সেই লঞ্চ। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র
জেটিতে পৌঁছতে আর মাত্র কিছুক্ষণ। নামার জন্য প্রস্তুত যাত্রীরা। আচমকা কালো ধোঁয়ায় ভরে গেল গোটা লঞ্চ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিছনে ইঞ্জিনের ঘরের নীচ থেকে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। গঙ্গায় ঝাঁপ মারবেন, না আগুনে পুড়ে মরবেন, তা বুঝতে না পেয়ে আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করেন যাত্রীরা। বেগতিক বুঝে কোনও মতে লঞ্চকে প্রায় জোর করে ঘাটে ভিড়িয়ে দেন চালক। ফলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান লঞ্চটির যাত্রীরা। লঞ্চটি ঘাটে ভিড়তেই যাত্রীরা প্রায় পড়ি কী মরি করে লাফ দিয়ে জেটিতে নেমে পড়েন।
শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সংস্থার ‘এম ভি জলপথ’ নামের একটি বড় লঞ্চে। ওই সংস্থার কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ শোভাবাজার-বাগবাজার রুটের ওই লঞ্চটি শোভাবাজার থেকে যাত্রীদের নিয়ে হাওড়ার দিকে ৩ নম্বর জেটিতে ফিরছিল। গঙ্গায় তখন ভরা জোয়ার। একেই তীব্র গরম, তার উপরে ফেরার পথ হওয়ায় যাত্রী-সংখ্যা ছিল এমনিতেই কম। হুগলি নদী জলপথ সমবায় সংস্থা থেকে জানা গিয়েছে, শোভাবাজার থেকে হাওড়ার জেটিতে আসার সময়ে লঞ্চগুলি ঘাটের কাছে এসে কিছুটা অর্ধাচক্রাকারে ইঞ্জিনটাকে পিছনে ঘুরিয়ে জেটিতে লাগানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লঞ্চটি যখন ঘুরে জেটির দিকে এগোচ্ছে, তখন হঠাৎই ইঞ্জিনঘরের সামনে থেকে বেরিয়ে আসা কালো ধোঁয়া গোটা লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। চোখ-নাক জ্বালা করতে শুরু করে যাত্রীদের। তার মধ্যেই ইঞ্জিনঘরের নীচ থেকে আগুনের শিখা লাফিয়ে ডেকের উপরে উঠে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।
এই ঘটনা যখন ঘটে, তখন লঞ্চের সামনের দিকে ছিলেন ফুল ব্যবসায়ী সঞ্জু সাউ। তিনি বলেন, ‘‘কালো ধোঁয়ায় দম আটকে আসছিল। কিছুক্ষণ চোখে কিছু দেখতে পাইনি। তার পরে দেখি আগুন লেগেছে। ঝাঁপ দেব কি না ভাবছিলাম। গঙ্গায় জোয়ার চলায় ঝাঁপ দিতেও সাহস হয়নি। লঞ্চ জেটিতে ভিড়তেই লাফিয়ে নেমে পড়ি।’’
একই অবস্থা হয়েছিল লিলুয়ার বাসিন্দা, কলেজছাত্রী শোভনা তিওয়ারির। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন লঞ্চে যাচ্ছি, এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। মনে হচ্ছিল আর বাড়ি ফিরতে পারব না। আগুন দেখে গঙ্গায় যে ঝাঁপ দেব, সে উপায় ছিল না। কারণ আমি তো সাঁতারই জানি না।’’
তবে এম ভি জলপথ নামের ওই লঞ্চের যাত্রীরা সকলেই একবাক্যে চালকের প্রশংসা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, চালক তখন লঞ্চটিকে দ্রুত জেটিতে না আনলে অনেক যাত্রীই আতঙ্কিত হয়ে গঙ্গায় ঝাঁপাতেন এবং গঙ্গায় ওই সময় জোয়ার চলায় তাঁদের উদ্ধার করা একটা বড় সমস্যা হতো।
তবে ঘটনাটি মাঝগঙ্গায় হলে যে ভয়াবহ হতে পারত, তা মানছেন হুগলি নদী জলপথ সমবায় সংস্থার কর্মকর্তারাও। তবে তাঁদের দাবি, খুবই ছোট আগুন। আগুন লাগার পরে লঞ্চের কর্মীরাই গঙ্গা থেকে জল তুলে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ জন্য দমকলও ডাকতে হয়নি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন ঘটনা ঘটল? এই ঘটনা কি যাত্রী-নিরাপত্তার পক্ষে লঞ্চের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকে বেআব্রু করে দেয় না?
সংস্থার তরফে লঞ্চের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার শ্যামল নাথ বলেন, ‘‘ইঞ্জিনের ভিতর থেকে যে সাইলেন্সার পাইপ দিয়ে কালো ধোঁয়া বাইরে বার করে দেওয়া হয়, সেই পাইপে কার্বন জমে কোনও ভাবে আগুন লেগে যায়। তবে আগুন ও ধোঁয়া খুবই অল্পক্ষণের জন্য স্থায়ী হয়েছে। প্রতি বছর লঞ্চগুলির সার্ভে ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো করা হয় বলে বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy