Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিপদ মাথায় নিয়ে পথ চলা

রেলিংয়ে রঙের পোঁচ, রাস্তায় পিচের প্রলেপ। কিন্তু ক্ষয়িষ্ণু কাঠামোয় পড়ে না নজর। এ ভাবেই এক বিপর্যয়ের পরে আসে আর এক বিপর্যয়। কোন ‘সেতুশ্রী’র কী হাল, খোঁজ নিলেন আর্যভট্ট খান।সেতুর নীচের বাজারের দোকানদারেরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন জীবন বিপন্ন করে ব্যবসা করছেন তাঁরা। ওই সেতুতে ওঠা-নামা করার সিঁড়িও ভাঙাচোরা। সিঁড়ির নীচে বসা দোকানদারদের কথায়, তাঁদের দোকানের সামনের বারান্দাটি এতটাই নড়বড়ে যে সেখানে দাঁড়াতে ভয় করে

বেহাল: স্ল্যাব ভেঙে মরণফাঁদ বিজন সেতু। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে

বেহাল: স্ল্যাব ভেঙে মরণফাঁদ বিজন সেতু। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৬
Share: Save:

বিজন সেতু: কোথাও কংক্রিট ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে আস্ত বটগাছ। কোথাও সেতুর চাঙড় খসে লোহার বিম বেরিয়ে পড়েছে। একাধিক জায়গায় ফুটপাতের বড় বড় স্ল্যাবে ফাটল। কসবার বিজন সেতুর এ হেন জীর্ণ দশা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। সেতুর নীচেই বসে বাজার। বাজারের উপরে সেতুর যে চাতাল, তার মধ্যে দিয়েই গিয়েছে বটগাছের শিকড়। ফলে ফাটল ধরেছে কংক্রিটে।

সেতুর নীচের বাজারের দোকানদারেরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন জীবন বিপন্ন করে ব্যবসা করছেন তাঁরা। ওই সেতুতে ওঠা-নামা করার সিঁড়িও ভাঙাচোরা। সিঁড়ির নীচে বসা দোকানদারদের কথায়, তাঁদের দোকানের সামনের বারান্দাটি এতটাই নড়বড়ে যে সেখানে দাঁড়াতে ভয় করে। সেতুর উপরে ফুটপাতের অবস্থাও তথৈবচ! কোথাও ঢেউ খেলানো, কোথাও আবার আস্ত স্ল্যাবটাই নড়বড়ে। এক যাত্রীর কথায়, ‘‘সেতুর ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, এই বুঝি ধস নামল আর নীচে রেললাইনে গিয়ে পড়লাম।’’ ১৯৭৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উদ্বোধন করেছিলেন বিজন সেতুর। বড় কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে কি ৪০ বছরের পুরনো এই সেতুর উপরে প্রশাসনের নজর পড়বে না?— প্রশ্ন এলাকাবাসীর।

আরও পড়ুন: মেট্রোর কাজ বন্ধে ক্ষুব্ধ রেল

ঢাকুরিয়া উড়ালপুল: অর্ধশতকের পুরনো এই সেতু এক সময়ে ছিল ইঁদুরের আস্তানা। অভিযোগ, মাটিতে গর্ত করে আস্ত সেতুকেই নড়বড়ে করে দিয়েছিল মূষিককুল। সেই সব গর্তকে সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ। তবে এখনও কোথাও কোথাও সেই গর্তের দেখা মিলল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতুতে এখনও ইঁদুরের উৎপাত লেগে থাকে। শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই সেতুর কংক্রিট ফুঁড়ে ডালপালা বিস্তার করেছে একাধিক বট গাছ। নিকাশি নালার হালও বেশ খারাপ। কোনও কোনও জায়গায় কংক্রিট চুঁইয়ে জল পড়ছে। জল জমে থাকে সেতুর উপরের ফুটপাতেও। সিঁড়ির অবস্থাও জীর্ণ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিঁড়ি শীঘ্র মেরামত না করা হলে অচিরে বড় বিপদ ঘটতে পারে।

ঢাকুরিয়া উড়ালপুলের গায়ে গজিয়েছে বট গাছ।

কেএমডিএ-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, সেতু তৈরির সময়ে এতে চলাচল করা গাড়ির সংখ্যা এখনের তুলনায় অনেক কম ছিল। এখন ট্র্যাফিকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই পঞ্চাশ বছরেরও বেশি পুরনো এই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা দ্রুত প্রয়োজন।

গড়িয়াহাট উড়ালপুলের গা বেয়ে উঠেছে গাছ, তারই নীচে ধরেছে ফাটল। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে

গড়িয়াহাট উড়ালপুল: ২০০২ সালে উদ্বোধন হয়েছিল এই উড়ালপুলের। অপেক্ষাকৃত নবীন উড়ালপুলটির জীর্ণ দশা বাইরে থেকে ধরা না পড়লেও একটু লক্ষ করলেই দেখা যায়, বেশ কয়েকটি জায়গায় বেহাল অবস্থা। উড়ালপুলের কংক্রিট ফুঁড়ে ও নিকাশির পাইপেও গজিয়েছে বট গাছ। ফলে নিকাশি নালা দিয়ে জল বেরোয় না। উড়ালপুলের নীচেই চলছে গাড়ি রাখা। তার পাশেই সংসার পেতেছেন অনেকে। উড়ালপুলের নীচে পার্কিংয়ের পাশ দিয়ে গাড়ি যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হাইট বার দেওয়া থাকলেও উড়ালপুলের উপরে তার বালাই নেই। ফলে সেখানে উঠে পড়ে পেল্লায় ট্রাক। নজরদারি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Flyover Danger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE