকলেও সাম্বিয়া ছিলেন না। মঙ্গলবার রাত থেকে সাম্বিয়া বন্ধুদের নিয়ে কলকাতার এক পানশালায় অনেকক্ষণ সময় কাটান বলেও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। সাম্বিয়ার সঙ্গে সেই সময়ে তাঁর দুই বন্ধু জনি ও শানু ছিলেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এমনকী, বুধবার দুর্ঘটনার পরে বিকেলে তাঁরা একসঙ্গে কোলাঘাটে ছিলেন বলেও মোবাইল টাওয়ারের সূত্র ধরে জানতে পেরেছে পুলিশ।

তা সত্ত্বেও রহস্যভেদের পথে কোনও সুরাহা এখনও দূর অস্ত্। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কড়া বার্তা দিয়েছেন, সেখানে কোনও নরম মনোভাব নেওয়া হবে না।’’ ঘাতককে ধরতে না পারলেও পুলিশ ইতিমধ্যেই রেড রোড চত্বরের নিরাপত্তা অনেকটা বাড়িয়েছে। আজ, শনিবার ভোরে ফের কুচকাওয়াজের মহড়া হওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abhimanyu sunando ghosh justice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE