দূষণ: লাগামছাড়া ছটপুজো চলছে রবীন্দ্র সরোবরে। ফাইল চিত্র
প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আগেই। তার পাশাপাশি এ বারের নির্দেশ, পুজোর চত্বরে লাউডস্পিকার, বাজি এবং ফুল নিয়ে ঢোকা যাবে না। মাপতে হবে বায়ুদূষণের মাত্রা। রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো করা নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এমনই একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে। গত বছরও ছট পুজোর আগে রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ রক্ষার জন্য কয়েক দফা নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেগুলিও মেনে চলতে হবে বলে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে।
এ দিন পরিবেশ আদালত বলেছে, ছট পুজোর আগে, পুজো চলাকালীন এবং পরে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সরোবরের জল এবং ওই এলাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা মাপতে হবে। আদালতে উপস্থিত, সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র কৌঁসুলি পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদালত জানায়, নির্দেশ ঠিক মতো মানা হয়েছে কি না, তা জানিয়ে ছট পুজোর পরে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
ছট পুজোয় লাউডস্পিকার, শব্দবাজির দাপটে তটস্থ হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ ছিল, শুধু শব্দ নয়, আতসবাজির দূষণেও সরোবরের পরিবেশ নষ্ট হয়। পুজো দিতে আসা লোকজন জলে প্লাস্টিক এবং অন্য জিনিস ফেলে জল দূষিত করেন। রবীন্দ্র সরোবর জাতীয় হ্রদ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতাধীন। সরোবরের জল এবং আশপাশের পরিবেশও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলে মাছ, কচ্ছপেরা রয়েছে। ওই এলাকার গাছে বহু পাখির বাস। ছট পুজো উপলক্ষে মাত্রাছাড়া দূষণ হলে ওই জীবজগতের ক্ষতি হবে। এই পরিস্থিতিতে সরোবরের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর আর্জি মেনে গত বছর প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা-সহ একাধিক নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
এই মামলায় এ বার যুক্ত হয়েছিল বিহারিদের একটি সংগঠনও। তাদের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে জানিয়েছিলেন, হিন্দুদের ধর্মীয় আচার-আচরণের মধ্যে ছট পুজোই সব থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব। এই পুজোর সব উপকরণই প্রাকৃতিক। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে একাধিক পরিবেশবিদের মতামতও জমা দেন এডুলজি। তাঁর অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই আপত্তি তোলা হচ্ছে।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশাবলী যাতে ঠিক মতো পালন করা হয় সে ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। পুজো দিতে আসা পুণ্যার্থীদের পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতনও করা হবে। যদিও সরোবর চত্বরের বাসিন্দা এবং প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অনেকেই বলছেন, গত বছর নিয়ম লাগু করেও দূষণে পুরোপুরি রাশ টানা যায়নি। এ বার কী হয় সেটাই দেখার।
কলকাতার পাশাপাশি শিলিগুড়িতেও ছট পুজো নিয়ে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। ঠিক হয়েছে, শালুগাড়া নদীর ধার ধরে লালমোহন মৌলিকঘাট হয়ে জলপাই মোড়ের পরিবর্তে এলাকা বাড়িয়ে ছটঘাট তিনবাতি মোড় লাগোয়া নৌকাঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে নদীতে কোনও অস্থায়ী সেতু বা ঘাট করা যাবে না। ফেলা যাবে না বালির বস্তা। তাই ঘাটকেই আরও বড় করে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কাজে পূর্ত দফতর, এসজেডিএ এবং পুরসভা— সবাই মিলে সহযোগিতা করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy