Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2020

অতিমারির পুজোর স্মারক হয়ে সংগ্রহশালায় প্রতিমারা

হাতিবাগান সর্বজনীন, বড়িশা ক্লাবের মতো সন্তোষপুর লেকপল্লি, খিদিরপুর ৭৪ পল্লি ও চেতলা অগ্রণীর দুর্গারা এ বার স্থান পেয়েছেন রাজ্য এবং ভিন্ রাজ্যের সংগ্রহশালাতেও।

বড়িশা ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা। ছবি পিটিআই।

বড়িশা ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা। ছবি পিটিআই।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০১
Share: Save:

পুজো শেষ। ঘরের মেয়েকে বিদায় জানানোর এই আবহেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তের ভিন্ন রূপের ‘উমা’রা পাড়ি দিচ্ছেন সংগ্রহশালায়। যেখানে গেলে ফিরে দেখা যাবে করোনা পরিস্থিতিতে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপের দুর্গা প্রতিমাকে।

তবে এই সংগ্রহকে নিছকই কোনও সংস্থা বা ব্যক্তির বলে ভাবতে নারাজ অধিকাংশ পুজো কমিটির সদস্যই। যেমন, হাতিবাগান সর্বজনীনের আহ্বায়ক শাশ্বত বসুর কথায়, ‘‘শিল্পীর সৃষ্টি বেঁচে থাকবে ওই সংগ্রহের মধ্যে। আগামী দিনেও যা মানুষ ইচ্ছা করলেই দেখতে পারবেন। শিল্পটির সম্পর্কে জানতে পারবেন।’’ আবার বড়িশা ক্লাবের প্রচারের দায়িত্বে থাকা অনিমেষ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যেই তো দেবতার বাস। সেটাই তুলে ধরা হয়েছিল আমাদের প্রতিমার মধ্যে। আর সেই সৃষ্টিই বেঁচে থাকবে সংগ্রহশালায়।’’

হাতিবাগান সর্বজনীন, বড়িশা ক্লাবের মতো সন্তোষপুর লেকপল্লি, খিদিরপুর ৭৪ পল্লি ও চেতলা অগ্রণীর দুর্গারা এ বার স্থান পেয়েছেন রাজ্য এবং ভিন্ রাজ্যের সংগ্রহশালাতেও। ২০১৩ সালে হাতিবাগান সর্বজনীনের মোষের শিং দিয়ে তৈরি প্রতিমা স্থান পেয়েছিল ওড়িশার সংগ্রহশালায়। এ বারও কাগজের কোলাজে তৈরি তাদের প্রতিমা পাড়ি দিচ্ছে চিল্কার ওই সংগ্রহশালায়। কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত ‘ওডিআই আর্ট সেন্টার’-এ প্রতিমাটি পাঠানোর আগে ফের তাতে রাসায়নিকের প্রলেপ দিতে ব্যস্ত শিল্পী সঞ্জীব সাহা। বললেন, ‘‘ওই রাসায়নিক দিলে প্রতিমাটি দীর্ঘস্থায়ী হবে। জল-বাতাসে নষ্ট হবে না। প্রতিটি অংশ খুলে প্যাক করে কুরিয়রে ওড়িশায় পাঠানো হবে।’’ মাউন্ট বোর্ডের উপরে খবরের কাগজের তিন-চারটি স্তর তৈরি করে সেটিকে প্রতিমার আদলে কেটে তার উপরে ম্যাগাজ়িনের রঙিন কাগজ সেঁটে তৈরি হয়েছিল এই প্রতিমা।

অতিমারির পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন দুর্দশার ছবি এখনও টাটকা মানুষের মনে। সেই ছবিই ফুটিয়ে তুলেছিল বড়িশা ক্লাব। করোনা আবহের শারদীয়ায় যার ছবি ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্যের দুর্গা সিরিজ়ের একটির অনুকরণে থিম শিল্পী রিন্টু দাসের ভাবনায় কৃষ্ণনগরের পল্লব ভৌমিক তৈরি করেছিলেন এক সন্তানকে কোলে ও বাকিদের সঙ্গে নিয়ে ত্রাণ শিবিরে পৌঁছনো মায়ের মূর্তি। জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল ফাইবারের ওই মূর্তি তৈরির কাজ। উদ্যোক্তারা জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই ওই ‘পরিযায়ী মা’ এ বার পাড়ি দিচ্ছে রবীন্দ্র সরোবরে ‘মা ফিরে এল’ সংগ্রহশালায়। ২০০৩ থেকে শুরু করে এ বছর পর্যন্ত বেশ কয়েক বার বিভিন্ন সংস্থার বা ব্যক্তির সংগ্রহে গিয়েছে বড়িশা ক্লাবের দুর্গা।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ হলেও অতিমারিতে এ বার সবেতেই তালা পড়ে গিয়েছিল। তাই যে সময়ে পটুয়ারা বায়না পাচ্ছিলেন না, সেই সময়েই নদিয়ার পটুয়াপাড়ায় গিয়ে দুর্গা, কালী, বিশ্বকর্মা, মনসা ও গণেশের ৫০টি প্রতিমার বায়না দিয়ে এসেছিল সন্তোষপুর লেকপল্লি। ‘মাটির কান্না’ বোঝাতে শিল্পী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভাবনায় প্রদীপ সরকার তিন মাস ধরে বানিয়েছিলেন কাগজের প্রতিমা। সেটিই বুধবার জায়গা করে নিয়েছে রবীন্দ্র সরোবরের সংগ্রহশালায়। আর বাকি ৫০টি প্রতিমা গিয়েছে সোনারপুরের এক ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়। কমিটির সম্পাদক সোমনাথ দাস বললেন, ‘‘২০১৬-র প্রতিমা বাইপাসের একটি পাঁচতারা হোটেলে রয়েছে। এ বারও গেল।’’

আর বাকি উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘‘উমা তো কাছেই থাকল। দেখার সুযোগ রইল সব সময়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE