Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Extortion

দাদা পাঠিয়েছে, টাকা দিন! জেলে বসেই তোলাবাজি লেকটাউন-দমদম পার্কে

জেলবন্দি গ্যাংস্টারের একের পর এক ফোন সেই আতঙ্কই জাগিয়ে দিয়েছে এই এলাকার আম আদমি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের মনে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সিজার মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ১৪:১০
Share: Save:

ফের গুলির লড়াই, তোলাবাজি, গ্যাংওয়ারের আতঙ্ক কি ফিরে আসছে লেকটাউন-দমদম পার্ক এলাকায়?

গত কয়েক মাসে টাকা চেয়ে জেলবন্দি গ্যাংস্টারের একের পর এক ফোন সেই আতঙ্কই জাগিয়ে দিয়েছে এই এলাকার আম আদমি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের মনে।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। মূলত লেকটাউনের সীমানায় দমদম পার্ক এলাকা। গত তিন মাসে ওই এলাকার একের পর এক নির্মাণ ব্যবসায়ী ফোন পাচ্ছেন ‘দাদা’-র কাছ থেকে। তিন লাখ থেকে দশ লাখ, বিভিন্ন অঙ্কের টাকার দাবি। আর তা না দিলে ‘উড়িয়ে’ দেওয়ার শাসানি। তাই ‘দাদা’ জেলবন্দি হলেও মনে শান্তি নেই ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষের।

পুলিশ সূত্রে খবর, ক’দিন আগেই ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুনীল ঝা(নাম পরিবর্তিত)-র কাছে অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের ওপারের ব্যক্তি নিজেকে গেঁদু হিসাবে পরিচয় দেয়। কয়েক বছর আগেও ওই এলাকায় ত্রাস ছিল ওই গেঁদু বা গৌতম বড়াল। প্রতি সপ্তাহেই গেঁদু বনাম রাজেশ নায়েকের দলের লড়াইয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন এলাকার মানুষ।

সুনীলকে গেঁদু জানায়, তার বাড়িতে লোক পাঠাচ্ছে। সুনীল পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁর বাড়িতে হাজির হয় এক অপরিচিত যুবক।

সেই যুবক বলে “দাদা পাঠিয়েছে। বলেছে তিন লাখ দিতে হবে।” যুবকের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েন সুনীল। বলেন, তিনি গরীব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাবেন? তাতে ওই অচেনা যুবক ফোনে সুনীলকে গেঁদুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। পুলিশকে সুনীল জানিয়েছেন, “ফোনের ওপার থেকে গেঁদু শাসাতে থাকে। বলে হয় ওই টাকা দিতে হবে নইলে তাঁর বাড়ির সামনের জমি ছেড়ে দিতে হবে।” আর সেই কথা না মানলে বিপদ, সাবধান করে দিয়ে যায় গেঁদুর শাগরেদ।

আরও পড়ুন: কী বলছে কলকাতা পুলিশ, ধরা পড়ছে খোলাবাজারের ওয়াকিটকিতে!

সুনীলকে এরপর বেশ কয়েকবার ফোন করে শাসায় গেঁদু। তারপর লেকটাউন থানায় অভিযোগ(৮৭১/১৮)দায়ের করেছেন তিনি।এই কুখ্যাত গ্যাংস্টারের বিরুদ্ধে একাধিক খুন, তোলাবাজি, খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালে তার মূল প্রতিপক্ষ রাজেশের বাড়িতে হামলা চালাতে গিয়ে ধরা পড়ে সে। এখন প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি সে। কিন্তু জেলে গিয়েও যে দাপট তার আদৌ কমেনি, তা স্পষ্ট এই ফোন থেকে। পুলিশ সূ্ত্রে খবর, এই গ্যাংস্টার এতটাই বেপরোয়া যে লোকজনকে ফোন করে সরাসারি জেলে গিয়ে দেখা করতে বলছে।

সুনীলের মত খুব সাধারণ মানুষকে শাসিয়ে টাকা তোলার পাশাপাশি, গত কয়েকমাসে ওই এলাকার একাধিক মাঝারি মাপের প্রোমোটার ফোন পেয়েছেন জেলে থাকা ওই কুখ্যাত অপরাধীর কাছ থেকে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সমীর চট্টোপাধ্যায়ও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “এলাকার কিছু প্রোমোটার গেঁদুর ফোন পেয়েছেন, এটা আমি শুনেছি। কিন্তু কেউ সরাসরি আমার কাছে এসে কোনও অভিযোগ জানায়নি।”

সমীরবাবু ছাড়াও ওই এলাকার আরও এক কাউন্সিলর স্বীকার করেন, গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে টাকা চাইছে গেঁদু। তিনি বলেন সম্প্রতি গেঁদুর কিছু শাগরেদ এলাকায় থাকতে শুরু করেছে। তাদের দিয়েই আবার পুরোন দল নতুন করে তৈরির চেষ্টা চালাছে। এই কাউন্সিলরের দাবি, অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে টাকা দিচ্ছেনও। আর তাই সাহস বাড়ছে গেঁদুর।তিনি দাবি করেন, লেকটাউন থানার পুলিশ সমস্তটাই খুব ভাল করে জানে।

গেঁদুর চির প্রতিদ্বন্দ্বী রাজেশ নায়েকের সিণ্ডিকেটের সঙ্গে এক সময়ে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন,“রাজেশ ছাড়া পেয়েছে। রাজেশ এখন দলবল নিয়ে ওডিশা চলে গেলেও, গেঁদু জানে রাজেশ এলাকা দখল করতে নামবে। তাই ও মরিয়া। জেল থেকেই এলাকার কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকেও যোগাযোগ করছে।” বিধাননগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আমরা গেঁদুর দলবলকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। জেল কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।”

এলাকার সাধারণ মানুষ বহু গ্যাংওয়ারের সাক্ষী। এক সময়ে লেকটাউন-বাঙুর-দমদম পার্ক এলাকা কুখ্যাত ছিল পিনাকী, হাত কাটা দিলীপের মতো গ্যাংস্টারদের জন্য। সেই সময় বার বার এই গ্যাংস্টারদের সঙ্গে তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের ওঠাবসার কথাও সামনে এসেছিল। সেই দিলীপদের হাত ধরে ওঠা রাজেশ-গেঁদুদের বাড়বাড়ন্তর পিছনে রাজনৈতিক সমীকরণ যে সবসময় সক্রিয় তা এলাকার মানুষ ভালই জানেন। তাই অশনি সংকেত দেখছেন সুনীলের মত ছা-পোষা মানুষরা।

আরও পড়ুন: অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার ২

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Extortion Gangster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE