হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে নুর। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
দশ মাসের শিশুপুত্র চিৎকার করে কাঁদছে। ক্ষণে ক্ষণে মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। তার গলায় যে ব্লেড আটকে রয়েছে, বুঝতেই পারেননি বাবা-মা। শ্বাসনালির উপরের অংশে আটকে থাকা সেই ব্লেড বুধবার অস্ত্রোপচার করে বার করলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঈশ্বরীপুরের বাসিন্দা হাফিজা খাতুন প্রতিদিনের মতো এ দিনও সকালে ছেলেকে বারান্দায় রেখে বাড়ির কাজ করছিলেন। কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী জালাল খান। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দশ মাসের ছেলে নুর ইসলাম খানের বিকট কান্নার আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন হাফিজা। মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে দেখে তড়িঘড়ি স্বামীকে খবর দেন তিনি। জালাল বাড়ি পৌঁছে নুরকে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে নিয়ে ছোটেন নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। জালাল বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে রক্ত বেরোচ্ছে, কেউই বলতে পারেননি।’’ এর পরে বেলা ১১টা নাগাদ ছেলেকে নিয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে এসে পৌঁছন স্বামী-স্ত্রী।
ইএনটি-র চিকিৎসক বিভাস অধিকারী, সোমা মণ্ডল এবং শুভদীপ করঞ্জাইয়ের তত্ত্বাবধানে নুরকে ভর্তি করানো হয়। শুভদীপ জানান, বাচ্চাটিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন সে প্রায় নেতিয়ে পড়েছে। মুখ দিয়ে প্রচণ্ড রক্ত বেরোচ্ছিল।
এক্স-রে করে দেখা যায়, শ্বাসনালির মুখের কাছে ব্লেডের অর্ধেক অংশ আটকে রয়েছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় শিশুটি ঢোক গিলছিল। ঢোক গেলার সময়ে ব্লেডের ধারালো অংশে কেটে রক্ত বেরোচ্ছিল।
জালাল বলেন, ‘‘খেলতে খেলতে মাটিতে পড়ে থাকা ব্লেড হয়তো গিলে ফেলেছিল। গলার মধ্যে কিছু একটা রয়েছে, তা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু ব্লেড খেয়ে ফেলেছে ভাবিনি। ডাক্তারবাবুরা অসাধ্যসাধন করেছেন।’’
চিকিৎসক বিভাস অধিকারী জানান, ব্লেডের অংশটি গলার মধ্যে আরও কিছু ক্ষণ ওই অবস্থায় থাকলে দু’ভাবে শিশুটির প্রাণহানি ঘটতে পারত। প্রথমত, শ্বাস রুদ্ধ হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। বড়রা কেশে মুখের মধ্যে জমা রক্ত বার করে দিতে পারেন। কিন্তু শিশুরা তা পারে না। তাই গলার মধ্যে থাকা রক্ত শ্বাসনালির পথে ফুসফুসে চলে গেলে নুরের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা ছিল। একরত্তি শিশু ব্লেড গিলে ফেলায় পুরো ঘটনাটি অন্য মাত্রা নেয় বলে জানান তিনি।
ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘শিশুর মুখ হাঁ করে প্রথমে একটি নল ঢোকানো হয়। এর পরে নলের মধ্যে ছোট সাঁড়াশির মতো ফরসেপ ঢুকিয়ে তার সাহায্যে ব্লেড বার করা হয়। একে বলা হয় পেডিয়াট্রিক ল্যারিঙ্গোস্কোপি। শিশুটি আপাতত সুস্থ। সংক্রমণ যাতে না হয়, সে জন্য তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy