সম্পদদেবী বৈদ
ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যু মহানগরে। তবে, এ বার ঘিঞ্জি বসতি বা শহরতলি নয়, খাস দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত আবাসনে। শুধু তা-ই নয়, বালিগঞ্জ সার্কুলার রো়ডের বাসিন্দা সম্পদদেবী বৈদের (৬২) মৃত্যুতে ডেঙ্গির নয়া উপসর্গও দেখতে পেয়েছেন চিকিৎসকেরা।
মৃতার পরিবার জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে আচমকা খিঁচুনি শুরু হওয়ায় দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল ওই প্রৌঢ়াকে। বুধবার রাতে সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। জ্বর বা গা-হাত-পা ব্যথার মতো উপসর্গ ছিল না। হাসপাতালে ভর্তি করার পরেই ডেঙ্গি ধরা পড়ে। তার পরেই একের পর এক অঙ্গ বিকল (মাল্টি-অর্গ্যান ফেলিওর) হতে শুরু করে। যার ফলে শেষমেশ মারা যান সম্পদদেবী।
সম্পদদেবীর পরিবার বৃহস্পতিবার জানায়, বাড়ি থেকে বেরোতেন না ওই প্রৌঢ়া। তাঁদের আবাসনও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। মশাও নেই। ওই আবাসনের কোনও বাসিন্দারও ডেঙ্গি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে ওই প্রৌঢ়ার ডেঙ্গি হল, বুঝতে পারছেন না তাঁরা। মৃতার পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘জ্বর ছিল না। কোনও লক্ষণও ধরা পড়েনি। হাসপাতালে নেওয়ার পরেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেল!’’
পরজীবী-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অনেকেই বলছেন, ডেঙ্গির প্রধান উপসর্গ জ্বর ও গা-হাত-পা ব্যথা এ ক্ষেত্রে ধরা পড়েনি। সংক্রমণ শরীরের ভিতরে নিশ্চিন্তে বেড়েছে। মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক রাজা ভট্টাচার্যের মতে, ভাইরাস চুপিসারে মস্তিষ্কে আক্রমণ করেছিল বলেই খিঁচুনি হয়েছে। ওই রোগীর এনসেফ্যালাইটিস-ও হয়ে থাকতে পারে। মেডিক্যালেও এমন কয়েক জন রোগী এসেছেন।
চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী জানান, জ্বর না হলেও শরীরে ভাইরাস দানা বাঁধতে পারে। জ্বর হতে গেলে যত পরিমাণ ভাইরাস শরীরে থাকা প্রয়োজন, তার চেয়ে কম থাকলে জ্বর হবে না। অনেক সময়ে শরীরে অ্যান্টিব়ডি তৈরি হলে জ্বর হয় না, কিন্তু ডেঙ্গি ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করতে থাকে। ফলে অন্য অঙ্গ বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই প্রৌঢ়ার অন্য রোগও ছিল। ওষুধও খেতেন। ফলে ডেঙ্গি ভাইরাস সেই অঙ্গগুলিকে আক্রমণ করতে পেরেছে।
এ দিন ওই আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, কোথাও ময়লা বা জমা জল নেই। প্রৌঢ়া তো বাইরেও যেতেন না। তা হলে ডেঙ্গির থাবা পড়ল কী ভাবে?
পরজীবী-বিশেষজ্ঞেরা জানান, বাড়িতেই জল জমে থাকতে হবে, এমনটা নয়। আশপাশের এলাকাতেও মশা জন্মাতে পারে। ওই এলাকায় যে সব আবাসন বা ঘরবাড়ি রয়েছে, সেখানেও মশা জন্মাতে পারে।
অনেক সময়ে আবাসনের এসি মেশিন বা বারান্দায় রাখা ফুলের টবেও মশা ডিম পাড়ে। ওই আবাসনের কেয়ারটেকার সুশান্ত অধিকারীর দাবি, আবাসন চত্বর নিয়মিত সাফ করা হয়। এসি মেশিনের জল ভূগর্ভস্থ নালায় প়়ড়ে। আবাসন চত্বরে কোথাও জল জমতে দেওয়া হয় না। তাঁর অভিযোগ, আবাসনের পিছনে একটি জায়গায় জঙ্গল হয়ে রয়েছে। সেখানে মশা জন্মাতে পারে।
সম্পদদেবীর মৃত্যুর খবর শুনে এ দিন সকালেই ওই আবাসনে গিয়েছিল পুরসভার একটি দল। আবাসন সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবার পুরকর্মীরা ওই আবাসনে মশা মারতে যেতে পারেন। পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই এলাকায় নিয়মিত মশা নিধনের কাজ চলে। ওই এলাকার অন্য আবাসনেও নজরদারি বাড়ানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy