Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে শরীরে লুকিয়ে মাদক পাচার, উদ্বেগ

সম্প্রতি এক নাইজিরীয় মহিলার যৌনাঙ্গে মাদক লুকিয়ে পাচারের ঘটনা সামনে আসায় শোরগোল পড়েছে। তবে এনসিবি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, মাদক বা নিষিদ্ধ জিনিস পাচারে এই ধরনের একাধিক পন্থা ব্যবহার করেন পাচারকারীরা। ইদানীং শরীরে মাদক লুকিয়ে পাচার

সম্প্রতি গোপনাঙ্গের মধ্যে মাদক নিয়ে এসে পুলিশের জালে পড়া নাইজেরীয় মহিলা। —ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি গোপনাঙ্গের মধ্যে মাদক নিয়ে এসে পুলিশের জালে পড়া নাইজেরীয় মহিলা। —ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০১
Share: Save:

খবর একেবারে পাকা। নাইজিরীয় যুবকের সঙ্গেই ১৫০ গ্রামেরও বেশি কোকেন রয়েছে। বিমানবন্দর থেকেই সেই যুবকের পিছু নিয়েছিলেন নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) অফিসারেরা। রাজারহাটের একটি শপিং মলের সামনে এসে প্রথম বার তাঁরা মুখোমুখি হন ওই যুবকের। তার পর থেকে ওই শপিং মলের একটি শৌচালয়ের গেট প্রায় চার ঘণ্টা ধরে বন্ধ! ভিতরে নাইজিরীয় যুবক আর চার এনসিবি অফিসার।

মাঝে মধ্যে গম্ভীর মুখে এক এক জন অফিসার বার হচ্ছেন, ফোনে কথা বলেই ভিতরে ঢুকে যাচ্ছেন। চোখে-মুখে প্রবল উৎকণ্ঠা! এক অফিসারকে ফোনে হিন্দিতে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছি, কোথাও কিছু নেই!’’

এমনিতে এনসিবি-র মতো তদন্তকারী সংস্থা সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হলে কাউকে আটক করে না। সংস্থার আধিকারিকেরা বলে থাকেন, ‘‘কারও কাছে মাদক আছে কিনা, নিশ্চিত না হয়ে আমরা ছুঁয়েও দেখি না। হোমওয়ার্ক ছাড়া এক পা-ও চলা বারণ।’’ হাল ছেড়ে ওই অফিসারেরা তত ক্ষণে নাইজিরীয় যুবককে হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাবেন ভাবছেন।

মুহূর্তে ‘ক্লু’ পেলেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বর্তমানে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক এনসিবি আধিকারিক। তাঁর মনে হয়, দীর্ঘ চার ঘণ্টা তল্লাশি চলাকালীন এবং তারও আগে বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর পর থেকে আর শৌচালয় ব্যবহার করেননি ওই যুবক। তখন তাকে প্রস্রাব করতে বলেন ওই আধিকারিক। আধিকারিকের কথায়, ‘‘যতবার বলছি, ছেলেটা তত বার না বলছে। সেই থেকেই আমাদের সন্দেহ গাঢ় হয়। দেখা যায়, মূত্রনালীর চামড়ার নীচে গুঁড়ো কোকেন নিয়ে
এসেছিল ছেলেটা।’’

সম্প্রতি এক নাইজিরীয় মহিলার যৌনাঙ্গে মাদক লুকিয়ে পাচারের ঘটনা সামনে আসায় শোরগোল পড়েছে। তবে এনসিবি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, মাদক বা নিষিদ্ধ জিনিস পাচারে এই ধরনের একাধিক পন্থা ব্যবহার করেন পাচারকারীরা। ইদানীং শরীরে মাদক লুকিয়ে পাচার
বেড়েছে। এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি ক্যাপসুল গিলে নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র পৌঁছে পায়ুছিদ্র দিয়ে তা বার করে দেন বহু পাচারকারী। তদন্তকারীদের মতে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের নানা পাচার-পদ্ধতি চালু থাকলেও দেশের মধ্যে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পাচার আগে দেখা যেত না। এটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

এনসিবি-র এক আধিকারিক জানান, প্রথম তাঁরা সমস্যায় পড়েন সল্টলেকবাসী এক মাদক পাচারকারীকে পাকড়াও করতে গিয়ে। তাঁকে গ্রেফতারের পরে সামনে আসে, শহরের একাধিক ম্যানেজমেন্ট স্কুল-কলেজে ছড়িয়ে রয়েছে মাদকের জাল। ওই যুবকের গাড়ির মিউজিক সিস্টেমের মধ্যে, সিটের নীচে, এমনকী সিট বেল্টের মধ্যেও ‘এলএসডি ব্লট পেপার’ (সিনথেটিক ড্রাগ) লুকিয়ে রাখা ছিল। যুবকের এক বন্ধুকে তল্লাশি করে দেখা যায়, জুতোর নীচের গোপন কুঠুরিতে ‘হাসিস’ লুকিয়ে রেখেছেন তিনি। রাজারহাটে এনসিবি দফতরে নিয়ে আসার পরের দিন ভোরে সেই মাদক উদ্ধার হয়। এক এনসিবি আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘সব তল্লাশির পরেও কিছু পাইনি ওই ছেলেটার কাছে। পরে জুতোটা হাতে নিয়ে দেখি ওটা আদতে একটা স্মার্ট-শু। ভিতরে সোলের নীচে হেলথ ট্র্যাকার বসানোর জায়গা রয়েছে। তাতেই হেলথ ট্র্যাকারের বদলে মাদক নিয়ে ঘুরতো ওই যুবক।’’

মাদক লুকোনোর নানা পন্থা সম্পর্কে নিজেদের অফিসারদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও শিক্ষামূলক সেমিনার করে এনসিবি। সন্দেহ হলে কী করতে হবে তা-ও বলা হয় সেখানে। এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘সচেতনতা বাড়াতে নানা প্রচার কর্মসূচি চলছে। মাদক লুকোনো আটকানো যায় কী ভাবে তা সকলেরই জানা উচিত। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করা প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE