Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিধি উড়িয়ে বিক্রি চিনা মাঞ্জার

সারা দেশে ওই ধরনের মাঞ্জা সুতো তৈরি, মজুত ও কেনাবেচা বন্ধ  করতে হবে। রাজ্যের মুখ্যসচিবেরা সেই নির্দেশ কার্যকর করবেন। সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশের প্রধানকে ওই নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠিয়ে এই ধরনের চিনা মাঞ্জায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ করতে হবে।

পটলচেরা: ধারালো চিনা মাঞ্জা বিপদ ডাকে এ ভাবেই। ফাইল চিত্র

পটলচেরা: ধারালো চিনা মাঞ্জা বিপদ ডাকে এ ভাবেই। ফাইল চিত্র

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

আদালত নিয়ম করে দেয়। কিন্তু যাদের জন্য সেই নির্দেশ, তারা তা মানতে গড়িমসি করায় বিপদ কাটে না।

শব্দবাজি, ডিজে (বড় সাউন্ড বক্স) নিয়ে শোভাযাত্রার মতো ঘু়ড়ি ওড়ানোর চিনা মাঞ্জা (সিন্থেটিক মাঞ্জা দেওয়া নাইলনের সুতো)-র ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে আদালত একাধিক বার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ না মানায় আদালত বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে সতর্কও করেছে। কিন্তু যাদের ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার কথা, তাদের যে এই নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই, তা ফের প্রকট হল সোমবার মা উড়ালপুলে এক মোটকবাইক আরোহী মারাত্মক আহত হওয়ার ঘটনায়।

বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটায় ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত দেশ জুড়ে চাইনিজ মাঞ্জা নিষিদ্ধ করেছিল। প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পক্ষ থেকে ওই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে বলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরেই মা উড়ালপুল ধরে যাওয়ার সময়ে চিনা মাঞ্জা গলায় আটকে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন বাইক আরোহী এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। সেই তদন্তের রিপোর্টে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের উল্লেখ করেছেন মানবাধিকার কমিশন কর্তৃপক্ষ।

কী বলা হয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতের ২০১৬ সালের ওই নির্দেশে? সেখানে বলা হয়েছিল, সারা দেশে ওই ধরনের মাঞ্জা সুতো তৈরি, মজুত ও কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। রাজ্যের মুখ্যসচিবেরা সেই নির্দেশ কার্যকর করবেন। সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশের প্রধানকে ওই নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠিয়ে এই ধরনের চিনা মাঞ্জায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ করতে হবে। এই ধরনের সুতো বা মাঞ্জার উপকরণ অন্য দেশ থেকে আমদানি করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

শুধু তা-ই নয়, এই নির্দেশিকা অমান্য করে কেউ চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় ঘুড়ি ওড়ালে ১৯৮৬ সালের পরিবেশ রক্ষা আইন ও ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে‌ বিচারপতি গিরিশচন্দ্র ঘোষ, নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ও এম এস দ্বিবেদী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই রায়কে রাজ্যে অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য গত ১৫ নভেম্বর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সেই নির্দেশও মানা হচ্ছে না রাজ্যে। কলকাতায় এই নিষিদ্ধ নাইলন সুতোর মাঞ্জা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। সোমবার মা উড়ালপুলে আহত দিব্যম বজাজের নাকে পাঁচটি সেলাই পড়েছে। তার আগে গত বছরই মা উড়ালপুলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সৌপর্ণ দাশ ও পরমা আইল্যান্ডে দেবাংশু চট্টোপাধ্যায় নামে দু’জন জখম হয়েছিলেন।

কেন পুলিশ জাতীয় পরিবেশ আদালত ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ কার্যকর করছে না, তা নিয়ে লালবাজারের কর্তাদের মুখে কুলুপ। চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতো বিক্রি, মজুত কিংবা কেনার জন্য কারও বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা হয়েছে কি না, তা-ও জানা নেই কারও। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন এক পুলিশকর্তা। ওই মাঞ্জা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের আঁতাত রয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। পুলিশেরর কাছে সেই প্রশ্নের কোনও জবাব কিন্তু নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chinese nylon chords National Green Tribunal Danger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE