দাহ্য পদার্থ মজুত অথবা আগুন জ্বালাতে হলে আগে নিতে হবে অগ্নি-বিমা। তবেই কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেবে কলকাতা পুরসভা। অগ্নি-বিমা না থাকলে মিলবে না লাইসেন্স। শুক্রবার পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, শপিং মল, বাজার, রেস্তরাঁ, হোটেল, অতিথি নিবাস, মদের দোকান, চামড়া বা প্লাস্টিকের কারখানা, পেট্রল পাম্প, গ্যাসের গোডাউন, বেকারি ও স্টুডিয়ো-সহ ১৬ ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অগ্নি-বিমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মূলত বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের জেরেই এ বিষয়ে পুর প্রশাসনের টনক নড়েছে। কারণ, ওই ঘটনায় অনেক ব্যবসায়ীর প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে সরকার বা পুর প্রশাসনেরও কিছু করার থাকে না। সেই কারণেই অগ্নি-বিমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি পুর ভবনে বাগড়ি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে পুরসভার কর্তারা ছাড়াও এসেছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং কেএমডিএ, পূর্ত, দমকল ও সিইএসসি-র পদস্থ অফিসারেরা। বৈঠকে রাজীব কুমারই প্রস্তাব দেন, এমন কিছু ব্যবসা রয়েছে, যেখানে আগুন ব্যবহার করা হয়, দাহ্য পদার্থও মজুত থাকে। সেই সব ব্যবসাকে অগ্নি-বিমার আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করা হোক। তাঁর যুক্তি ছিল, আগুন লাগলে অনেক টাকার লোকসান হয়। বিমা থাকলে অন্তত কিছুটা ক্ষতিপূরণ মিলতে পারে। পুলিশ কমিশনারের সেই প্রস্তাব নিয়ে অবশ্য বিতর্কও ওঠে পুর প্রশাসনের অন্দরে। কেউ কেউ বলতে থাকেন, লাইসেন্সের সঙ্গে অগ্নি-বিমা বাধ্যতামূলক করার চাপ দিতে পারে না পুরসভা। কারণ, লাইসেন্স দেওয়া পুরসভার কাজ। নির্দিষ্ট ফি নিয়েই তা দেওয়া হয়। এত কাল যে পদ্ধতিতে তা দেওয়া হয়েছে, সেটাই বজায় থাক। নতুন করে কোনও শর্ত যোগ করলে তা নিয়ে কেউ মামলাও করতে পারেন।
এমন নানা প্রশ্ন ওঠায় ধন্দে পড়েন পুরকর্তারা। রাজীব কুমারের প্রস্তাব মেনে ফাইল তৈরি করা হলেও মেয়র পরিষদের বৈঠকের আগে তা পাঠানো হয় পুরসভার আইন দফতরের কাছে। লাইসেন্স দফতরের এক ইনস্পেক্টরের কথায়, ‘‘পুর প্রশাসন নতুন করে যে শর্ত চাপাচ্ছে, তাতে সরাসরি লাইসেন্স দফতর যুক্ত নয়। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেটি আইন দফতরের সিলমোহর নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে অনুমোদন আসার পরে এ দিন মেয়র পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি তোলা হয়। অনুমোদিত ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩০০ বর্গফুট এলাকার মধ্যে থাকা হোটেল, রেস্তরাঁ বা খাবারের দোকান, যেখানে কয়লা, ডিজেল, রান্নার গ্যাস বা মাইক্রোওয়েভ আভেন ব্যবহার হয়ে থাকে, তাঁদের ওই নিয়ম থেকে ছাড় দেওয়া হবে। তবে তাদের বন্ডে সই করে জানাতে হবে, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক আছে। লাইসেন্স দফতর সূত্রের খবর, নতুন নিয়ম অনুসারে পুরসভার ‘সার্টিফিকেট অব এনলিস্টমেন্ট’ (যা লাইসেন্স বলে পরিচিত) নতুন করে পেতে বা নবীকরণ করতে অগ্নিবিমার প্রমাণপত্র দেখাতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy