Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

কিছু অনিয়ম সত্ত্বেও দিনভর গৃহবন্দিই থাকল শহর

পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউনের বিধি ভাঙার জন্য এ দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ৫৬১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ২০টি গাড়ি আটকে মালিক বা চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শহরচিত্র: (বাঁ দিকে) চলছে লকডাউন, তবু বিনা কারণেই রাস্তায়। উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া এলাকায়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে রাম মন্দিরের সামনে চলছে নাকা তল্লাশি। রাস্তায় বেরিয়ে পুলিশের প্রশ্নের মুখে এক বাইকচালক। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শহরচিত্র: (বাঁ দিকে) চলছে লকডাউন, তবু বিনা কারণেই রাস্তায়। উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া এলাকায়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে রাম মন্দিরের সামনে চলছে নাকা তল্লাশি। রাস্তায় বেরিয়ে পুলিশের প্রশ্নের মুখে এক বাইকচালক। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০২:২৭
Share: Save:

পোস্তা থেকে সাইকেল চালিয়ে দুই বন্ধু আসছিলেন গিরিশ পার্কের দিকে। কিন্তু মোড়ের মাথায় পুলিশ পিকেট দেখে সাইকেল ঘুরিয়ে পালাতে গিয়েও ধরা পড়লেন তাঁরা।

বাইরে বেরিয়েছেন কেন?

পুলিশের এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারায় শেষমেশ প্রিজ়ন ভ্যানে সাইকেল সমেত তুলে দেওয়া হল দুই যুবককে। বুধবার কড়া হাতে লকডাউন বলবৎ করতে সকাল থেকেই শহর জুড়ে আঁটোসাঁটো নজরদারি ছিল পুলিশের। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ— সর্বত্রই ছিল কড়া পাহারা। প্রায় প্রতিটি বাজারের সামনেই মোতায়েন রাখা হয়েছিল পুলিশকর্মীদের। বিভিন্ন মন্দিরের সামনেও ছিল পুলিশের পাহারা। এ দিন অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজো উপলক্ষে কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্র নানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা ছিল বিজেপির। পুলিশও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কোথাও কোনও জমায়েত কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হবে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বড় রাস্তার পাশাপাশি এলাকার ভিতরেও চলেছে টহলদারি।

পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউনের বিধি ভাঙার জন্য এ দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ৫৬১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ২০টি গাড়ি আটকে মালিক বা চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাস্ক না-পরে বেরোনোয় ২৭১ জনকে এবং প্রকাশ্যে থুতু ফেলার অভিযোগে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ দিন সকালে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে রাম মন্দিরের সামনে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় চলছে পুলিশের নাকা তল্লাশি। সেখানেই আটকানো হল এক স্কুটারচালককে। ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি অফিসে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর কাছে অফিসের কোনও পরিচয়পত্র বা পুলিশের অনুমতিপত্র, কিছুই মেলেনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে লকডাউন ভাঙার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশ আধিকারিকেরা। একই ভাবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন না-মেনে অহেতুক রাস্তায় বেরোনো লোকজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। তবে রাম মন্দিরে এ দিন প্রবেশ বন্ধ ছিল। গিরিশ পার্কের বৈকুণ্ঠ মন্দিরের সামনেও ছিল পুলিশ পিকেট। সেখানেও দর্শন বন্ধ ছিল।

রাম মন্দিরের ভূমিপুজো উপলক্ষে এ দিন অবশ্য ইতিউতি লকডাউন ভেঙে পুজোর আয়োজন করেছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। যেমন, দমদম পার্কের মল্লিকপাড়ায় বিজেপি কার্যালয়ের পাশেই রীতিমতো যজ্ঞ করে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। লকডাউন-বিধি ভেঙে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন কর্মীদের অনেকেই। আবার দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডের মোড় থেকে কয়েকশো মিটার দূরেই বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে চলেছে পুজোপাঠ। বড় রাস্তায় সে ভাবে না হলেও বিভিন্ন পাড়ার ভিতরে বিক্ষিপ্ত ভাবে চলেছে পুজোপাঠ।

এ দিন সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ও মোড়ে ব্যারিকেড করে নজরদারি চালিয়েছে পুলিশ। হাওড়া সেতুতেও গার্ডরেল বসিয়ে ‘চেকিং পয়েন্ট’ তৈরি করে কলকাতার দিকে যাওয়া গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, হাজরা মোড়, গড়িয়াহাট, বেহালা, বেলগাছিয়া, শিয়ালদহ— সর্বত্রই দেখা গিয়েছে এমন তল্লাশি। বড় রাস্তাগুলি ফাঁকা থাকলেও পাড়ার ভিতরে কোথাও কোথাও অহেতুক ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনি এলাকায় একটি বস্তির সামনে ভিড় করেছিলেন কিছু বাসিন্দা। মোটরবাইকে চেপে পুলিশের টহলদারি দল আসতেই দৌড় লাগান তাঁরা। এক পুলিশকর্মীর আক্ষেপ, ‘‘এঁদের আর কত ভাল করে বোঝাব? নিজের ভালও না বুঝলে কী করব!’’

এ দিন একটি ছোট গাড়িতে চেপে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে পাঁচ যুবক যাচ্ছিলেন শিয়ালদহের দিকে। পুলিশ আটকালে তাঁরা দাবি করেন, এক জনের মা অসুস্থ। তাই হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও নথি দেখাতে না পারায় তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।

আবার পার্ক সার্কাসে একটি গাড়ি আটকানো হলেও সেটি জরুরি কাজে যাচ্ছে জেনে পুলিশ ছেড়ে দেয়। তবে যাত্রীদের মাস্ক পরিয়ে তবেই যেতে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ফাঁকা ছিল ভিআইপি রোডও। অন্যান্য দিনে প্রবল ব্যস্ত থাকা ওই রাস্তায় এ দিন সকালে এক পাল গরুকে যেতে দেখা গেল। যা দেখে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘অধিকাংশ মানুষই লকডাউনের গুরুত্ব বুঝছেন। কিন্তু নাগরিকদের একটি অংশকে কোনও ভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না।’’ যানবাহন সে ভাবে না থাকায় ভিআইপি রোডের কিছু খানাখন্দও এ দিন মেরামত করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE