Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার বৃদ্ধার পচাগলা দেহ

এক হাতে তখনও ধরা ইনহেলার! নিজের বিছানাতেই পড়ে থাকা নিথর শরীরটায় তত ক্ষণে পচন ধরেছে। বুধবার রাতে বরাহনগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রামলাল অগ্রবাল লেনের একটি বাড়ি থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হল এক বৃদ্ধার দেহ। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম স্মৃতিকণা সেন (৬৪)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

এক হাতে তখনও ধরা ইনহেলার! নিজের বিছানাতেই পড়ে থাকা নিথর শরীরটায় তত ক্ষণে পচন ধরেছে। বুধবার রাতে বরাহনগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রামলাল অগ্রবাল লেনের একটি বাড়ি থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হল এক বৃদ্ধার দেহ। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম স্মৃতিকণা সেন (৬৪)। তদন্তকারীদের অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন ওই বৃদ্ধা। প্রতি দিন ফোনে মায়ের খোঁজ নিতেন একমাত্র মেয়ে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বারবার ফোন করলেও তা বেজে যায়। কেন মা ফোন ধরছেন না জানতে পর দিন দুপুরে বাড়িওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করেন মেয়ে। ওই রাতেই খোঁজ নিয়ে জানা গেল ঘরেই মৃত পড়ে তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুনে স্মৃতিকণাদেবীর স্বামী অমলকুমার সেন মারা যান। অক্টোবরেই টবিন রোডের বাড়ি ছেড়ে রামলাল অগ্রবাল লেনের বাড়িতে ভাড়ায় উঠে আসেন। বিয়ের পর থেকে ভবানীপুরের যগুবাবুর বাজার এলাকায় থাকেন তাঁদের মেয়ে সঙ্গীতা সেনবসু। তাই একাই থাকতেন স্মৃতিকণাদেবী।

স্থানীয়েরা জানান, বেশির ভাগ সময় সিঁথি এলাকায় আত্মীয়দের বাড়িতে চলে যেতেন তিনি। সদাহাস্য স্মৃতিকণাদেবী যে টুকু সময় বাড়িতে থাকতেন টিভি দেখে সময় কাটাতেন। তাঁকে সে ভাবে অসুস্থ হতেও কেউ দেখেননি বলে দাবি প্রতিবেশীদের। বাড়ির মালিক অভিজিৎ সাহা বলেন, ‘‘ওঁর মেয়ে আসতেন ভাড়া দিতে। কখনও সখনও উনি নিজেও আসতেন। কখনও বুঝিনি ওঁর কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে।’’ প্রতিবেশীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে শেষ বার বাড়িতে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল।

অভিজিৎবাবু জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে স্মৃতিকণাদেবী ফোন ধরছেন না বলে চিন্তিত সঙ্গীতাদেবী বুধবার সকালেই ফোন করেন তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘হয়তো ফোনের কোনও সমস্যা হয়েছে। সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে জ্যেঠিমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেব।’’ সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে অভিজিৎবাবু দেখেন, স্মৃতিকণাদেবীর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।
একটা জানলা সামান্য খোলা রয়েছে। তা দিয়ে বোঝা যাচ্ছে ভিতরে আলো জ্বলছে এবং পাখা চলছে। কিন্তু কোনও সাড়াশব্দ মিলছে না। এর পর ধাক্কা দিয়ে জানালা খুলতেই নজরে পড়ে বিছানায় পড়ে রয়েছেন স্মৃতিকণাদেবী।

খবর দেওয়া হয় স্থানীয় কাউন্সিলর সুবিমান ঘোষকে। তিনিই বরাহনগর থানায় খবর পাঠান। রাতে সঙ্গীতাদেবী এবং অন্য আত্মীয়েরা আসার পরে দরজা ভেঙে পুলিশ ঢোকে। দেখা যায়, বিছানায় শোয়া অবস্থায় স্মৃতিকণাদেবীর পচাগলা দেহ। এক হাতে ইনহেলারটা ধরা রয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, শ্বাসকষ্ট হতেই ইনহেলার নিচ্ছিলেন তিনি। আর তখনই হৃদরোগে আক্রান্ত হন স্মৃতিকণাদেবী। সুবিমানবাবু বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। কয়েক দিন আগেও ওঁকে আধার কার্ড করিয়ে দিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elderly Woman Decomposed body Baranagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE