Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জোড়া মৃত্যুর পরে মশা নিধনে নামল পুরসভা

‘‘কিডনি বেঁচে আমরা পাঁচ-দশ লক্ষ টাকা তুলে দেব আপনাদের হাতে। আপনারা মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন তো?’’ কাউন্সিলর অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘কে ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়েছেন জানি না। তবে কেউ যদি ক্ষতিপূরণের কথা বলে থাকেন, তা হলে ভুল হয়েছে। ওই পরিবার আমায় বলেছে মৃতার মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে।’’

কাউন্সিলরের সঙ্গে মৃতা দিশা বর্মণের পরিজনেরা। শুক্রবার, যাদবপুর থানা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

কাউন্সিলরের সঙ্গে মৃতা দিশা বর্মণের পরিজনেরা। শুক্রবার, যাদবপুর থানা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

দু’টি মৃত্যুর পরে টনক নড়ল পুরসভার। রাতারাতি জ্বর পরীক্ষা করানোর জন্য যাদবপুরের প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডে মেডিক্যাল ক্যাম্প করলেন পুর আধিকারিকেরা। সেইসঙ্গে এক মৃতের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চাওয়ার অভিযোগ উঠল পুর প্রশাসনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় কাউন্সিলর রতন দে-কে ঘিরে ধরে এ দিন মৃতার মাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কিডনি বেঁচে আমরা পাঁচ-দশ লক্ষ টাকা তুলে দেব আপনাদের হাতে। আপনারা মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন তো?’’ কাউন্সিলর অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘কে ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়েছেন জানি না। তবে কেউ যদি ক্ষতিপূরণের কথা বলে থাকেন, তা হলে ভুল হয়েছে। ওই পরিবার আমায় বলেছে মৃতার মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে।’’

গত বুধবার প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডে বাপের বাড়িতে থাকাকালীন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় দিশা বর্মণের (২৪)। তাঁর আড়াই মাসের এক ছেলে এবং চার বছরের এক মেয়ে রয়েছে। পুজোর ছুটিতে ঝড়খণ্ড থেকে বাপের বা়ড়ি এসেছিলেন দিশা। আগামী ২০ নভেম্বর নিজের জন্মদিন কাটিয়ে ফেরার কথা ছিল তাঁর। তার মধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় দিশার। পরিবারের অবশ্য দাবি, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই এই মৃত্যু। যদিও হাসপাতালের তরফে কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘এন এস-১ পজিটিভ। ভাইরাল ফিভার উইথ শক সিন্ড্রোম’। দিশার মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই ওই এলাকার ইস্ত্রির দোকানি বিনোদ চৌধুরী (৪৩) নামে এক ব্যক্তিরও মৃত্যু হয়।

জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবারই পুর প্রশাসনের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাউন্সিলরকে এলাকায় দেখাই যায় না। প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডের বেঙ্গল ল্যাম্প লাগোয়া ওই বস্তিতে এই মুহূর্তে অন্তত আট-ন’জন জ্বরে আক্রান্ত হলেও পুরসভার হেলদোল নেই। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কাউন্সিলরকে এত জনের জ্বর হওয়ার কথা জানানো হলেও তিনি কোনও পদক্ষেপ

করেননি।’’ শুক্রবার সকাল থেকেই অবশ্য পুরসভার তৎপরতা দেখা যায়। স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে মেডিক্যাল ক্যাম্প করার পাশাপাশি বস্তি লাগোয়া জলা জায়গা সাফ করার কাজ শুরু করেন পুরকর্মীরা। এর মধ্যেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত কাউন্সিলর বলেন, ‘‘এই জলা জায়গা এবং জঙ্গল বেঙ্গল ল্যাম্পের আওতাধীন। বারবার বলেও এগুলি সাফ হয়নি। এ বার বেঙ্গল ল্যাম্প কর্তৃপক্ষকে আমরা নোটিস দিচ্ছি।’’ যদিও আগে কেন নোটিস দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন উঠছে। কাউন্সিলর অবশ্য সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।

শীতের শুরুতেই এই দুই মৃত্যুতে নতুন করে অস্বস্তিতে পুরসভা। পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই মরসুমে ২৫০৯ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে বস্তি এলাকায় এ বার সে ভাবে জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়নি। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ বার বস্তি এলাকাগুলিতে বেশি করে ডেঙ্গির প্রচার করা হয়েছে। তার ফলও মিলেছে। এই দু’জনের মৃত্যুর আগে বস্তি এলাকায় জ্বরে মৃত্যুর খবর নেই।’’ ওই আধিকারিক আরও জানান, পুরসভার একটি দল প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডে বস্তিতে কাজ করবে। জঞ্জাল বা জল জমিয়ে রাখা হয়েছিল কি না, সেইসঙ্গে ওই এলাকায় জল জমে ছিল কি না— তা খতিয়ে দেখে তারা রিপোর্ট দেবে। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপনকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বস্তিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর ব্যতিক্রমী। কী ভাবে তা হল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE