Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2020

পুজোর আবেগ বাঁচিয়ে রাখছেন কাউসের-মতিনেরা

বন্দর এলাকার মেটিয়াবুরুজের নাদিয়ালের সাতঘরা প্রগতি সঙ্ঘের পুজো এ বার ৫১ বছরে পা দিল।

ভরসা: পুজে মণ্ডপের সামনে ওঁরা। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: পুজে মণ্ডপের সামনে ওঁরা। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৪:১০
Share: Save:

পাড়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমেরাই। হিন্দু পরিবারের সংখ্যা খুব বেশি হলে দশটি। তাই দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরি, পুজো পরিচালনা, সব কাজেই হিন্দুদের পাশে মুসলিম যুবকেরাই সংখ্যায় বেশি। মণ্ডপে প্রতিমা আনা থেকে শুরু করে বিসর্জন— যাবতীয় আয়োজনের মূল উদ্যোগ তাঁদেরই।

বন্দর এলাকার মেটিয়াবুরুজের নাদিয়ালের সাতঘরা প্রগতি সঙ্ঘের পুজো এ বার ৫১ বছরে পা দিল। পুজো কমিটির সম্পাদক চণ্ডীচরণ ভক্তের কথায়, ‘‘আমাদের এখানে গোটা কয়েক হিন্দু পরিবারের বসবাস। দুর্গা প্রতিমা তৈরির বেশির ভাগ খরচই পাড়ার মুসলিমদের অর্থ সাহায্যে হয়। এটাই বাঙালির দুর্গোৎসব। হিন্দু-মুসলিম বিভেদ এখানে কোনও কালেই নেই। বিপদের সময়ে প্রতিবেশী হাকিম মোল্লা, শাহিদ আলম, আব্দুর রহমান শেখরা সারা বছর পাশে দাঁড়ান।’’

পুজো কমিটির সভাপতি স্বপন প্রামাণিক বলছিলেন, ‘‘প্রতিমা তৈরির বায়না দেওয়া, শিল্পীর বাড়ি থেকে প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে আসার সময়ে পাশের পাড়ার কাউসের শেখ, মতিন মোল্লা, গিয়াসুদ্দিনেরা সব সময়ে আমাদের সঙ্গে থাকেন।’’ পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাকিম মোল্লা বলেন, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা অত্যন্ত সক্রিয় ভাবে দুর্গাপুজোয়

অংশগ্রহণ করে আসছেন। আমরা পুজোর সময়ে একে অন্যের বাড়ি যাওয়া আসা করি। পারস্পরিক কোলাকুলিতে আমাদের বন্ধন যেন আরও দৃঢ় হয়।’’ পেশায় ওস্তাগর শাহিদ আলম বলেন, ‘‘পুজোর চার দিন কাজ বন্ধ করে মণ্ডপে চুটিয়ে আড্ডা মারি। বলতে পারেন, পুজোর কয়েকটা দিনের জন্য সারা বছর আমরাও অপেক্ষায় থাকি।’’

সাতঘরার আর এক ব্যবসায়ী মতিন মোল্লার কথায়, ‘‘বিসর্জনের সময়ে প্রতিমাকে গঙ্গায় নিয়ে যেতে আমরা কাঁধে তুলে নিই। আমাদের সারা দেশের সংস্কৃতি তো এটাই হওয়া উচিত।’’

পুজো কমিটির সম্পাদক চণ্ডীচরণবাবু এলাকায় ‘মাস্টারমশাই’ নামে পরিচিত। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর তিন মাস আগে থেকে এলাকার মুসলিম ভাইয়েরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে পুজোর প্রস্তুতির বৈঠক ডাকেন। এক কথায় পুজোর হোতা ওঁরাই।’’

পুজোর আর মাত্র ক’দিন বাকি। এরই মধ্যে রোজ সকাল-সন্ধ্যায় মণ্ডপের সামনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আলোচনা সারছেন সোলেমান, কাউসের, স্বপন, রমেনরা। মেটিয়াবুরুজের বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘‘নাদিয়ালের সাতঘরার ওই পুজো সারা দেশের মডেল হওয়া উচিত। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে এ রকম প্রয়াস আরও বেশি করে হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE