প্রেমে ব্যর্থতাও যে এত উপকারে লাগতে পারে, তা এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না লালবাজারের গোয়েন্দাদের!
দক্ষিণ শহরতলিতে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় নাজেহাল হচ্ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডাকাতি-দমন শাখার গোয়েন্দারা। রীতিমতো চাপও আসছিল উপরমহল থেকে। পুলিশ সূত্রের খবর, জানা যায় ই এম বাইপাস এবং রাজারহাটের কিছু পানশালায় নতুন কিছু যুবক টাকা ওড়াচ্ছে। কারা তারা? সেই খবর নিতে গিয়েই জানা যায়, গোয়েন্দাদের এক ‘সোর্স’-এরও ওই সব পানশালায় নিত্য আনাগোনা রয়েছে। পুলিশ তাকে এ ব্যাপারে কাজে লাগার কথা বলতেই সে অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবং তার দেওয়া খবরের ভিত্তিতেই শুক্রবার রাতে বাইপাস সংলগ্ন পঞ্চান্নগ্রামের ফ্ল্যাট থেকে একটি ডাকাত চক্রের তিন জনকে ধরেছে পুলিশ। এই চক্রে জড়িত এক মহিলাকেও ধরা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, ধৃতদের নাম আসলাম শেখ, মহম্মদ জিয়া শেখ, লিটন শেখ ও মুনমুন মজুমদার। রিজেন্ট পার্ক, হরিদেবপুর ও গল্ফগ্রিনের ডাকাতির ঘটনায় এরা জড়িত। জিয়া বাংলাদেশের বাসিন্দা।
কিন্তু এই ধরপাকড়ে প্রেমের যোগ কোথায়? গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছে, সুন্দরী মুনমুন ই এম বাইপাস ও রাজারহাটের বিভিন্ন পানশালায় নাচগানের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। পানশালায় যাতায়াত করতে করতে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল পুলিশের ওই ‘সোর্স’। বছর খানেক আগে মুনমুনের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ায় সে আশা করেছিল, প্রেমে এ বার সাফল্য মিলবে। কিন্তু তার আশায় জল ঢেলে দেয় আসলাম। পুলিশের দাবি, বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে পঞ্চান্নগ্রামের ওই ফ্ল্যাটে এক সঙ্গে থাকতে শুরু করে মুনমুন ও আসলাম। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আসলামের উপরে প্রতিশোধ নিতে চাইছিল ছেলেটি। নিজে না নিয়ে পুলিশকে দিয়ে সেই কাজ করালো ও।’’ পুলিশের দাবি, মুনমুন নিজে ডাকাতি করতে না গেলেও আসলামরা তার গাড়ি ব্যবহার করত।
গোয়েন্দারা বলছেন, শুক্রবার রাতে যখন পুলিশ হানা দেয়, তখনও আসলামদের দল একটি ডাকাতি করার জন্য বেরোচ্ছিল। আচমকা পুলিশকে দেখে চমকে যায় তারা। লিটন ওই ফ্ল্যাটের উপর থেকে নীচে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও ধরা পড়ে গিয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে একটি বন্দুক, পাঁচটি ভোজালি ও তিনটি গুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মিলেছে ছেনি, হাতুড়িও। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মুনমুনের গাড়িটিও। এই চক্রে জড়িত আরও ৮ জনকে খুঁজছে পুলিশ। যার মধ্যে রাজু নামে এই চক্রের পাণ্ডাও রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আসলাম এর আগেও চুরি, ছিনতাইয়ে গ্রেফতার হয়েছে। এই চক্রটি আগে বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করত। সম্প্রতি অস্ত্র জোগাড় করে ডাকাতিতে নেমেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, হরিদেবপুর, রিজেন্ট পার্ক এবং গল্ফগ্রিনের তিনটি ডাকাতির ক্ষেত্রেই গ্রিল কেটে বাড়িতে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। ভিতরে ঢোকার পরে অস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে ডাকাতি করত তারা। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ধৃত আসলাম বা ওই দলের বেশির ভাগ সদস্য আগে গ্রিল কেটে চুরিতে সিদ্ধহস্ত ছিল। পরে হাতে অস্ত্র আসায় ডাকাতি শুরু করে তারা।
‘অভিযানে’ বেরিয়ে মোবাইল ব্যবহার না করা এদের বৈশিষ্ট্য। ঘনঘন মোবাইলের সিমকার্ডও বদলাত। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, এই দলটি শুধু কলকাতা পুলিশ এলাকাতেই নয়, ব্যারাকপুর ও বিধাননগর কমিশনারেট এলাকাতেও কয়েক বার হানা দিয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকাগুলিতে যে সব চুরি-ডাকাতি হয়েছে, তার সঙ্গে এদের যোগাযোগ কতটা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy