মর্মান্তিক: পরিজন-প্রতিবেশীদের ভিড়ে কান্না অনীশের মায়ের। মঙ্গলবার। (ইনসেটে) অনীশ। নিজস্ব চিত্র
উৎসবের মুখে ফের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল দমদমে। মৃতের নাম অনীশ সরকার (১০)। দমদম পুরসভার অন্তর্গত পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনপল্লির ওই বালক ছ’দিনের জ্বরে ভুগে মঙ্গলবারই মারা যায়। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা রয়েছে, ‘ডেঙ্গি এনএস-১ অ্যান্টিজেন পজিটিভ’।
মৃতের জেঠু রঞ্জিত সরকার জানান, বৃহস্পতিবার থেকে অনীশ জ্বরে ভুগছিল। রক্তপরীক্ষায় এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়লে শুক্রবার ওকে চিনার পার্কের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার ডিপিএস নিউ টাউনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রটিকে দত্তাবাদ সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই এ দিন অনীশ মারা যায়। মৃতের বাবা ইন্দ্রজিৎ সরকার রেলকর্মী। ছেলের মৃত্যুতে বিহ্বল মা সুমিতা বিলাপ করেন, ‘‘ছ’দিনের জ্বর কোল খালি করে দিল। ছেলেটাকে ফেরাতে পারলাম না।’’
জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দমদম পুর এলাকায় এ নিয়ে দু’জনের মৃত্যু হল। গত মঙ্গলবারই সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে মানিকপুরের বাসিন্দা অণিমা মজুমদার (৬৩) মারা যান। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটেও মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা ছিল, ‘ডেঙ্গি এনএস-১ অ্যান্টিজেন পজিটিভ’।
পুর পরিষেবা নিয়ে বাসিন্দাদের দাবি, গত বছর মিলনপল্লি এলাকায় বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃতের পরিবারের এক মহিলা
সদস্য বলেন, ‘‘অনীশ এবং তার মায়ের গত বছর ডেঙ্গি হয়েছিল। পাড়াতেও অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিল।’’ মৃতের জেঠু জানান, মাস তিনেক আগে তিনি নিজেই ডেঙ্গিতে ভুগে উঠেছেন। বাসিন্দারা বলেন, ‘‘নর্দমাগুলোর অবস্থা দেখুন, তাহলেই বুঝে যাবেন পুর পরিষেবা কেমন।’’ অনীশের বাড়ির কাছে একটি বহুতল নির্মাণ চলছে।
সে দিকে ইঙ্গিত করে এক মহিলা ক্ষোভ উগরে দিলেন, ‘‘মাটি খুঁড়ে রেখে দিয়েছে। বাড়ির পিছন জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। পুরসভা কী করছে?’’
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল অনীশদের বাড়ির পিছনে একটি মজে যাওয়া ডোবা রয়েছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুরো পাড়ার মাঝখানে ওই পুকুর। সেটি মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হলেও পুরসভা নির্বিকার।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অম্বিকা উপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বাচ্চাটির কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’’ গত বছর অম্বিকাদেবীর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। এ দিন সেই অভিযোগ স্বীকার করেননি তিনি। তবে অনীশের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওয়ার্ড ডেঙ্গি মুক্ত ছিল বলেই তাঁর দাবি।
দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) রিঙ্কু দত্ত দে বলেন, ‘‘কোথাও জ্বর হয়েছে শুনলেই সংক্রমণ ঠেকাতে পুর এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবস্থা নিতে ছুটে যাচ্ছেন। পুরসভার তরফে পরিষেবার কোনও খামতি নেই। যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। ওই ওয়ার্ডের পরিস্থিতি শীঘ্রই খতিয়ে দেখা হবে।’’
ডেঙ্গি নিয়ে এই টানাপড়েনের মাঝেই মিলনপল্লির বাতাসে
ঘুরছে মায়ের কান্না। অনীশকে যখন শববাহী যানে তোলা হয় তখনও
সুমিতা বলে চলেছেন, ‘‘পুজোয় তোমরা কেউ মাইক বাজিও না, আলো জ্বালিও না। আমি সহ্য করতে
পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy