Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মেয়র কে? পুর নথিতে ডামাডোল!

মেয়র তিনি আগেই হয়ে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মাত্রই। তার পরে মেয়র পদের নির্বাচন-সহ আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল মাত্র। সেই সব পর্বও মিটে গিয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেল।

৭ তারিখের পুর নথিতে মেয়র হিসেবে সই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের (চিহ্নিত)। এমন একাধিক নথি নিয়েই টানাপড়েন।

৭ তারিখের পুর নথিতে মেয়র হিসেবে সই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের (চিহ্নিত)। এমন একাধিক নথি নিয়েই টানাপড়েন।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০১
Share: Save:

মেয়র তিনি আগেই হয়ে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মাত্রই। তার পরে মেয়র পদের নির্বাচন-সহ আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল মাত্র। সেই সব পর্বও মিটে গিয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেল।

কিন্তু কলকাতা পুরসভার নথি অনুযায়ী এখনও তিনি মেয়র নন! শুধুই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী! শোভন চট্টোপাধ্যায়ই এখনও মেয়র। কলকাতার ৩৮তম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে গত ৭ ডিসেম্বর ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে মেয়র পরিষদের প্রথম বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠকের একাধিক নথিতে ফিরহাদ শুধুমাত্র পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী, মেয়র নন। আর সেখানে অনেক ‘প্রস্তাব নথি’-তে মেয়র হিসেবে সই রয়েছে শোভনের।

পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, যে সমস্ত নথিতে মেয়র হিসেবে শোভনের সই রয়েছে, সেগুলিতে মেয়র পদে থাকাকালীনই সই করেছিলেন তিনি। পরে সেগুলি মেয়র পরিষদের বৈঠকে পাশ করানো উচিত ছিল। পরবর্তীকালে মেয়র পদ সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের ডামাডোলে আর নথিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা যায়নি। কিন্তু অন্য অনেক নথিতেই ফিরহাদকে দিয়ে সই করানো হয়েছে।

যদিও পুর প্রশাসনের একাংশের প্রশ্ন, আগেই হোক বা পরে, যিনি বর্তমানে মেয়র পদে নেই, তাঁর স্বাক্ষরিত কোনও নথি কী ভাবে প্রস্তাব হিসেবে গৃহীত হতে পারে? শুধু তা-ই নয়, সেটি কী ভাবে মেয়র পরিষদের বৈঠকে উঠতে পারে? কারণ, তত ক্ষণে তো আনুষ্ঠানিক ভাবেই আগের মেয়রের হাত থেকে নতুন মেয়রের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়ে গিয়েছে। নতুন মেয়রের নামও ঘোষিত হয়ে গিয়েছে! পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘যিনি আর পদেই নেই, তাঁর সই পুরসভার নথিপত্রে কী ভাবে গ্রাহ্য হতে পারে? আইনগত কোনও বাধার থেকেও বড় কথা, এটা যে হয় না, সাধারণ বুদ্ধিতেই তো সেটা বোঝা যায়।’’

পুর নথিতে এখনও তিনি মেয়র, শুনে কিছুটা অবাকই হয়েছেন শোভন। যদিও তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোন নথিতে কী সই রয়েছে, আমি তা জানি না।’’ এ বিষয়ে জানতে ফিরহাদ বলেন, ‘‘আগের নথিতে তো ওঁর সই থাকবেই। কিন্তু ৩ তারিখের পর থেকে সবই আমার সই।’’ যদিও দেখা যাচ্ছে, ৭ তারিখের মেয়র পরিষদের বৈঠকের একাধিক নথিতে মেয়র হিসেবে রয়েছে শোভনেরই সই।

শুধুই কি নথি! কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইটেও মেয়রদের তালিকায় ফিরহাদের নাম এখনও সংযোজিত হয়নি। যদিও ওয়েবসাইটের ‘হোম পেজ’-এ নতুন মেয়র হিসেবে ফিরহাদের ছবি দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে তাঁর নব নির্বাচিত পারিষদদেরও নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ‘মেয়রস অব কলকাতা’-র ক্রমতালিকা শোভনেই থেমে গিয়েছে। সেখানে এখনও অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি ফিরহাদের।

পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম বৈঠকে অন্তত দু’টি প্রস্তাব-নথিতে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বৈঠকের কথা বলা হয়েছে। পুরসভার ৯ নম্বর বরোর অন্তর্গত ওয়ার্ডগুলির বিভিন্ন বস্তিতে পানীয় জল সরবরাহের পরিকাঠামো উন্নত করার জন্য নির্দিষ্ট করে কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় দে়ড় কোটি টাকা। প্রস্তাবিত

প্রকল্পগুলি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে বলা হচ্ছে। আর একটি প্রস্তাবে ওই বরোরই অধীনে পুর পরিষেবা বৃদ্ধির জন্য মোট ৩৯টি প্রকল্পের প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে। সেগুলিও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। তাতে অবশ্য অসুবিধার কিছু নেই, জানাচ্ছে পুর প্রশাসনের একাংশ। কারণ, ফিরহাদ ওই দফতরের মন্ত্রীও। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে তাঁকে শুধুমাত্র মন্ত্রী বলায়!

প্রসঙ্গত, ওই বরোরই ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হওয়ার জন্য আগামী ৬ জানুয়ারি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন ফিরহাদ। প্রসঙ্গত, সংশোধিত পুর আইনে কাউন্সিলর না হয়েও মেয়র হতে পারেন কেউ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রণব বিশ্বাস পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর জায়গাতেই ভোটে দাঁড়াচ্ছেন ফিরহাদ।

যদিও মেয়র পদ নিয়ে এই টানাপড়েনের অনেক আগে থেকেই ওই বরোর অধীনস্থ যত পুর প্রকল্প রয়েছে, তা নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছিলেন ফিরহাদ। শোভন মেয়র থাকাকালীনই। বরোর পানীয় জল, নিকাশি, বস্তি উন্নয়ন থেকে শুরু করে কী কী প্রকল্পের কাজ করতে হবে, কত দ্রুত কাজ করতে হবে, সে সম্পর্কে সমস্ত নির্দেশই ছিল তাঁর। ফলে মেয়র পরিষদের প্রথম বৈঠকে নতুন মেয়রের ৯ নম্বর বরো যে আলাদা গুরুত্ব পাবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী!

কিন্তু সমস্যা থেকে গিয়েছে ‘প্রাক্তন’ ও ‘বর্তমান’-এ। কারণ, ওই নথিগুলিতেই বলা হচ্ছে, প্রকল্পগুলি মেয়র অনুমোদন দিয়েছেন গত ২ নভেম্বর। অর্থাৎ, যখন ফিরহাদ মেয়র হননি, তখনও মেয়র শোভন। একই ভাবে অনেক নথিতে আবার শোভনের সই রয়েছে। তা ট্যাংরার কসাইখানায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের প্রস্তাবই হোক বা পুরসভার বায়ো-মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের প্রস্তাব! ফলে কখনও ফিরহাদ, কখনও শোভন— এমনটাই চলছে। ঘটনাচক্রে, ফিরহাদের নেতৃত্বে প্রথম মেয়র পরিষদের বৈঠকের প্রস্তাবগুলি এ ভাবেই ‘প্রাক্তন’ ও ‘বর্তমান’-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE