ভ্রমণের নেশায় সপরিবার পাড়ি দিয়েছিলেন আন্দামান। কিন্তু বেড়াতে গিয়ে যে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হবে, ভাবতেও পারেননি ওঁরা। আন্দামানের হোটেলে খাবার খাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় পরিবারের দু’জনকে। অভিযুক্ত ভ্রমণ সংস্থা ‘স্বরাজদ্বীপ ট্র্যাভেলস’-এর কর্ণধারের বিরুদ্ধে ফুলবাগান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের হয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরেও ।
ফুলবাগানের বাসিন্দা, পেশায় ঠিকাদার মানস দত্ত, ২২ মার্চ সপরিবার আন্দামানে বেড়াতে যান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘১৯ ফেব্রুয়ারি ওই ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার সুকুমার মণ্ডলের কথামতো অগ্রিম দশ হাজার টাকা চেকের মারফত পাঠানো হয়। তাঁরা আমাদের ১২ জন সদস্যদের জন্য হোটেলের ঘর থেকে এবং সমুদ্রে ঘোরার জন্য সরকারি জাহাজ— সব কিছু বুক করে রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আন্দামানে গিয়ে দেখি কোনও কিছুই ব্যবস্থা করা হয়নি।’’ মানসবাবুর দাবি, তাঁরা মাত্র দু’টি দ্বীপে বেড়াতে যেতে পেরেছিলেন। কথা ছিল সরকারি জাহাজ বুক করার, কিন্তু তিন গুণ বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি জাহাজে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়।
মানসবাবু জানান, তাঁরা ২৩ ও ২৪ মার্চ আন্দামানের নীল ও হ্যাভলক দ্বীপ গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ থেকে ন’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের সঙ্গে যাবতীয় চুক্তি খেলাপ করা হয়েছে। হোটেলের খাবার খেয়ে তিন কিশোর-সহ ন’জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। বমি শুরু হয়। অসুস্থদের মধ্যে দু’জনকে পোর্ট ব্লেয়ারের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।’’ তাঁদের মধ্যে মানসবাবুর ভগ্নিপতি সুশীল ঘোষকে দু’দিন আইসিসিইউ-তে রাখতে হয়। ৫৬ বছরের সুশীলবাবুর অভিযোগ, ‘‘আন্দামানে বেড়াতে যাওয়াটাই দুঃস্বপ্ন। ওই ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশ, ক্রেতা সুরক্ষা দফতর কড়া ব্যবস্থা নিক।’’ ৩০ মার্চ তাঁরা কলকাতায় ফিরে আসেন।
অভিযুক্ত ভ্রমণ সংস্থার সদর দফতর আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে। সংস্থার কর্ণধার সুকুমার মণ্ডল অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘‘মানস দত্ত আমার সংস্থার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করেছেন, তা আংশিক ঠিক। অগ্রিম বুকিং করার সময় সরকারি জাহাজে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হলেও তা ব্যবস্থা করা যায়নি।’’ তবে খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া নিয়ে সুকুমারবাবুর মন্তব্য, ‘‘কলকাতা থেকে ভিন্ন পরিবেশ মানিয়ে নিতে না-পারার জন্যই ওঁরা অসুস্থ হয়েছিলেন।’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) দেবশিস সরকার বলেন, ‘‘ঘটনাটি আন্দামানে ঘটেছে। আমরা আন্দামানের ওই ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’ ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পান্ডে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ বেড়াতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে পর্যটকদের। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অভিযুক্ত ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy