Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শব্দ জব্দে ‘শুভ বুদ্ধি’ই ভরসা

বেআইনি বাজি ধরপাকড়ে পুলিশের ‘সক্রিয়তা’ও ছিল। কিন্তু কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে মহানগর দেখল, বাজির দাপট অব্যাহত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বাজির দাপট রুখতে পুলিশ কি তা হলে যথেষ্ট তৎপর ছিল না?

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়, শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

সময় মেনে বাজি পোড়ানো নিয়ে প্রচার চালানো হয়েছিল। বেআইনি বাজি ধরপাকড়ে পুলিশের ‘সক্রিয়তা’ও ছিল। কিন্তু কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে মহানগর দেখল, বাজির দাপট অব্যাহত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বাজির দাপট রুখতে পুলিশ কি তা হলে যথেষ্ট তৎপর ছিল না? এ বছর তো সুপ্রিম কোর্ট বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই সময় মেনে ক’জন বাজি পুড়িয়েছেন, সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য।

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, প্রতি বছরই পুজো না এলে পুলিশ নড়ে বসে না। কিন্তু তত দিনে নিষিদ্ধ বাজি বাজারে ঢুকে পড়ে। ফলে কিছু বাজি বাজেয়াপ্ত করা হলেও তা আসলে হিমশৈলের চূড়া। বাদবাকি বাজি ক্রেতাদের হাতে ঠিক পৌঁছে যায়। তার ফলেই দূষণ ঠেকানো যায় না। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘এই নাটক তো বহু বছর ধরেই চলছে। বাজি রুখতে কেন পুলিশ কঠোরতম পদক্ষেপ করবে না?’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জুলাই মাস থেকেই শব্দবাজি ঢুকে প়ড়ে। সে সময়ে বাজি ঠেকাতে পুলিশের সক্রিয়তা থাকে না। পুলিশ যখন সক্রিয় হয়, তত ক্ষণে নিষিদ্ধ বাজি লোকের হাতে পৌঁছে গিয়েছে। কালীপুজো-দীপাবলিতে তাণ্ডবের ছবিটাও তাই বদলায় না।’’ কলকাতা পুলিশ অবশ্য ফেসবুকে দাবি করেছে, এ বছর শব্দদানবের দাপট আগের বছরের থেকে অনেক কম ছিল। অর্থাৎ, এ বছরও যে শব্দবাজি ফেটেছে, সেটা মেনে নিয়েছে লালবাজার। কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে কলকাতার বাতাসে মারাত্মক হারে দূষণ ছড়িয়েছিল। তার পিছনে বাজির ধোঁয়ার পাশাপাশি আবহাওয়াজনিত কারণও ছিল বলে লালবাজার ফেসবুকে দাবি করেছে। তবে সেই আবহাওয়াজনিত কারণের বিশদ ব্যাখ্যা পুলিশের কাছ থেকে মেলেনি। শুক্রবার অবশ্য আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, এ দিন সন্ধ্যা ৬টায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসানো পর্ষদের যন্ত্রে বায়ুদূষণ সূচক ছিল ৩৭০। ভিক্টোরিয়ার যন্ত্রে যা ছিল ৩১১। এই সূচক একশোর নীচে থাকাই কাম্য।

এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, আতসবাজি নিয়ে এ বারই প্রথম নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। তা-ও কালীপুজোর কয়েক দিন আগে। কিন্তু শব্দবাজি নিষিদ্ধ হয়েছিল বহু বছর আগে। তার পরেও মহানগরে যে শব্দবাজি পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি, তার দায় কার? কেন এখনও প্রশাসন ‘আগের বারের থেকে কম’— এ কথাই আউড়ে যাবে?

পুলিশ অবশ্য নিজেদের সক্রিয়তার পক্ষেই যুক্তি দিয়েছে। তাদের দাবি, বুধবার রাতে ভবানীপুর ও সিঁথিতে পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাতেই স্পষ্ট, অভিযোগ পেলেই সক্রিয় হয়েছেন উর্দিধারীরা। এ বছর বেআইনি বাজি পোড়ানোর অভিযোগে ধৃতের সংখ্যা সাতশোরও বেশি। এ ছা়ড়াও বিশৃঙ্খলার জন্য ৫১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং সবুজ মঞ্চের কাছে আগের তুলনায় বেশি অভিযোগ গেলেও পুলিশে অভিযোগের হার কিন্তু এ বছর কমেছে। আগের বছরের তুলনায় কমেছে ধৃতের সংখ্যাও। তাই প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে পুলিশের উপরে কি ভরসা কমে গিয়েছে সাধারণ মানুষের? আরও একটি প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। তা হল, শব্দবাজি ফাটার পরে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন, না কি বাজি ফাটানোর আগেই রুখে দেওয়া দরকার?

পরিবেশকর্মীদের অনেকেরই মতে, কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে অলিগলিতে দৌড়ে কখনওই শব্দবাজি পুরোপুরি থামানো সম্ভব নয়। তাতে লোকের চোখে পুলিশের

সক্রিয়তা ধরা প়়ড়লেও কাজের কাজ কতটা হয়, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। নিশুত রাতে শব্দ শুনে নাগরিকেরা অভিযোগ জানাবেন এবং সেই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘ়টনাস্থলে যাবে। কিন্তু তত ক্ষণ কি অভিযুক্তেরা শব্দবাজি হাতে করে দাঁড়িয়ে থাকবেন? প্রশ্ন উঠছে এ নিয়েও।

শব্দবাজি নিয়ে কঠোরতম মনোভাব থাকলেও কেন তা রোখা যাচ্ছে না, সেই ব্যাপারে পুলিশের একাংশেরও পাল্টা যুক্তি রয়েছে। তাঁদের মতে, বাজি তৈরি হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও হুগলি জেলায়। সেখানে রাশ না টানার ফলেই শব্দবাজি তৈরি হয়ে বাজারে চলে আসছে। কিন্তু তা বিক্রি তো হচ্ছে এ শহরেই। ফাটছেও এ শহরে! তা হলে বিক্রির ক্ষেত্রে কেন রোখা যাচ্ছে না? পুলিশের একাংশের ভরসা, নাগরিকদের ‘শুভ বুদ্ধি’র উপরে। তাঁদের মতে, শব্দবাজির ক্ষতিকর দিক নিয়ে মানুষ যত দিন না সচেতন হবেন, তত দিন এই উপদ্রব পুরোপুরি ঠেকানো মুশকিল।

তা হলে কি সামনের বছর কালীপুজো-দীপাবলিতেও এই তাণ্ডব চলবে? আশঙ্কা অন্তত তেমনই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Pollution Environmental Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE