মাত্র ৫৩ দিনেই কার্যকালের মাথায় বদলি। যা ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরের অন্দরে।
কর্মক্ষেত্রে নতুন পদে দায়িত্ব পেয়েছিলেন অগস্টে। কিন্তু মাত্র ৫৩ দিনের কার্যকালের মাথায় বিকাশ ভবনে বদলি করা হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) নজরুল হক সিপাইকে। সাম্প্রতিক অতীতে এত কম সময়ে বদলির নজির রয়েছে কি না, সেটাই মনে করতে পারছেন না স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশ।
শিক্ষা দফতরে ঘুঘুর বাসা রয়েছে বলে কয়েক মাস আগে নবান্নে এক প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের একাংশের মতে, এই জেলাতেই সেই ঘুঘুর বাসা রয়েছে। নজরুলবাবু ডিআই পদে এসে সেই বাসা ভাঙতে চেয়েছিলেন বলেই তাঁর উপরে শাস্তির খাঁড়া নেমে এল বলে দাবি শিক্ষকদের একাংশের। জেলার একাধিক প্রধান শিক্ষকেরও দাবি, ডিআইয়ের কিছু সিদ্ধান্তে এক শ্রেণির শিক্ষকের স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়াতেই এই বদলি। যদিও বিকাশ ভবনের কর্তা এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের আর এক অংশের দাবি, এটা নেহাতই রুটিন বদলি। নজরুলবাবুর সঙ্গে আরও কয়েক জন ডিআই-কে বদলি করা হয়েছে। এর পিছনে বিশেষ কারণ খোঁজা অর্থহীন।
স্কুলে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রথম থেকেই কঠোর হয়েছিলেন নজরুলবাবু। অভিযোগ করেছিলেন যে, এই জেলায় প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষকই স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন পান। ফলে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির হার কমাতে নজরদারি শুরু করেন। এ নিয়ে ডিআই অফিসে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন একদল শিক্ষক। বজবজ ও মহেশতলা এলাকার ১৬টি স্কুলে অবৈধ পরিচালন সমিতি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করেন নজরুলবাবু। যার ফলে ওই জেলার শাসক দলের এক বিধায়ক ও পুরপ্রধানের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। ক্লাসে শিক্ষকদের জন্য চেয়ার না-রাখা এবং মোবাইল নিষিদ্ধ করার যে ভাবনা তিনি শুরু করেছিলেন, তার ফলেও শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘ওই পদে থেকে ভাবনাচিন্তা করে সতর্ক হয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। যেটা নজরুলবাবু করেননি।’’
তবে এই বদলির খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন জেলার ডিআই। দক্ষিণবঙ্গের এক ডিআই-এর কথায়, ‘‘দফতর থেকে কড়া হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। অথচ শক্ত হাতে হাল ধরতে গেলে এ ভাবে বদলি হতে হচ্ছে। এ ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। ডিআইদেরই সব সময় বলি হতে হয়।’’ ওই জেলার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘নজরুলবাবুর কাজের ফলে জেলার কিছু শিক্ষক নেতার স্বার্থে আঘাত লেগেছিল। এ ভাবে চললে কোনও জেলার শিক্ষার উন্নতিই সম্ভব নয়।’’ জয়নগরের মনিরতট রাইমণি ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত-প্রধান শিক্ষক সফিউদ্দিন খানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ডিআইয়ের তৎপরতা অনেকের পছন্দ হয়নি। তাই তাঁকে এ ভাবে সরতে হল।’’
তবে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একটি স্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষক অজিত নায়েক বলেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে ডিআইয়ের বদলি চেয়ে কোথাও কোনও লিখিত আবেদন করা হয়নি। তবে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কারণ ডিআইয়ের কাজে অনেকেই
অসন্তুষ্ট ছিলেন।’’ শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক রবীন রায় বলেন, ‘‘বদলি কেন হয়েছে, তা জানি না। তবে ডিআই
অফিসে জরুরি কাজও তৎপরতার সঙ্গে করা হত না।’’ বদলি হওয়া ডিআইয়ের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন তোলেননি। জবাব দেননি টেক্সট মেসেজেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy