প্রতীকী ছবি।
চৌরাস্তার মোড়ে একটি টোটো এসে দাঁড়াতেই ঘিরে ধরলেন পাঁচ ব্যক্তি। তাঁরা এক প্রৌঢ়কে নামিয়ে নিতেই পালানোর চেষ্টা করল টোটোয় বসা বাকি তিন জন। ওই তিন জনকেও ধরে ফেললেন ওই ব্যক্তিরা!
সোমবার রাতে বোলপুর চৌমাথায় এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন মানুষজন। জানা গেল, যাঁরা টোটোটি ঘিরে ধরেছিলেন, তাঁরা সকলেই হাওড়ার বালি থানার সাদা পোশাকের পুলিশ। তাঁরাই ফিল্মি কায়দায় ন’দিন আগে অপহৃত হওয়া দুর্গাপুরের বাসিন্দা তপন দাসকে উদ্ধার করলেন। এর পাশাপাশি ওই রাতেই করিম শেখ, মনিরুল ইসলাম এবং সুজান শেখ নামে তিন যুবককে ধরে পুলিশ। মঙ্গলবার তপনবাবুকে বালি থানায় নিয়ে আসা হয়।
পুলিশ জানায়, ১৬ ডিসেম্বর মেয়ে ছন্দবাণীকে বালিতে তাঁর ননদের বাড়িতে রেখে দুর্গাপুরে ফেরার সময়ে অপহৃত হন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তপনবাবু। ছন্দবাণীর অভিযোগ পেয়ে শ্বশুরকে অপহরণের দায়ে গ্রেফতার করা হয় জামাই প্রদীপ ঘোষকে। জানা যায়, ঘটনায় জড়িত প্রদীপের বন্ধু করিম শেখও। কারণ দুই বন্ধু মিলেই গত দু’বছর ধরে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছিল। প্রতারিতেরা তাঁদের থেকে টাকা ফেরত চাইছিলেন।
বছর খানেক আগে করিম নিজের জমি বিক্রি করে কিছু টাকা শোধ করলেও প্রদীপ পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। টাকা আদায় করতে কয়েক দিন আগে তাকেও বোলপুরে একটি বাড়িতে আটকে রেখেছিল করিমরা। প্রদীপের স্ত্রী ছন্দবাণীকে তপনবাবু যে দু’টি বাড়ি করে দিয়েছিলেন, তার বাজারদর কমপক্ষে ৬০ লক্ষ টাকা। অপহরণকারীদের দাবি ছিল, সেই বাড়়ির দলিল তাদের দিতে হবে। কিন্তু কয়েক দিন আগে বোলপুর থেকে পালিয়ে বালিতে দিদির বাড়িতে চলে আসে প্রদীপ। গ্রেফতার হওয়ার পরে পুলিশকে তেমনই জানিয়েছিল প্রদীপ। করিমকে গ্রেফতারের পরে ওই কথার সত্যতা মিলেছে বলেও পুলিশের দাবি। তপনবাবু কখন বালিতে আসছেন ও ফিরে যাচ্ছেন সেই খবর একমাত্র প্রদীপ জানত। সে-ই ওই তথ্য করিমকে দেয়, তাই প্রদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, তপনবাবুর মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণকারীরা ছন্দবাণীকে ফোন করলেও তাদের অবস্থান জানতে সমস্যা হচ্ছিল। গোটা বীরভূম জুড়েই তাদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন মিলছিল। শেষে প্রদীপদের দ্বারা প্রতারিত এক যুবকের সন্ধান মিলতে তাঁকে পাকড়াও করতে সোমবার বালি থানার ওসি বিকাশ দত্তের নেতৃত্বে ছ’জনের একটি দল বোলপুর রওনা দেয়। ওই যুবককে ধরতেই জানা যায় কোথায় রয়েছেন তপনবাবু। এর পরে তদন্তকারীদের কথা মতো ওই যুবক ফোন করে করিমদের জানান, তিনি তপনবাবুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রৌঢ়কে নিয়ে এলেই মুক্তিপণ মিলবে। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে রাত ১০টা নাগাদ টোটোয় চেপে করিমরা আসে বোলপুর চৌমাথায়।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, তপনবাবুকে অপহরণ করা হয়েছিল শক্তিগড় থেকে। প্রদীপই এক সময়ে করিমদের জানিয়েছিল, টাকা শোধ করতে হলে শ্বশুরের থেকে সম্পত্তি হাতাতে হবে। না হলে তার পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে শ্বশুরকে অপহরণের সঙ্গে জামাইয়ের কতটা যোগ রয়েছে এবং করিমের সঙ্গে যারা অপহরণে যুক্ত ছিল, তাদের পরিচয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy