Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফণী আসবে বলে দুই মেয়র ‘রাতপাহারা’য়

রাত সাড়ে ১০টা। ফণী না কি দিঘায় ঢুকবে। শহরে শুরু হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া, চলছে বৃষ্টিও। সেই সঙ্গে হৃৎকম্পন বাড়ছে যেন কলকাতারও।

বিনিদ্র: ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটে। কলকাতা পুরসভায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রয়েছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। ছবি: সুদীপ ঘোষ

বিনিদ্র: ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটে। কলকাতা পুরসভায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রয়েছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

রাত সাড়ে ১০টা। ফণী না কি দিঘায় ঢুকবে। শহরে শুরু হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া, চলছে বৃষ্টিও। সেই সঙ্গে হৃৎকম্পন বাড়ছে যেন কলকাতারও। পুরভবনে বিভিন্ন দফতরের ডিজি এবং চিফ ম্যানেজারদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের কাজ নিয়ে আলোচনা করছেন বিশেষ পুর কমিশনার, পুরসভার সচিব। সরগরম পুরসভার কক্ষ। বারান্দায় ডাঁই করে রাখা ত্রিপল, ত্রাণের পোশাক। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং পুর কমিশনার খলিল আহমেদ—দু’জন দু’টি গাড়ি নিয়ে শহরের বরো অফিসগুলিতে ফণীর মোকাবিলার প্রস্তুতি পর্ব দেখতে বার হলেন। ব্যস্ততার প্রায় একই রকম ছবি বিধাননগর পুরসভাতেও।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা দেখতে পুরসভা থেকে বেরোনোর পরে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ মেয়র উত্তর কলকাতার বরোগুলি দেখতে ছোটেন। ১ নম্বর বরো অফিসে তাঁর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। উত্তর কলকাতার দায়িত্বে ছিলেন অতীন। শহর ঘুরে রাত ২টো নাগাদ মেয়র ফের পুরভবনেই ফেরেন। ফণী যে আর আসছে না তত ক্ষণে তা পরিষ্কার হয়ে গেলেও চিন্তিত মেয়রের চোখে ছিল মোবাইলেই। বারবার দেখছিলেন কলকাতার উপর দিয়ে কত কিলোমিটার বেগে বইবে ঘূর্ণিঝড়। ফণীর আতঙ্কে এ ভাবেই বিনিদ্র রজনী কাটল মেয়র ফিরহাদ-সহ আরও একাধিক পুরকর্তা এবং কলকাতা পুরসভার আধিকারিকের। তবে ফণী শেষ পর্যন্ত না আসায় রাতের ঘুম ছুটলেও মুখের হাসি মিলিয়ে যায়নি কারও। মেয়রের ঘরে সারাক্ষণ উপস্থিত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘কোথাও গাছ পড়লে তাড়াতাড়ি গাছ কাটার যন্ত্র নিয়ে পুরকর্মীদের সঙ্গে দৌড়তে তৈরি ছিলাম।’’

রাতটা শুরু হয়েছিল উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়েই। কলকাতার মতো বিধাননগর পুরসভাতেও ঘাঁটি গেড়েছিলেন সেখানকার মেয়র সব্যসাচী দত্ত। সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য কাউন্সিলর ও আধিকারিক। দুপুরে পুরসভায় বসেই সব্যসাচী জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি সারা রাত পুরসভাতেই থাকবেন। পুরভবনে রাতে উপস্থিত ছিলেন বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়ও। সেই অনুযায়ী সেখানে পুর এলাকায় ফণীর বিপর্যয় সামলাতে তিনটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। তিনটি বিপর্যয় মোকাবিলার দলও পুরকর্মী,আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি হয়। রাত দু’টো নাগাদ ফণীর মোকাবিলার উপায় নিয়ে সব্যসাচী জরুরি বৈঠক করেন পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে।

ফণীর ফাঁড়া কেটে গেছে দেখে রাত আড়াইটে নাগাদ কয়েক জন কাউন্সিলরকে নিয়ে কলকাতা পুরসভাতেই চলে আসেন সব্যসাচী। ফিরহাদ বলেন, “সব্যসাচী ফোনে বলেছিল ও বিধাননগরে রাত জাগছে। রাত জাগতে হবে দেখে ওকে বললাম চলে আসতে। কিছু ক্ষণ গল্প করা যাবে।’’

সব্যসাচী বলেন, “বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি সবাই। তাই দাদার সঙ্গে রাতে এলাম একটু গল্প করতে।’’

যদিও এই আবহে খানিকটা ছন্দও কেটেছে। ভোরে পুরসভার অফিসার ইঞ্জিনিয়ারদের জোর ক্ষোভ, এক সঙ্গে সব দফতরের পদস্থ অফিসার, ইঞ্জিনিয়ারকে রাত জাগিয়ে রাখার কোনও কারণ ছিল না। তাতে শহরে ফণীর তাণ্ডব হলে সকালে কাজ করার লোক মিলত না। ভবিষ্যতে পুর প্রশাসনকে এটা মাথায় রাখতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE