Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ব্যারাকে মিলল পুলিশের দেহ

মেয়ে জানত, রাত ফুরোলেই ভোটের ডিউটি করে বাবা ফিরবে। বাড়িতে নতুন এসি বসবে। তার বাবার ভোটের ডিউটি পড়েনি। রাত ফুরোলেও বাড়ি ফেরেননি বছর পাঁচেকের অদ্রিজার বাবা অরিন্দম কুণ্ডু (৩৮)। আর কোনও দিন বাড়ি ফিরবেন না তিনি।

অরিন্দম কুণ্ডু

অরিন্দম কুণ্ডু

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

মেয়ে জানত, রাত ফুরোলেই ভোটের ডিউটি করে বাবা ফিরবে। বাড়িতে নতুন এসি বসবে। তার বাবার ভোটের ডিউটি পড়েনি। রাত ফুরোলেও বাড়ি ফেরেননি বছর পাঁচেকের অদ্রিজার বাবা অরিন্দম কুণ্ডু (৩৮)। আর কোনও দিন বাড়ি ফিরবেন না তিনি।

সোমবার, ভোটের রাতে জগদ্দল থানার পুলিশ ব্যারাকে নিজের ঘরে মিলেছে রাজ্য পুলিশের এসআই অরিন্দমের ঝুলন্ত দেহ। ওই থানাতেই কর্মরত ছিলেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন অরিন্দম। স্থানীয়েরা জানান, অত্যন্ত মিশুকে বলে সুনাম ছিল তাঁর। ওই এসআই-এর মৃত্যু কার্যত হতবাক করে
দিয়েছে সকলকেই।

ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়নি। ফলে পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন অরিন্দম। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যার প্রমাণ মিলেছে। অরিন্দমের মোবাইল এবং ল্যাপটপ পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিছু পাওয়া গেলে তদন্ত সেই পথে এগোবে।’’ অদ্রিজা ছাড়াও অরিন্দমের দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে।

বারুইপুরের বাসিন্দা অরিন্দম দমদমের পি কে গুহ রোডের একটি আবাসনে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তবে সেই ফ্ল্যাটে এখনও যাননি তাঁরা। তাঁর স্ত্রী সুমনা সন্তানদের নিয়ে দমদম ক্যান্টনমেন্টে বাপের বাড়িতে থাকেন। পরিবার সূত্রের খবর, ছোটবেলায় মাকে হারান অরিন্দম। বাবার সঙ্গে তাঁর বিশেষ যোগাযোগ ছিল না।

ওই পুলিশকর্মীর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, বিয়ের পরে নিজের সংসার হওয়ায় অরিন্দম বলেছিলেন, ‘‘জীবনে অনেক লড়াই করেছি। মনে হচ্ছে নতুন জীবন শুরু হল।’’ এক পরিচিতের কথায়, ‘‘পরিবারকে বড় ভালবাসত অরিন্দম। সন্তানদের চোখে হারাত।’’ সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, ইদানীং সেই পরিবারের সঙ্গেই সম্পর্কটা ভাল যাচ্ছিল না। মাঝেমধ্যে সহকর্মীদের তা জানাতেন তিনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত জানুয়ারিতে তাঁর স্ত্রী সুমনা একটি কাজে যোগ দেন। তাতে সায় ছিল না অরিন্দমের। পুলিশ অরিন্দমের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তা জানতে পেরেছে। নতুন ফ্ল্যাটে যাওয়া নিয়েও সম্ভবত কোনও গোলমাল চলছিল পরিবারের মধ্যে।

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার ভোটের জন্য রিজার্ভ ডিউটি ছিল অরিন্দমের। বিকেলের দিকে কারও সঙ্গে ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। তার পরেই তিনি ব্যারাকে নিজের ঘরে যান। রাতে সেখানেই উদ্ধার হয় তাঁর দেহ।

রাতেই সুমনাকে জগদ্দলে নিয়ে আসে পুলিশ। অরিন্দমের শাশুড়ি বাসবী ঢালি বলেন, ‘‘কী করে যে এমন হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। মেয়েটা জানে বাবা বাড়ি ফিরবে। ওকে এখনও জানাতে পারিনি। ছেলে-মেয়ের কথা একবারও ভাবল না অরিন্দম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE