Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শব্দবাজি রোধে ‘ডেঙ্গি মডেলের’ দাবি

আগে বাড়িতে জল জমিয়ে রাখলেও কলকাতা পুর আইনের ৪৯৬ নম্বর ধারায় জরিমানা বা অন্য কোনও শাস্তির নিদান ছিল না। এর জন্য বড় জোর তিন বার নোটিস পাঠাত পুরসভা।

সশব্দে: বাড়ির ছাদে ফাটছে বাজি। ফাইল চিত্র

সশব্দে: বাড়ির ছাদে ফাটছে বাজি। ফাইল চিত্র

শব্দবাজি রোধে ‘ডেঙ্গি মডেলের’ দাবি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

ডেঙ্গি রোধে গত বছরই পুর আইনে সংশোধনী এনেছে কলকাতা পুরসভা। এ বার শব্দবাজির দাপট আটকাতে রাজ্য সরকারের হাতিয়ার হোক সেই ‘ডেঙ্গি-মডেল’, এমনটাই চাইছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ।

আগে বাড়িতে জল জমিয়ে রাখলেও কলকাতা পুর আইনের ৪৯৬ নম্বর ধারায় জরিমানা বা অন্য কোনও শাস্তির নিদান ছিল না। এর জন্য বড় জোর তিন বার নোটিস পাঠাত পুরসভা। ফলে পুর আদালতে আবেদন করে কোথাও ৫০ টাকা, কোথাও বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করতে পেরেছে পুরসভা। কিন্তু গত বছর পুর আইনের সংশোধনীতে ৪৯৬ (এ) নম্বর ধারায় পুরসভাকে সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়। কারণ, পুর কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারেন, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কঠোর শাস্তির নিদানই একমাত্র উপায়।

এ বার সেই ‘ডেঙ্গি-মডেলের’ পথে হেঁটে শব্দবাজি বা শব্দদূষণের ক্ষেত্রে কেন কড়া শাস্তি বা ‘স্পট ফাইনের’ ব্যবস্থা করা হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, শব্দবাজির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল বা এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও গত পাঁচ বছরে তেমন কোনও শাস্তি কাউকে দেওয়া হয়নি।

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘স্পট ফাইন চালু করতেই হবে। আমরা ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিয়েছি। খসড়া প্রস্তাবও তৈরি করা হচ্ছে। স্পট ফাইনের বিষয়টি বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকারের কাছে তিন-চার দিনের মধ্যে চিঠি পাঠাব।’’ পরিবেশকর্মীরা

জানাচ্ছেন, শব্দবাজি তৈরি, সরবরাহ, বণ্টন থেকে বাজি ফাটানো, প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশি হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তার পরেও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের এ নিয়ে মনোভাবটা হল— যেহেতু শব্দবাজি সাময়িক, তাই কয়েক দিন একটু ‘হজম’ করে নিলেই হল!

কেন এই ‘উদাসীনতা’? এক পরিবেশকর্মীর ব্যাখ্যা, ডেঙ্গিতে প্রাণহানি হয় বলেই সরকার তা নিয়ে বর্তমানে সচেতন হয়েছে। কিন্তু শব্দবাজির ক্ষতি চোখে দেখা যায় না বলেই এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে গা-ছাড়া মনোভাব

রয়েছে। ওই পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন প্রবল ভাবে সক্রিয়, অথচ তার পরেও শব্দ-তাণ্ডব হয়ে চলেছে— এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? পুলিশি তদন্তে অচেনা অপরাধীরাও ধরা পড়ে, আর এখানে কোন কোন জায়গা শব্দদূষণের হটস্পট, তা তো জানাই! তার পরেও বছরের পর বছর এমন চলে কী ভাবে!’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার বলছেন, ‘‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গই পথিকৃৎ ছিল! অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখন আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। পুলিশ-প্রশাসনকে এটা বুঝতে হবে, বাবা-বাছা করে আর এটা আটকানো যাবে না! কড়া শাস্তি চাই।’’

যদিও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, কোনও কারখানা বা নির্দিষ্ট জায়গায় শব্দবাজি তৈরি হলে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়। কিন্তু বাড়ি-বাড়ি অসংগঠিত ভাবে শব্দবাজি তৈরি হলে পদক্ষেপ করা মুশকিল হয়ে যায়। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘সারা দেশে শব্দবাজির মাত্রা যেখানে ১২৫ ডেসিবেল, সেখানে অনেক লড়াই করে আমরা তা ৯০ ডেসিবেলে রাখতে পেরেছি। এক বারও বলছি না যে সেটাই যথেষ্ট। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হয়।’’ তার পরেও কী করে প্রতি বছর শব্দতাণ্ডব চলতেই থাকে? সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি প্রশাসনের ওই কর্তা। তা হলে কি এ বার ‘স্পট ফাইনের’ বিষয়টি বিবেচনা করা হবে?

পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘আগামী মঙ্গলবার বিশেষ বৈঠক ডেকেছি। সেখানে স্পট ফাইন-সহ সমস্ত বিষয়েই আলোচনা হবে। শব্দবাজি নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য প্রতিটি থানাকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE