Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শহরের বুকে এক টুকরো গোয়া

মাছশিকারীদের বেশে কোঙ্কনি ও ইংরেজিতে গোয়ার ঐতিহ্যশালী মান্ডোজ নাচগানে মাতালেন লুইস ফার্নান্ডেজ, বেটি ডি’গামা, স্যালি ডি’সুজারা। শনিবারের সন্ধ্যায় ধর্মতলার ‘সেক্রেড হার্ট অব জিসাস’ গির্জার উঠোনে উৎসবের মেজাজটা তাঁরাই বেঁধে দিলেন।

হুল্লোড়: ‘ফিস্ট ডে’ উপলক্ষে নাচে-গানে মাতলেন গোয়ান সমিতির সদস্যেরা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

হুল্লোড়: ‘ফিস্ট ডে’ উপলক্ষে নাচে-গানে মাতলেন গোয়ান সমিতির সদস্যেরা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

সমুদ্রের নোনা বাতাস ধারে-কাছে নেই ঠিকই! তবে নারকেল গাছশোভিত বেলাভূমির ছবি জ্বলজ্বল করছে রংচঙে গোয়ান শার্টের বুকে।

মাছশিকারীদের বেশে কোঙ্কনি ও ইংরেজিতে গোয়ার ঐতিহ্যশালী মান্ডোজ নাচগানে মাতালেন লুইস ফার্নান্ডেজ, বেটি ডি’গামা, স্যালি ডি’সুজারা। শনিবারের সন্ধ্যায় ধর্মতলার ‘সেক্রেড হার্ট অব জিসাস’ গির্জার উঠোনে উৎসবের মেজাজটা তাঁরাই বেঁধে দিলেন। উপলক্ষ গোয়ার ইতিহাসে জড়িয়ে থাকা সন্ত ফ্রান্সিস জেভিয়ারের ‘ফিস্ট ডে’ উদ্‌যাপন। ৩ ডিসেম্বর দিনটি পালন করা হলেও শহরের ‘গোয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’-এর হুল্লোড়ে ঢাকে কাঠি পড়ল এক দিন আগেই। উপাসনা-পর্ব চুকতে সামাজিক মিলনমেলার চেহারাটাই বড় হয়ে উঠল।

গোয়ান সমিতিটির সদস্য এখন ৩২০-৩৩০টি পরিবার। শহরে আছেন আরও শ’দুয়েক ক্যাথলিক খ্রিস্টান গোয়ান। ইদানীং বচ্ছরকার উৎসবে তাঁদের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বা বাঙালি বন্ধুদেরও দেখা যায়। নৈশভোজের মেনুতে ঢুকে পড়ছে নানা বাঙালি পদ।

ধর্মতলার লরেটো ডে স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা অরুণা গোমস হাসছিলেন, ‘‘সন্ত জেভিয়ারের দিনটা গোয়ানদের কাছে দুর্গাপুজোর মতো! গোয়া থেকে দূরে থাকলেও এ হল শিকড়ে ফেরার দিন।’’ বাস্তবিকই গির্জা-চত্বরের চেহারাটা তত ক্ষণে পুজোর দিনে রাঁচি কী সিমলার দুর্গাবাড়ি কিংবা পুণে-বেঙ্গালুরু-বস্টনে বাঙালিদের কোনও জমজমাট পুজো মণ্ডপের মতো। কলকাতায় বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষা-ধর্মের ছোট-ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে গোয়ানরা বরাবরই আমুদে বলে পরিচিত। সেজেগুজে মান্ডোজ নাচের পরে জমিয়ে নৈশভোজের আগে আর এক প্রস্থ নাচাগানা শুরু হল। পবিত্র দিনে গোয়ার পিলার থেকে আসা ধর্মযাজকদের আপ্যায়নে অ্যাসোসিয়েশন কর্ত্রী অরুণাকে ব্যস্ত থাকতে হলেও বাকিরা দল বেঁধে মজা করতে কসুর করলেন না।

১৬ বছর আগে কলকাতার ব্যাঙ্ক থেকে অবসরের পরে গোয়ায় চলে যান ফ্রান্সিস ভাজ। পুরনো শহরে পুরনো সহকর্মী ডেবরা সালদানহাকে দেখে নাচের ফ্লোরে টেনে নিয়ে গেলেন তিনি। নাচের তালে কনুইয়ের কাছটা পাকড়ে নরনারীর ‘মেক্সিকান শাফল’-এর সময়ে গান ধরলেন একদা এ শহরের ব্যান্ডের দলে কি-বোর্ড বিশারদ লেসলি ডি’গামা। কেক-কুকি খ্যাত সালদানহা পরিবার, পশ্চিমী বাদ্যযন্ত্র বিপণীর মালিক ব্রাগাঞ্জা-রেনল্ডসরা দল বেঁধে উৎসবে সামিল।

‘‘আগে গির্জায় ঠাসাঠাসি ভিড় হতো, এখন অনেকে গোয়া বা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন,’’ অ্যাসোসিয়েশনের সোশ্যাল সেক্রেটারি প্যাটসি ফার্নান্ডেজের স্বরে বিষাদের ছোঁয়া। তাঁর দুই পুত্র মুম্বই ও অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হলেও এই বয়সে চেনা শহর ছেড়ে থাকা সইবে না বলে তাঁর মনে হচ্ছে। ডেবরা সালদানহার বাবা, ৮৩ বছরের ডেনজিল কলকাতার গোয়ানদের মধ্যে ত্রিকালদর্শী পুরুষ। মেয়ের মন খারাপ, এমন দিনে বাবা আসতে পারলেন না!

গানবাজনার তালে তালে অবশ্য বেশি ক্ষণ মিইয়ে থাকা যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE