Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পুনর্মূল্যায়নে জট যাদবপুরে, তদন্ত চাইছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী

রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য শুক্রবার জানান, প্রথম তালিকায় থাকা ৭০ জনের মধ্যে ১৫ জন চলে গিয়েছেন ওয়েটিং লিস্ট বা প্রতীক্ষার তালিকায়! সংশোধিত তালিকায় উঠে এসেছেন অন্য ১৫ জন। প্রথম তালিকাভুক্ত অনেকের নাম নতুন তালিকার উপরের দিকে উঠেছে বা নীচে নেমে গিয়েছে। সংশোধিত মেধা-তালিকা অনুযায়ী ভর্তি নেওয়া হবে ২০ এবং ২১ অগস্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৪
Share: Save:

বিস্তর টানাপড়েনের পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ইতিহাসে ভর্তির সংশোধিত মেধা-তালিকা প্রকাশিত হল ঠিকই। কিন্তু রিভিউয়ের পরে মেধা-তালিকায় বেশ কিছু বদল ঘটেছে। আর সেই বদলের বেশিটাই স্থানগত ওঠাপড়া। সেই ওঠানামার মূলে আছে নম্বর বৃদ্ধি। এ ভাবে নম্বর বাড়ছে কী ভাবে, সেই বিষয়ে তদন্তের দাবি উস্কে দিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য শুক্রবার জানান, প্রথম তালিকায় থাকা ৭০ জনের মধ্যে ১৫ জন চলে গিয়েছেন ওয়েটিং লিস্ট বা প্রতীক্ষার তালিকায়! সংশোধিত তালিকায় উঠে এসেছেন অন্য ১৫ জন। প্রথম তালিকাভুক্ত অনেকের নাম নতুন তালিকার উপরের দিকে উঠেছে বা নীচে নেমে গিয়েছে। সংশোধিত মেধা-তালিকা অনুযায়ী ভর্তি নেওয়া হবে ২০ এবং ২১ অগস্ট।

বাতিল মেধা-তালিকায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ পড়ুয়াদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে ছিলেন উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া গ্রন্থন সেনগুপ্ত। প্রবেশিকার সংশোধিত মেধা-তালিকায় তিনি নেমে গিয়েছেন পঞ্চম স্থানে। প্রথম তালিকায় পঞ্চম স্থানাধিকারী উঠে এসেছেন দ্বিতীয় স্থানে। সপ্তদশ স্থানে থাকা পড়ুয়া পেয়েছেন সপ্তম স্থান। ওই মেধা-তালিকার শেষ তিন জন চলে গিয়েছেন ওয়েটিং লিস্টে। উঠে এসেছেন অন্য পড়ুয়ারা।

আগের সব বোর্ড নিয়ে তৈরি মেধা-তালিকার ১৫ জন অপেক্ষার তালিকায় চলে গিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছিল, উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ২১৬ জনের নাম আগের মেধা-তালিকায় ছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ১২৪ জন পেয়েছিলেন দশেরও কম নম্বর! রিভিউয়ে তাঁদের মধ্যে দশের কম পেয়েছেন ১১৯ জন। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের নম্বর বেড়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে যাঁরা ৮৫-৯০% নম্বর পেয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ প্রবেশিকা পরীক্ষায় পেয়েছেন এক বা শূন্য! উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০.৭৫% এবং প্রবেশিকায় শূন্য পাওয়া এক পড়ুয়া এ বার পেয়েছেন ছয়।

মেধা-তালিকার বদল নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন তদন্তের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নম্বর বাড়াটা রীতিমতো তদন্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদবপুরে উপাচার্য আছেন। তিনি দেখবেন। আমাকে রিপোর্ট পাঠাবেন।’’ যাদবপুরে কিছু বিষয়ে সরাসরি ভর্তি আর কয়েকটি বিষয়ে প্রবেশিকার ভিত্তিতে ভর্তি কেন, বারে বারেই সেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম, মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া উচিত। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক রকম পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া উচিত। যারা শূন্য পেয়েছিল, তাদের নম্বর বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বার ভাবুন, এতে গরিমা বাড়ল কি না!’’

তবে রেজিস্ট্রারের বক্তব্য, ‘সাবজেক্টিভ’ প্রশ্নের ক্ষেত্রে খাতা আবার দেখলে নম্বর বদল হতে পারে। ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজ্ঞানের বিষয়ে তার সুযোগ কম থাকে। ‘‘তদন্তের বিষয়টি কর্মসমিতির উপরে নির্ভর করছে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত হতে পারে। বাইরে থেকে কাউকে দিয়ে তদন্ত করানো হতে পারে। আবার তদন্ত না-ও হতে পারে,’’ বলেন চিরঞ্জীববাবু। প্রবেশিকা নিয়ে গোলমালের সময়েই উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়েছিলেন, পুরো ঘটনার তদন্ত হবে। তখনও অবশ্য উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন হয়নি।

প্রবল বিতর্কের মধ্যে এ বার ইতিহাসে ভর্তির প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, বাইরের পরীক্ষকদের দিয়ে প্রবেশিকার উত্তরপত্র নতুন করে যাচাই করা হবে। এ দিন সেই পুনর্মূল্যায়নের ফল প্রকাশের পরেই দেখা যায়, বদল ঘটেছে বেশ কিছু। রেজিস্ট্রার জানান, প্রফেসর পদমর্যাদার মোট ছ’জনকে দিয়ে প্রবেশিকার ৩৪৪টি খাতার পুনর্মূল্যায়ন করানো হয়েছে। ওই ছ’জনের মধ্যে রাজ্যের বাইরের এক পরীক্ষকও ছিলেন। ইতিহাস বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক আগেই জানিয়েছিলেন, বাইরের পরীক্ষক দিয়ে প্রবেশিকার খাতা নতুন করে দেখানো হলে তাঁরা চলতি বছরে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আর যোগ দেবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE