Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দগ্ধ শিশুর মৃত্যু, দেহ নিয়ে বিক্ষোভ

এ দিন সকালে শিশুটির মৃত্যুর খবর পেয়েই ভেঙে পড়েন তার বাবা-মা এবং আত্মীয়-পরিজনেরা। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাতপাখাটা কোথায় লুকোবেন, বুঝতে পারছেন না বাবা সুষেণ ভুঁইয়া। দু’বছর তিন মাসের মেয়ের দেহ হাসপাতালের কর্মীরা শয্যা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যা দেখে কাঁদতে কাঁদতে সুষেণবাবু বলে চলেছেন, ‘‘হাতপাখাটা সঙ্গে দিন, জ্বালাটা যদি একটু জুড়োয়!’’ পাশে বসা এক আত্মীয়কে বললেন, ‘‘এই পাখা দিয়ে কত হাওয়া করল ওর মা। কিছুই তো হল না! কই বাঁচল না তো!’’

রোষ: অভিযুক্তদের ফের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ নিয়ে অবরোধ। শনিবার রাতে, মুচিবাজারে। নিজস্ব চিত্র

রোষ: অভিযুক্তদের ফের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ নিয়ে অবরোধ। শনিবার রাতে, মুচিবাজারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১২
Share: Save:

ন’দিনের লড়াই শেষ। এসএসকেএম হাসপাতালের ১০ নম্বর শয্যাতেই মৃত্যু হল উল্টোডাঙায় গরম ভাতের হাঁড়িতে দগ্ধ শিশু দীপান্বিতা ভুঁইয়ার। চিকিৎসকেরা জানালেন, শনিবার সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে। এ দিন দীপান্বিতার মৃত্যুর খবরে শোকের মধ্যেও জ্বলতে থাকে ক্ষোভের আগুন। যার জেরে রাতে ওই একরত্তির মৃতদেহ নিয়েই মুচিবাজারে রাস্তা অবরোধ করেন তার পরিজন ও পড়শিরা। পরে বিক্ষোভ চলে উল্টোডাঙা থানার সামনেও। তাঁদের দাবি, জামিন পেয়ে যাওয়া অভিযুক্ত ভাড়াটেদের ফের গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ জানায়, রাত এগারোটার পরে অবরোধ উঠে যায়। দেহ নিয়ে যাওয়া হয় অন্ত্যেষ্টির জন্য।

এ দিন সকালে শিশুটির মৃত্যুর খবর পেয়েই ভেঙে পড়েন তার বাবা-মা এবং আত্মীয়-পরিজনেরা। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাতপাখাটা কোথায় লুকোবেন, বুঝতে পারছেন না বাবা সুষেণ ভুঁইয়া। দু’বছর তিন মাসের মেয়ের দেহ হাসপাতালের কর্মীরা শয্যা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যা দেখে কাঁদতে কাঁদতে সুষেণবাবু বলে চলেছেন, ‘‘হাতপাখাটা সঙ্গে দিন, জ্বালাটা যদি একটু জুড়োয়!’’ পাশে বসা এক আত্মীয়কে বললেন, ‘‘এই পাখা দিয়ে কত হাওয়া করল ওর মা। কিছুই তো হল না! কই বাঁচল না তো!’’

গত দু’দিন ধরেই অবস্থার অবনতি হচ্ছিল দীপান্বিতার। কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছিল না তাকে। বৃহস্পতিবার রাতের পরে শুক্রবারও নতুন করে রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা বুঝেছিলেন, আর বিশেষ সময় বাকি নেই। শরীরের ৬৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল শিশুটির। এ দিন সকালে বাবা ও আত্মীয়দের সামনেই থেমে যায় তার হৃৎস্পন্দন।

গত ১০ অগস্ট উল্টোডাঙার গোরাপদ সরকার লেনে গরম ভাতের হাঁড়িতে পড়ে পুড়ে যায় দীপান্বিতা। প্রথমে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তার পরে এসএসকেএমের বার্ন ইউনিট। এর পরেই গত মঙ্গলবার শিশুটির বাবা উল্টোডাঙা থানায় এক ভাড়াটে দম্পতির বিরুদ্ধে মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার হন দীপান্বিতাদের বাড়ির ভাড়াটে রাজেশ ও তাঁর স্ত্রী সুনু গুপ্ত। পরে অবশ্য তাঁরা জামিন পান।

সেই সময়ে তদন্তের স্বার্থে শিশুটির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে পুলিশ। তবে তার অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। কী ভাবে সে পুড়ে গেল, তা জিজ্ঞাসা করায় শিশুটি শুধু বলেছিল, ‘‘ধুম পড়ে।’’ তাই আসলে কী ঘটেছিল, তা জানা যায়নি। পরে দীপান্বিতা সুস্থ হলে পুলিশ তার বয়ান নথিভুক্ত করবে ভেবেছিল।

এ দিন বাড়িতে দেহ নিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মেয়ের মৃত্যুর কথা জানানো হয়নি মা অঞ্জনাকে। দেহ আঁকড়ে ধরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তোর জ্বালা আর মিটল না। তোকে যারা মারল, তাদের শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Burn Child Anger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE