ঋতুস্রাবের সময়ে শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল এক শিক্ষিকার। কিন্তু স্কুলে সংস্কারের কাজ চলায় ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে শিক্ষিকাদের শৌচালয়! ফলে স্কুল থেকে বেরিয়ে কিছুটা দূরে এক পরিচিতের বাড়িতে যেতে হয় তাঁকে।
খাস কলকাতা শহরের কসবা চিত্তরঞ্জন হাইস্কুল (উচ্চ-মাধ্যমিক) সম্পর্কে এমন অভিযোগ শুনে তাজ্জব শিক্ষামহল। অভিযোগ, সেখানে সংস্কারের কাজ চলায় শৌচালয় ব্যবহার করতে পারছেন না শিক্ষিকারা। যার জেরে চলছে নিত্য দুর্ভোগ। সেই ভোগান্তির কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই স্কুলেরই এক শিক্ষিকা। অভিযোগকারী ওই শিক্ষিকার বক্তব্য, স্কুলে সংস্কারের কাজ চলার জন্য শৌচালয়ও ব্যবহার করতে পারছেন না তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘গত ১২ অক্টোবর ঋতুস্রাবের সময়ে
শৌচালয়ে যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্কুলের শৌচালয় ব্যবহার করার অবস্থায় ছিল না। কারণ, শৌচালয়টির দরজাই বন্ধ করা যায় না। এ দিক-সে দিকে দেওয়ালের সিমেন্টের ভাঙা অংশ পড়ে রয়েছে। গোটা শৌচালয়টি ভিজে। স্যাঁতসেঁতে হয়ে রয়েছে। জল-কাদায় মেঝে পিছল হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে তেমনই দুর্গন্ধ বেরোয় অপরিষ্কার শৌচালয়টি থেকে। ফলে স্কুলের কাছাকাছি এক পরিচিতের বাড়ি যেতে বাধ্য হই। শহরের একটি স্কুলে এমন ধরনের পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না।’’ বাইরে শৌচালয় ব্যবহার করতে গিয়ে ফিরতে দেরি হওয়ায় তাঁকে স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। ওই স্কুলেরই আর এক শিক্ষিকার অভিযোগ, ‘‘শৌচালয়ের অবস্থা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এমন অপরিচ্ছন্ন জায়গায় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ স্কুলে পঠনপাঠনের পরিকাঠামোর পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক শৌচালয় থাকা প্রাথমিক শর্ত। সেখানে খাস কলকাতা শহরে বসে এতটা আপস কেন করতে হবে, সেই প্রশ্নই তুলেছেন শিক্ষিকারা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় অবশ্য শিক্ষিকাদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, স্কুলের নীচের একটি শৌচালয়ে কাজ চলছে। কিন্তু প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষিকাদের ব্যবহারের জন্য তার পাশে আরও একটি শৌচালয় রয়েছে। সেই শৌচালয়টি সাধারণত তালা বন্ধ থাকে। তবে তার চাবি অফিসেই রাখা থাকে। এ ছাড়াও উপরে আরও একটি শৌচালয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় চার-পাঁচ দিন শৌচালয়ে সংস্কারের কাজ হয়েছে। তার জেরে সমস্যা হওয়ার কথা কেউ আমাকে জানাননি। সংস্কারের কাজ শুরুর আগে সকলের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছিল।’’
শিক্ষিকাদের অবশ্য বক্তব্য, তালা বন্ধ থাকা এমন কোনও শৌচালয়ের কথা তাঁদের জানাই নেই। আর উপরের শৌচালয়টি শিক্ষকেরাও ব্যবহার করেন। তাঁরা জানান, সেই শৌচালয়টি আয়তনে এতই ছোট যে, মহিলাদের অনেক সময়েই অসুবিধে হয়। বিশেষ করে ঋতুস্রাবের সময়ে ওই শৌচালয় ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। দফতরের কর্তাদের অনিন্দ্যবাবু জানিয়েছেন, বিকল্প শৌচালয় সব সময়েই ছিল। এ ছাড়া, পুজোর ছুটির পরে যখন স্কুল খুলবে, তখন সব শৌচালয়ই ব্যবহারের উপযুক্ত থাকবে।
এই অভিযোগের কথা শুনে নারী আন্দোলনের কর্মী শ্বাশতী ঘোষ বলেন, ‘‘মিশ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয় যে প্রয়োজন, সেটাই অধিকাংশ লোকে মনে করেন না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের। এই ‘সংস্কৃতির অহঙ্কারের’ পরিবর্তন প্রয়োজন।’’ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষিকা বা ছাত্রীদের এই প্রয়োজনীয়তাকে অনেক সময়েই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ রকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। যেটা খুবই দুর্ভাগ্যের। কসবার স্কুলের অভিযোগের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy