প্রতীকী ছবি।
দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় বছরেরও বেশি আগে কেনা হয়েছিল একটি যন্ত্র। ব্যবহার না হওয়ায় এখনও তা পড়ে আছে তালাবন্দি অবস্থায়।
‘স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ’ নামে ওই যন্ত্রটি ফরেন্সিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে লাগে। পরমাণুর শতকরা পরিমাণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই যন্ত্র অপরিহার্য। বেলগাছিয়ায় রাজ্য ফরেন্সিক গবেষণাগারে স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হতে বসেছে ওই যন্ত্রটি।
‘স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ’ হল এমন একটি বিশেষ ধরনের ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ, যা কোনও বস্তুর ছবি তোলে ইলেকট্রন রশ্মি দিয়ে স্ক্যান করার পরে। ইলেকট্রনগুলি পরমাণুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিভিন্ন রকমের সঙ্কেতের জন্ম দেয়, যা বিশেষ ‘ডিটেক্টর’-এর দ্বারা তথ্য সংগ্রহ করে সেই বস্তুর অন্তর্নিহিত অণুর বিভিন্ন তথ্য আমাদের জানায়। ছবিটি তৈরি করা হয় ইলেকট্রন রশ্মির স্থান ও গৃহীত তথ্য থেকে।
যে কোনও রকমের ধাতু, তন্তু বা অজৈব বস্তুর ফরেন্সিক পরীক্ষায় প্রায় একশো শতাংশ ঠিকঠাক ফল পেতে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ দিতে গিয়ে এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘স ম্প্রতি একবালপুরে এক মহিলার বস্তাবন্দি দেহ পাওয়া গিয়েছিল। তদন্তে দেখা গিয়েছে, বস্তার মধ্যে ওই মহিলার গলায় বস্তারই সুতো পেঁচানো ছিল। ওই সুতো প্রকৃতপক্ষে বস্তার সুতো কি না, তা জানতে এই যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করলে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া যাবে।’’
ওই যন্ত্রটির ব্যবহার না হওয়ার পিছনে রাজ্য ফরেন্সিক গবেষণাগারের বিজ্ঞানীদের উদাসীনতাই দায়ী বলে অভিযোগ সেখানকার কর্মীদের একাংশের। যদিও এডিজি (ফরেন্সিক) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই যন্ত্রের মাধ্যমে যে সমস্ত উপাদান পরীক্ষা করা যায়, তেমন কোনও নমুনা পাইনি। সেই কারণেই পরীক্ষা হয়নি। তবে যন্ত্রটি যাতে সচল থাকে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
যদিও রাজ্য ফরেন্সিক গবেষণাগার সূত্রের খবর, ওই যন্ত্রটিকে সচল রাখতে সেই ঘরের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা দরকার। কিন্তু তা না থাকায় কেনার এক বছরের মধ্যেই সেটির ফিউজ় উড়ে গিয়েছিল। ওয়্যার্যান্টির মধ্যে থাকায় যে সংস্থা ওই যন্ত্র বিক্রি করেছিল, তারাই সেটি সারিয়ে দিয়েছিল। বিভাগের এক কর্মীর প্রশ্ন, ‘‘এখন ওই যন্ত্র বিকল হলে সারানোর লোক মিলবে তো?’’
স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে সাধারণত টাংস্টেন ফিলামেন্ট ব্যবহার করা হয়। কারণ, টাংস্টেনের গলনাঙ্ক সর্বাধিক এবং বাষ্প চাপ সর্বনিম্ন। এ ভাবে উৎপন্ন তাপীয় ইলেকট্রন উচ্চশক্তি সম্পন্ন হয় (০.২ কিলো ইলেকট্রন ভোল্ট-৪০ কিলো ইলেকট্রন ভোল্ট)। উৎপন্ন ইলেকট্রন রশ্মিকে কন্ডেনসার লেন্সের সাহায্যে ০.৪ থেকে ৫ ন্যানোমিটার ব্যাসের ক্ষেত্রে ফেলা যায়। প্রাথমিক এই ইলেকট্রন রশ্মি নমুনার উপরে ক্রিয়া করে ক্রমশ শক্তি হারাতে থাকে। এই পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকার সঙ্কেত স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের ডিটেক্টরের সাহায্যে শনাক্ত করা যায় এবং নমুনার বৈশিষ্ট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy