Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ময়না-তদন্তেই কি চোখ সেলাই, প্রশ্ন

গাড়ির ধাক্কায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে ওই শিশুর মৃত্যুর পরে ময়না-তদন্ত করা হয়েছিল এসএসকেএমের মর্গে। ময়না-তদন্তের পরে শিশুটির দেহ যখন বাড়িতে আসে, সকলে দেখেন তার চোখ দু’টি সেলাই করা। যদিও গাড়ির ধাক্কায় ফয়জলের চোখে আঘাত লাগেনি বলেই দাবি পরিবারের।

এ ভাবেই সেলাই করা হয়েছে ফয়জল আলির চোখ। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই সেলাই করা হয়েছে ফয়জল আলির চোখ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫১
Share: Save:

ময়না-তদন্তে কি চোখও সেলাই করা হয়?

বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, সাধারণ ভাবে তা হওয়ার কথা নয়। যদিও তেমনটাই হয়েছে তিন বছরের শিশু ফয়জলের ক্ষেত্রে!

গাড়ির ধাক্কায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে ওই শিশুর মৃত্যুর পরে ময়না-তদন্ত করা হয়েছিল এসএসকেএমের মর্গে। ময়না-তদন্তের পরে শিশুটির দেহ যখন বাড়িতে আসে, সকলে দেখেন তার চোখ দু’টি সেলাই করা। যদিও গাড়ির ধাক্কায় ফয়জলের চোখে আঘাত লাগেনি বলেই দাবি পরিবারের।

ময়না-তদন্তের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, সচরাচর ময়না-তদন্তে এমন ভাবে চোখ সেলাই করা হয় না। কিন্তু তা হলে কামারহাটির ওই শিশুটির ক্ষেত্রে সেটা হল কেন? মৃত ছেলের সেলাই করা চোখের ছবি পরিচিত কয়েক জনকে দেখান বাবা ফিরোজ আলি। সকলেই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করায় বৃহস্পতিবার ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ফয়জলের পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, শিশুটির চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এমন একটি গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের তরফে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। পরিবারও আমার কাছে কোনও অভিযোগ দেয়নি।’’ যদিও লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক ভাবে তদন্তও শুরু হয়েছে। বিষয়টি মেডিক্যাল কাউন্সিলকে জানানো হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হবে।’’

এ ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। একটি শিশুর চোখ তুলে নেওয়ার মতো অভিযোগ বৃহস্পতিবার ভবানীপুর থানায় দায়ের হলেও এ দিন বিকেলেও তা রঘুনাথবাবু জানতে পারলেন না কেন?

ময়না-তদন্তে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে মাথার খুলি ভেঙে চুরমার হয়ে গেলে চোখ সামনের দিকে বেরিয়ে আসে। তখন বিকৃত অবস্থা ঢাকতে চোখটা সেলাই করে দেওয়া হয়।’’ কিন্তু ফয়জলের ছবি দেখে ওই চিকিৎসকও বুঝে উঠতে পারছেন না, কী কারণে চোখ দু’টি সেলাই করা হল।

পুলিশ সূত্রের খবর, কামারহাটি লুটবাগানের বাসিন্দা ফিরোজ আলি ও রূপসানা খাতুনের ছোট ছেলে ফয়জল। গত ৭ জুলাই শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বড় মেয়ে ও ছেলেকে টিউশনে দিয়ে ফিরছিলেন রূপসানা। সে সময়ে বাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে লজেন্স খেতে থাকা ফয়জল মায়ের কাছে ছুটে যেতে যায়। আর তখনই বিটি রোডের দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা মারে। কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে ফয়জল। তার কাকা আজাদ আলি জানান, এর পরেই শিশুটিকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা সিটি স্ক্যান করে জানান, মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছে। পিজিতে নিয়ে যেতে হবে।

ওই রাতেই ফয়জলকে এসএসকেএমে ভর্তি করেন পরিজনেরা। কিন্তু রবিবার ভোর ৪টে নাগাদ তার মৃত্যু হয়। আজাদের অভিযোগ, ‘‘ভাইপো মারা যাওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে জোর করে বৌদিকে দিয়ে সই করিয়ে নেন ভবানীপুর থানার এক অফিসার। এর পরেই দেহটা ঠান্ডা ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু চার ঘণ্টা হওয়ার আগেই ঠান্ডা ঘরে নিয়ে যাওয়া হল কেন, জানি না।’’ তিনি জানান, ময়না-তদন্তের পরে রবিবার বিকেলে দেহ বাড়িতে এলে দেখা যায়, ফয়জলের চোখ দু’টি সেলাই করা। তাঁদের সন্দেহ হলেও তখন কবর দিয়ে দেওয়া হয় দেহটা। পরে পরিচিতদের পরামর্শে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে পরিবার।

আজাদ বলেন, ‘‘যিনিই ছবি দেখছেন, বলছেন চোখ তুলে নিয়ে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। সত্যিটা জানতে পুলিশের কাছে গিয়েছি।’’ তাঁর আরও দাবি, ওই শিশুর মুখ কোনও রকম বিকৃত হয়নি। চোখও বাইরে বেরিয়ে আসেনি। তা হলে সেলাই করার কী প্রয়োজন পড়ল?

শিশুর পরিবার থেকে পরিচিত, সকলের কাছে এই প্রশ্ন উঠলেও এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি পুলিশ বা হাসপাতালের কাছ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Post-Mortem Child death SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE