Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসকের মৃত্যুতে খুনের মামলা দায়ের

পেশায় চিকিৎসক চান্দ্রেয়ী ভাই এবং মায়ের সঙ্গে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে পৈতৃক বাড়ির তিনতলায় থাকতেন। পুলিশের দাবি, দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশের কাছে মৃতার ভাই ও মা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন সকালে তাঁরা অনেক ডাকাডাকি করলেও চান্দ্রেয়ী ঘুম থেকে ওঠেননি।

এই বাড়িতেই খুন হয়েছেন চিকিৎসক চান্দ্রেয়ী দাসচৌধুরী।-নিজস্ব চিত্র।

এই বাড়িতেই খুন হয়েছেন চিকিৎসক চান্দ্রেয়ী দাসচৌধুরী।-নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০১:৩৬
Share: Save:

এক মহিলা চিকিৎসককে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন মা ও ভাই। ঘটনার পরে কোনও সন্দেহ বা অভিযোগ না হলেও নিয়মমাফিক অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয় দেহটি। এই ঘটনার প্রায় ৫০ দিন পরে স্বত‌‌‌‌ঃপ্রণোদিত ভাবে খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ। কারণ ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ওই মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম চান্দ্রেয়ী দাসচৌধুরী (৪৮)। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি কসবার রাজডাঙায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের একটি আবাসিকের চিকিৎসক ছিলেন। তবে মাস দুই আগে চান্দ্রেয়ী চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে গত ২২ মে। পেশায় চিকিৎসক চান্দ্রেয়ী ভাই এবং মায়ের সঙ্গে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে পৈতৃক বাড়ির তিনতলায় থাকতেন। পুলিশের দাবি, দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশের কাছে মৃতার ভাই ও মা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন সকালে তাঁরা অনেক ডাকাডাকি করলেও চান্দ্রেয়ী ঘুম থেকে ওঠেননি। এরপরেই তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে এনে চান্দ্রেয়ীকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। যদিও মৃত্যুর পরে চান্দ্রেয়ীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লালবাজারের তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, ময়না তদন্তের চিকিৎসকেরা চান্দ্রেয়ীর দেহের ভিতরেও বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে, শ্বাসরোধ করার আগেই চান্দ্রেয়ীর হাত-পা কেউ চেপে ধরেছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, ধস্তাধস্তির সময়ে ওই মহিলার মাথা ভারী কিছুতে ঠুকে দেওয়া হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রে খবর, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে শুক্রবার রাতে ওই মহিলার মৃত্যুতে অজ্ঞাতপরিচয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, পরিচিত কেউই এই মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ চান্দ্রেয়ীর ভাই জয় দাসচৌধুরীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিশের দাবি, নিজেকে ব্লগার বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে জয়ের কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে পুলিশ। যে দিন চান্দ্রেয়ীর মৃত্যু হয় সে দিন দেহ উদ্ধারের পরে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে না গিয়ে গোলপার্কের বাড়ি থেকে এসএসকেএমে কেন নিয়ে যাওয়া হল, সে প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি।

লালবাজার জানিয়েছে, চান্দ্রেয়ীর বাবা পূর্ণচন্দ্র দাসচৌধুরী বরাহনগরের আইএসআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পূর্ণচন্দ্রবাবুরা চার ভাই। প্রত্যেকের পরিবার ওই বাড়িতে থাকে। পূর্ণচন্দ্রবাবুর মৃত্যুর পর থেকে ওই বাড়ির তিনতলায় থাকতেন চান্দ্রেয়ীরা। একটি ঘরে ছেলে এবং মা থাকতেন, অন্য ঘরে থাকতেন চান্দ্রেয়ী। পুলিশের দাবি, বাড়িতে পুলিশের কাছে চান্দ্রেয়ীর মা ও ভাই দাবি করেছেন, দেহ উদ্ধারের সময়ে দরজা ভিতর থেকেই বন্ধ ছিল। বাড়ির অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না থাকলেও সদ্ভাব ছিল। ওই পরিবারের সম্পত্তি সংক্রান্ত সব নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

শনিবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চার ভাইয়ের পরিবারের প্রবেশপথ পৃথক। মৃতার এক কাকিমার দাবি, ঘটনার সময়ে চান্দ্রেয়ীর মা বা ভাই তাঁদের কিছুই জানাননি। মৃত্যুর পরে তাঁদের খবর দেওয়া হয়। আজ, রবিবার জয় এবং তাঁর মায়ের উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে যাওয়ার কথা ছিল বলে জেনেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Doctor FIR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE