Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চেনা মুখের খোঁজে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে দু’টিতে

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ছুটকি আর ধৌলির জন্য বাজারের থলে হাতে বেরোতেন রথীন্দ্রনাথবাবু। দূর থেকে ওঁকে থলে হাতে আসতে দেখতেই বেড়াল দু’টি পিছু নিত।

পথ চেয়ে: প্রতীক্ষায় পোষ্য। বুধবার, পর্ণশ্রীতে। নিজস্ব চিত্র

পথ চেয়ে: প্রতীক্ষায় পোষ্য। বুধবার, পর্ণশ্রীতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৩
Share: Save:

এ ঘর থেকে ও ঘরে ঘুরে বেড়াত দু’জনে মিলে। গোটা দোতলা বাড়িটায় ছিল ওদের অবাধ ঘোরাফেরা। কিন্তু এখন আর সেই উপায় নেই। বাড়ি যে বন্ধ। তাই ওদের ঠাঁই হয়েছে গ্রিলে ঘেরা বারান্দার পাশেই রাখা নীল রঙের একটি ভাঙা দরজার আড়ালে। তবু চেনা পরিবেশ ছাড়তে নারাজ ছুটকি আর ধৌলি, পর্ণশ্রীর বৃদ্ধ রথীন্দ্রনাথ রায়ের পোষ্য বেড়াল দু’টি।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পরে সোমবার রাতে মৃত্যু হয়েছে রথীন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রী মীনাক্ষী রায়ের (৬২)। খবর পেয়ে এসেছিলেন আত্মীয়েরাও। কিছু ক্ষণের জন্য তাঁদের অনুপস্থিতির ফাঁকেই আনাজ কাটার ছুরি নিজের গলায় চালিয়ে দিয়েছিলেন রথীন্দ্রনাথবাবু। পর্ণশ্রী থানা এলাকার বেণী মাস্টার লেনের দোতলা বাড়িটার চেনা ছবি
বদলে গিয়েছে সেই রাত থেকে। চাপা কান্না, পুলিশের যাতায়াত, আতঙ্ক, হা-হুতাশ, ক্যামেরার ঝলকানি— সব যেন কেমন অচেনা ঠেকছে ওদের কাছে।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ছুটকি আর ধৌলির জন্য বাজারের থলে হাতে বেরোতেন রথীন্দ্রনাথবাবু। দূর থেকে ওঁকে থলে হাতে আসতে দেখতেই বেড়াল দু’টি পিছু নিত। বাড়ির সামনে এসে ওঁর পায়ে মুখ ঘষত। ঘনিষ্ঠ মহলে রথীন্দ্রনাথবাবু বলতেন, ‘‘ওরা আসলে বুঝতে পারে, ওদের জন্য মাছ রয়েছে ব্যাগে।’’ অসুস্থ স্ত্রীর শুশ্রূষা, নিজের বার্ধক্যজনিত সমস্যা সত্ত্বেও ছুটকি আর ধৌলির সঙ্গে দিনের অনেকটা সময় কাটাতে ভালবাসতেন তিনি। স্থানীয়েরা বলছেন, ওদের চোখে হারাতেন ওই বৃদ্ধ।

সেই রাতের পর থেকে বেড়াল দু’টি ঠায় দরজায় দাঁড়িয়ে। লোকজন আসা-যাওয়া দেখলেই পালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার রাতে কিছুই খায়নি ওরা। এত বড় অঘটনের মধ্যে তেমন কেউ ভাবেনি ওদের কথা। গভীর রাতে ওদের দিকে মন যেতে স্থানীয়েরা দেখেন, একটি ফাঁকা জায়গায় বসে ডেকেই চলেছে বেড়াল দু’টি। মঙ্গলবার সকাল হতেই ওদের কথা মনে পড়ে রথীন্দ্রনাথবাবুর ভাই বুদ্ধদেব রায়ের। পাশেই বাড়ি তাঁর। বুদ্ধদেববাবু বলেন, ‘‘বেড়ালদের নিয়েই অনেকটা সময় কেটে যেত দাদার। মনে পড়ল, দাদা থাকলে তো ঠিক খেতে দিতেন ওদের। তাই ওদের খেতে ডাকলাম। তবে খুব কম খেয়েই ওরা আবার দাদার বাড়িতে ফিরে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE