অঘটন: গ্যাস লিক করে আগুন লেগেছে একটি চারতলা বাড়িতে। রবিবার, শোভাবাজার স্ট্রিটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
দাউদাউ করে জ্বলছে একটি ফ্ল্যাট। আগুন ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশেও। যে তলে আগুন লেগেছে, সেখানকারই একটি ফ্ল্যাটে তালাবন্ধ ছিলেন শয্যাশায়ী এক বৃদ্ধ হৃদ্রোগী। স্বামীকে একলা ঘরে বন্ধ করে রেখে রোজকার মতো স্ত্রী গিয়েছিলেন পাশেরই একটি বাড়িতে রোগীর পরিচর্যা করতে।
অবশেষে সেই ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায় নামে ওই বৃদ্ধকে দ্রুত নামিয়ে আনেন পাড়ার ছেলেরা। বৃদ্ধের পিঠে ও বুকে কেটে গিয়েছে। এমনকি, কোমরেও চোট লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। রবিবার ছুটির দুপুরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে ১২৬, শোভাবাজার স্ট্রিটে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ ওই ঠিকানার চারতলা বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগার খবর আসে। প্রথমে ধোঁয়া দেখেন ওই ফ্ল্যাটের উপরতলার এক বাসিন্দা। তাঁর চিৎকারে অন্য বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁরাই পুলিশ এবং দমকলে খবর দেন। নীচে নেমে আসার পরে তাঁদের মনে পড়ে গৌরাঙ্গবাবুর কথা। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় বাইরে থেকে তালা দেওয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী মহাশ্বেতা ঘোষ বলেন, ‘‘বাইরের চিৎকার শুনে ভিতর থেকেও তখন আগুন, আগুন বলে চিৎকার করছেন গৌরাঙ্গবাবু। কী করে তাঁকে বার করা হবে, বুঝতে না-পেরে অনেকেই নীচে নেমে যান। পাড়ার কয়েক জন ছেলে উপরে উঠে দরজা ভাঙতে শুরু করেন। ওঁরা না এলে কী হত, জানি না।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বৃদ্ধকে নামিয়ে আনার পরে পৌঁছয় দমকলের গাড়ি। পাঁচটি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
উদ্ধার করার পরে ফ্ল্যাটের নীচে গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
দমকল সূত্রের খবর, ওই বহুতলে মোট ১৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বেশ কয়েকটি বিক্রি হলেও কয়েকটি এখনও ভাড়া দেওয়া। পুরনো মালিকের থেকে সম্প্রতি বহুতলটি কিনেছেন অন্য এক জন। এক দমকল আধিকারিক বলেন, ‘‘বহুতলের একতলায় একটি বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকান রয়েছে। ওই দোকানের মালিকের ফ্ল্যাট রয়েছে দোতলায়। সেখানেই আগুন লাগে। ওই ঘরে বৈদ্যুতিন সামগ্রী স্তূপ করে রাখা ছিল। সেখান থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে এই দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে।’’ যদিও পরে পুলিশ জানায়, দোতলার ওই ফ্ল্যাটের রান্নার গ্যাস লিক করে আগুন লেগেছে।
ওই ফ্ল্যাটের মালিক প্রবীর রায় বলেন, ‘‘দুপুরে আমি দোকানে ছিলাম। হঠাৎ শুনি, আমাদের ফ্ল্যাট থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কী করে আগুন লাগল জানি না। তবে অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।’’ আগুন-আতঙ্কে পোষ্য বিড়ালকে নিয়ে নেমে আসা প্রবীরবাবুর এক প্রতিবেশী বললেন, ‘‘আগুন ঠিক কী থেকে লেগেছিল জানি না। তবে বসবাসের ফ্ল্যাটে এ ভাবে বৈদ্যুতিন সামগ্রী রাখা হবে কেন?’’ এই প্রশ্নের উত্তর দেননি প্রবীরবাবু।
আর গৌরাঙ্গবাবুর স্ত্রী বেলাদেবী বলছেন, ‘‘স্বামী ফিজিয়োথেরাপি করে সংসার চালাতেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে আমি এক বাড়িতে রোগী দেখাশোনার কাজ নিই। উনি সে ভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তাই ঘরে তালা দিয়ে যেতাম। আজ এ জন্য অনেক বড় অঘটন ঘটে যেতে পারত। নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy