Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নেট-বাজারে ছাড়ের আড়ালে বিকোচ্ছে নকল প্রসাধনী

শপিং মলে নামী ব্র্যান্ডের দামি লিপস্টিক পছন্দ হলেও শেষ পর্যন্ত কেনা হয়ে ওঠেনি। পরে অনলাইনে সেটির প্রায় অর্ধেক দাম দেখে লোভ সামলাতে পারেননি সুমিতা বসু।

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

শপিং মলে নামী ব্র্যান্ডের দামি লিপস্টিক পছন্দ হলেও শেষ পর্যন্ত কেনা হয়ে ওঠেনি। পরে অনলাইনে সেটির প্রায় অর্ধেক দাম দেখে লোভ সামলাতে পারেননি সুমিতা বসু। পুজোর মরসুমে সেই লিপস্টিক চুটিয়ে ব্যবহারের পরে এখন তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ। প্রায় অর্ধেক দামে কেনা লিপস্টিকটি আদৌ আসল কি না, তা নিয়েই এখন মাথাব্যথা ওই তরুণীর।

ভাইফোঁটায় বোনকে উপহার দিতে আগেভাগেই অনলাইনে একাধিক প্রসাধন সামগ্রীর অর্ডার দিয়েছিলেন কলেজপড়ুয়া সাগ্নিক রায়। কিন্তু ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী নিয়ে খবরের জেরে তড়িঘড়ি সেই অর্ডার বাতিল করে হাঁফ ছেড়েছেন ওই তরুণ।

উৎসবের মরসুমে ই-কমার্স সাইটগুলিতে এখন চলছে ছাড়ের ছড়াছড়ি। তার মধ্যেই দেদার ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী বিক্রির দায়ে সম্প্রতি দু’টি জনপ্রিয় সাইটকে নোটিস ধরিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)। দশ দিনের মধ্যে জবাব না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ওই দুই ই-কমার্স জায়েন্টকে। তবে সেই জবাব পৌঁছেছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

১৯৪০ সালের ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক্স আইন অনুযায়ী, ভেজাল সামগ্রী উৎপাদন, বিক্রি বা সরবরাহ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মোটা টাকা জরিমানা তো বটেই, জেলও হতে পারে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। জানা গিয়েছে, গত ৪-৫ অক্টোবর ওই দুই সংস্থার একাধিক প্যাকেজিং হাবে হানা দিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার নকল প্রসাধন সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেন ড্রাগ ইনস্পেক্টরেরা। আর তাতেই চিন্তা বেড়েছে লক্ষাধিক গ্রাহকের। ই-কমার্স সাইটগুলিকে হাতিয়ার করে কী ভাবে এত ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী অবাধে বিক্রি হচ্ছে, উঠছে সেই প্রশ্ন।

এর জন্য অবশ্য মানুষের চাহিদাকেই দায়ী করছেন অল ইন্ডিয়া কসমেটিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি কাজল আনন্দ। মুম্বই থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘লোকে কম দামে কিনতে চায়, তাই এত ভেজালের রমরমা। গ্রাহককেই তো ভাবতে হবে যে, এত বেশি বেশি ছাড় দেওয়া বিক্রেতার পক্ষে কী ভাবে সম্ভব!’’ তিনি জানাচ্ছেন, নেট-বাজারে ‘তৃতীয় পক্ষ’ এই অনলাইন সাইটগুলিতে কী পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তার উপরে কোনও সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। ই-কমার্স সংক্রান্ত আইন তৈরি নিয়ে কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যেও রয়েছে বিভ্রান্তি। আসল বিক্রেতার হদিস না পাওয়ায় অভিযোগ এলেও ব্যবস্থা নিতে পারছে না ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। এরই সুযোগ নিচ্ছেন অসৎ ব্যবসায়ীরা। কখনও বড় ব্র্যান্ডের কৌটোয় ভেজাল জিনিস ভরে ফের বিক্রি করা হচ্ছে, আবার কখনও কৌটোর গায়ে সাঁটিয়ে দেওয়া হচ্ছে নকল লেবেল। ফলে কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা বুঝতেই পারছেন না ক্রেতারা।

এই পরিস্থিতিতে ই-কমার্স সাইটগুলির পাশাপাশি, উৎপাদক সংস্থাগুলিকে আরও সতর্ক হতে হবে বলে মনে করাচ্ছেন কাজল। প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুতকারক ও বিউটিশিয়ান কেয়া শেঠ জানাচ্ছেন, নকল থেকে বাঁচতে তাঁর সংস্থা বিশেষ হলোগ্রাম ব্যবহার করে। তাঁর কথায়, ‘‘ছাড়ের পিছনে না ছুটে ক্রেতার উচিত ব্র্যান্ডের হলোগ্রাম দেখে জিনিস কেনা।’’

শুধু অনলাইনই নয়। পাড়ার ছোট-বড় দোকানে, ফুটপাতে ঢেলে বিকোচ্ছে নকল আইলাইনার, সুগন্ধী, ক্রিম, আরও কত কী! কম দামের সেই প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে? ত্বক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ দেশে প্রসাধন সামগ্রী কী উপাদানে তৈরি, প্যাকিং বাক্সের উপরে তা লেখা বাধ্যতামূলক নয়। ফলে নকল প্রসাধন সামগ্রীতে অনেক সময়েই খোঁজ মিলছে লেড, আর্সেনিক, পারদ, অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুর। ত্বক এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরে যার প্রভাব মারাত্মক। ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ডার্মাটোলজি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলছেন, ‘‘ভেজাল প্রসাধন সামগ্রীতে অনেক সময়েই স্টেরয়েড, হাইড্রোকুইনিন, টেট্রানোইনের মতো তীব্র রাসায়নিক থাকে। এদের প্রভাবে মুখ পুড়ে যেতে পারে। র‌্যাশ, ব্রণ, মুখে অবাঞ্ছিত লোমের মতো সমস্যা তো রয়েছেই। এমনকি, বারবার ব্যবহারে স্টেরয়েডের ক্রীতদাসে পরিণত হওয়াও অসম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cosmetic Duplicate Online Shopping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE