বেহাল: রেলিংয়ে নতুন রঙের পোঁচ পড়লেও সারানো হয়নি বিজন সেতুর তলার অংশ। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে। মাথা বাঁচাতে কয়েক জন যুবক ছুটে গিয়ে দাঁড়ালেন বিজন সেতুর আন্ডারপাসের নীচে। তবে লাভ হল না। কারণ, সেই আন্ডারপাসের কংক্রিটের ছাদ বেয়ে নাগাড়ে চুঁইয়ে পড়ছে জল। সেই জলেই ভিজে গেলেন ওই যুবকেরা।
জরাজীর্ণ বিজন সেতুর এখন এমনই হাল। সেতুর নীচে একটু ঘুরলেই দেখা যাবে, সিমেন্টের গায়ে বড় বড় ফাটল। বৃষ্টি হলেই জল পড়ে সেখান দিয়ে। সেতুর নীচে বসা দোকানিরা জানান, চাঙড় ভেঙে পড়ার ভয়ে সারা বছরই আতঙ্কে থাকেন তাঁরা। বর্ষাকালে সেই আতঙ্ক আরও বাড়ে। সম্প্রতি মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ায় ওই দোকানিদের প্রশ্ন, বিজন সেতুর ভাগ্যেও ওই ধরনের কোনও অঘটন অপেক্ষা করছে না তো? বর্ষার জলে দুর্বল হয়ে পুরো সেতুটাই কি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে?
বিজন সেতুর নীচে রোলের দোকানের কর্মী মাধব মান্না বললেন, ‘‘সেতুর ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে বলে দোকানের উপরে একটা পলিথিনের চাদর পেতে রেখেছি। কিন্তু উপর থেকে কংক্রিটের চাঙড় খসে পড়লে তো আর পলিথিনের চাদর বাঁচাতে পারবে না!’’
সেতু বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কংক্রিটের ফাটল দিয়ে ক্রমাগত জল পড়তে থাকলে সেই ক্রংক্রিট ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে সেতুর বহন-ক্ষমতা। যার জেরে সামগ্রিক ভাবেই সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই যে কোনও সেতুতেই সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা থাকাটা খুব দরকার। কারণ, সেতুতে জল জমতে থাকলে তা সেতুর স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক।
বিজন সেতুর এই বিপজ্জনক অবস্থাটাই এখন স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও দোকানিরা। যাঁরা ওই সেতুর নীচে নিয়মিত বাজার করতে আসেন, তাঁরাও জানালেন নিজেদের আশঙ্কার কথা। কিন্তু ওই সেতু ব্যবহার না করেও উপায় নেই।
দেখা গেল, সেতুর নিকাশি নালাগুলির অধিকাংশই ভাঙা। সেই ভাঙা নালার জল নীচের নিকাশি নালায় না পড়ে সেতুর উপরেই পড়ছে। আন্ডারপাস থইথই করছে জলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পড়ে এত দিনে কেএমডিএ একটু নড়েচড়ে বসেছে। সেতুর দেওয়াল ভেদ করে যে বটগাছ গজিয়ে উঠছিল, সেগুলির ডাল ছাঁটা হয়েছে। কিন্তু এই নজরদারি কত দিন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
সেতুর নীচে কেআইটি বাজার সমিতির এক সদস্য বললেন, ‘‘গত বছরও বর্ষায় কেএমডিএ-র কর্মীরা এসে বটগাছের ডাল ছেঁটে দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সেই বটগাছ আবার আগের চেহারায় ফিরে আসে। শিকড় আরও ছড়িয়ে পড়ে কংক্রিটের দেওয়ালে। আমরা বেশ কয়েক বার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ গাছ কাটতে আসেনি।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যাঁরা গাছ কাটতে এসেছিলেন, তাঁরা শুধু গাছ কেটেই চলে গিয়েছেন। গাছের শিকড় কংক্রিটে যে ফাটল ধরিয়েছে, তার মেরামতি করেননি। সেতুর ডান দিক ও বাঁ দিক ঘেঁষে যে দু’টি বারান্দা রয়েছে, সেগুলির অবস্থা সব চেয়ে বিপজ্জনক বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা। রাতুল দত্ত নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘সেতুর ঝুলবারান্দা ভেঙে পড়লেও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটবে। বারান্দাগুলি অবিলম্বে মেরামত করা দরকার। পাশেই রয়েছে বহু দোকান ও অফিস।’’
কেএমডিএ-র এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই ওই সেতুর প্রাথমিক পরীক্ষা করেছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। সেতুর সব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গাছগুলি ফের গজাচ্ছে কি না, নিয়মিত নজরদারি চলবে। সেতুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য-পরীক্ষাও করা হবে শীঘ্রই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy