Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হর্ন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অন্ধকারে চালকেরাই

অকারণে হর্ন বাজানোর প্রবণতা, নিষেধ না মেনে এয়ার হর্নের ব্যবহার ক্রমশই বেড়ে চলেছে কলকাতা ও শহরতলিতে। হাসপাতালের মতো কিছু জায়গার হর্ন বাজানো যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৩:১৪
Share: Save:

দমদম স্টেশনের নীচে আন্ডারপাসে পরপর দাঁড়িয়ে তিনটি বাস। প্রথম বাসটি ঠায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। পিছনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে দু’টি বাস ও ছোট গাড়ি। প্রায় প্রতিটি গাড়িই হর্ন চেপে ধরে রেখেছে। বদ্ধ আন্ডারপাসে সেই আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

অকারণে হর্ন বাজানোর প্রবণতা, নিষেধ না মেনে এয়ার হর্নের ব্যবহার ক্রমশই বেড়ে চলেছে কলকাতা ও শহরতলিতে। হাসপাতালের মতো কিছু জায়গার হর্ন বাজানো যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে অন্য জায়গায় কত শব্দমাত্রা (ডেসিবেল) পর্যন্ত হর্ন বাজানো যাবে, তা নিয়ে সতকর্তা না থাকায় বিপদ আরও বেড়েছে। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, প্রয়োজনে কখন হর্ন বাজাতে হবে তার প্রশিক্ষণ ছাড়াই মিলছে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স। ফলে সমস্যা রয়ে গিয়েছে গভীরেই। ফাঁকা রাস্তাতেও প্রায়ই হর্ন দিতে দিতে চলে বাস, ছোট গাড়ি, এমনকি অটো-টোটোও।

হর্ন বাজানো নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কড়া বিধি রয়েছে। বাজি, পটকা ফাটানোর ক্ষেত্রে যেমন ৯০ ডেসিবেলের নীচে শব্দমাত্রা বেঁধে রাখার নিয়ম, তেমনই প্রকাশ্যে ৪৫ ডেসিবেলের উপরে শব্দ করা বা হর্ন বাজানোর নিয়ম নেই।

পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাইলেন্স জ়োন থাকে। এমন সব বিধিনিষেধ ছাড়াও শব্দের ক্ষেত্রে দিনের বেলা এক নিয়ম, আবার রাতে আবার অন্য নিয়ম রয়েছে।’’ তবে সেই নিয়ম মানা না হলে যানবাহনের ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ব্যবস্থা নিতে পারে না বলে জানিয়েছেন কল্যাণবাবু। সে ক্ষেত্রে পুলিশ, বিশেষত ট্র্যাফিক পুলিশই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

অভিযোগ, সাইলেন্স জ়োনে ধরপাকড় আর মাঝেমধ্যে দূরপাল্লার গাড়ি আটক করে এয়ার হর্ন বাজেয়াপ্ত করা ছাড়া আর কিছুই করে না ট্র্যাফিক পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘অযথা বা সাইলেন্স জ়োনে হর্ন বাজানোর কারণে প্রচুর ধরপাকড় হয়। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতারও প্রয়োজন। অকারণে হর্ন না দেওয়া নিয়ে আমরা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিতে প্রচারও করছি।’’

অসহিষ্ণুতা ও সচেতনতার অভাবের উদাহরণ দিলেন পার্ক স্ট্রিটের এক ট্র্যাফিক অফিসার। তাঁর কথায়, সিগন্যালে দাঁড়িয়েও হর্ন বাজাতে দেখা যায় অনেক চালককে। তাঁরা বলেন, হাত পড়ে বেজে গিয়েছে। অনেকের আবার ব্রেক কষলেও হর্ন দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। অথচ কেরল, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পরে এখন সেখানে হর্ন বাজাবার প্রবণতা নেই বললেই চলে।

ট্র্যাফিক পুলিশের কথায়, হর্ন না বাজিয়ে নিয়মমাফিক গাড়ি চালানোর মত রাস্তাই নেই মহানগরীর বেশির ভাগ জায়গায়। এমনকি, বেশ কিছু সাইলেন্স জ়োনে বোর্ডও থাকে না। ফলে কোনও চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও ‘সাইলেন্স জ়োন’ লেখা দেখা যায়নি, এই যুক্তিতে আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যান।

লাইসেন্স দেওয়ার সময়ে কোনও ব্যক্তি গাড়ি চালাতে পারেন কি না, তার পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু হর্ন দেওয়ার বিধি নিয়ে কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। এই সমস্যার কথা স্বীকার করে উত্তর ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘আসলে মোটর ট্রেনিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পরে কেউ গাড়ি চালাতে পারেন কি না, তা দেখে লাইসেন্স দেওয়া হয়। কোথায়, কী ভাবে হর্ন বাজাতে হবে সেই শিক্ষা ট্রেনিং স্কুলেরই দেওয়ার কথা।’’ কিন্তু সেই শিক্ষা ট্রেনিং স্কুলে মেলে না বলেই সূত্রের খবর।

এসএসকেএম হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘৭০ থেকে ৮০ ডেসিবেলের উপরে হর্নের আওয়াজ বা কোনও শব্দ নিয়মিত শুনলে কানের ভিতরের নার্ভগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্রবণ শক্তি হারিয়ে বধিরও হয়ে যেতে পারেন কেউ কেউ। এই নার্ভ এক বার নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drivers Horn rules
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE