Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আগুনে বন্দি মা-শিশু, ত্রাতা বৃদ্ধ

সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে শোভাবাজারের জগদ্বন্ধু মোদক রোড এলাকায়। দোতলা একটি বাড়ির নীচের তলায় বস্তার গুদামে প্রথমে আগুন লাগে। তার পরে তা ছড়িয়ে পড়ে উপরে ও পাশের একটি গাছে। ভস্মীভূত হয়ে যায় পুরো গুদামটি।

একতলায় জ্বলছে বস্তার গুদাম। দোতলায় মেয়েকে নিয়ে আটকে পড়েন শুক্লাদেবী। সোমবার, শোভাবাজারে। ছবি: আদিত্যবিক্রম ভৌমিক

একতলায় জ্বলছে বস্তার গুদাম। দোতলায় মেয়েকে নিয়ে আটকে পড়েন শুক্লাদেবী। সোমবার, শোভাবাজারে। ছবি: আদিত্যবিক্রম ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

দরজায় দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। পাশের গুদাম থেকে ধেয়ে আসছে আগুনের হল্কা। ঘরের ভিতরে আটকে পড়েছেন এক মহিলা ও তাঁর বছর তিনেকের সন্তান। মেয়েকে কোলে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন তিনি। বহু চেষ্টা করেও বাইরে বেরোতে পারছিলেন না তাঁরা। তখনই নিজের প্রাণের মায়া ছেড়ে ওই বা়ড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। তিনি সম্পর্কে ওই শিশুর জেঠু। শিশুটিকে কোলে তুলে ওই মহিলাকে হাত ধরে টেনে কোনও রকমে বাইরে বের করে আনেন তিনি। ঘর পুড়লেও অক্ষত রয়েছেন তাঁরা সকলেই।

সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে শোভাবাজারের জগদ্বন্ধু মোদক রোড এলাকায়। দোতলা একটি বাড়ির নীচের তলায় বস্তার গুদামে প্রথমে আগুন লাগে। তার পরে তা ছড়িয়ে পড়ে উপরে ও পাশের একটি গাছে। ভস্মীভূত হয়ে যায় পুরো গুদামটি। ওই বাড়ির দোতলায় প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ভাড়া থাকেন অসিত সরকার নামে ওই বৃদ্ধের দুই ভাইয়ের পরিবার। পাশের বাড়িতে থাকেন অসিতবাবু।

এ দিন ওই ঘটনার সময়ে পরিবারের অন্যেরা বিভিন্ন কাজে বাইরে থাকলেও বাড়িতে ছিলেন তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শুক্লা ও তাঁর বছর তিনেকের মেয়ে অনুষ্কা। নীচের তলায় আগুন লাগলেও প্রথমে তাঁরা কিছু বুঝতে পারনেনি। বাইরের লোকের চিৎকার শুনে তিনি সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তত ক্ষণে আগুন লেগে গিয়েছে দরজায়। আগুন দেখে ওই বাড়ি়র সামনে এসে অসিতবাবু দেখেন, আটকে পড়েছেন শুক্লাদেবী ও অনুষ্কা। তিনি বাড়িতে ঢুকে বার করে আনেন দু’জনকে। বাড়ির অধিকাংশ পুড়ে গেলেও ভাইয়ের মেয়ে ও স্ত্রীকে বাঁচাতে পেরে স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। অসিতবাবু বলেন, ‘‘আমার তখন একটাই লক্ষ্য ছিল যে ওদের বার করে আনতে হবে। সেটাই করেছি। আর কিছু ভাবিনি।’’ শুক্লাদেবী বলেন, ‘‘চারপাশে আগুন। ভেবেছিলাম মরেই যাব। হঠাৎ উনি টেনে বার করে আনলেন।’’

অসিতবাবুর সঙ্গে ভাইঝি অনুষ্কা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দমকলের এক অফিসার জানান, পাঁচটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। বাড়ি পুরনো হওয়ায় যে কোনও সময়ে সেটি ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা। স্থানীয় কাউন্সিলরকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই কর্তা। কাউন্সিলর মিতালি সাহা বলেন, ‘‘পুরসভা এবং বরো চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’

স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিনের মতো এ দিনও ওই গুদামে কয়েক জন কর্মী এসেছিলেন। প্রধানত সেখানে প্লাস্টিক ও চটের বস্তা রাখা হয়। তার পরে সেগুলি সেলাই করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। এ দিন ওই দোকানে আলো জ্বালাতে গেলে সুইচবোর্ডে আগুন জ্বলে ওঠে বলে জানান স্থানীয়েরা। সেখান থেকেই আগুন লেগে থাকতে পারে বলে দমকলের অনুমান। দমকলের এক অফিসার জানান, দ্রুত বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ভেঙে ফেলা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Fire Accident Shobhabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE