প্রতীকী ছবি।
মাছের হাত ধরে দূষণ ঠেকাতে পারে কলকাতা। সম্প্রতি পূর্ব কলকাতার জলাভূমি চরিত্র বদল নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদেরা।
ইএম বাইপাসের পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর এলাকায় জলাভূমি রয়েছে। পরিবেশগত গুরুত্বের জন্য জলাভূমি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রামসর’-এর তালিকাতেও এর নাম রয়েছে। উন্নয়নের যুক্তি দেখিয়ে এ রকম জলাভূমির চরিত্রে এ বার বদল আনতে চায় রাজ্য। গত ৫ জুন পরিবেশ দিবসের একটি অনুষ্ঠানে জলাভূমির একাংশে উড়ালপুল নির্মাণ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন খোদ পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এ রাজ্যের পরিবেশবিদেরাই বলছেন, কলকাতাকে বাঁচাতে হলে জলাভূমির চরিত্র বদল করা চলবে না। বরং ওই জলায় মাছ চাষে জোর দিলে দূষণ কমানো সম্ভব।
পূর্ব কলকাতার জলাভূমির এই গুরুত্বের দিক তুলে ধরেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক পার্থিব বসু, গবেষক শর্মিষ্ঠা সাহা এবং পরিবেশ দফতরের বিজ্ঞানী তপন সাহা। তাঁদের গবেষণাপত্র একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে। তাঁরা দেখিয়েছেন, এই জলাভূমিতে কলকাতার নিকাশি বর্জ্য শোধনের প্রাকৃতিক বন্দোবস্ত রয়েছে। ফলে শহরের নিকাশির জল এই জলাভূমিতে এসে পড়লে তা পরিশোধিত হয়। এর ফলে দূষণ কমবে। আবার এই জলেই বহু বছর ধরে মাছের চাষ হয়ে চলেছে। ফলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে মাছের উৎপাদন বাড়ানো এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের উন্নতিও সম্ভব। শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, ‘‘এক দিকে পরিবেশ দূষণ রোধ এবং তার হাত ধরে মাছের চাষ। এমনটা কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না। কলকাতাকে ভাল রাখতেই এই জলাভূমি বাঁচাতে হবে।’’
নোংরা জলে মাছ চাষ হয় কী ভাবে?
পরিবেশবিদেরা বলছেন, নিকাশি জলে প্রচুর পরিমাণে আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ ও প্রাণী (প্ল্যাঙ্কটন) জন্মায়। সেগুলি মাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। প্রচুর স্বাভাবিক খাবার পেয়ে মাছের ফলনও ভাল হয়। কিন্তু তাতে মাছের কোনও ক্ষতি হয় না। ওই এলাকার মৎস্যজীবীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে শহরের নিকাশি জল পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে সে ভাবে যাচ্ছে না। ফলে জলের ঘাটতি হওয়ায় মাছের চাষেও প্রভাব পড়ছে। ভেড়িগুলিতে পলি প়ড়ে গভীরতাও কমেছে। আবার পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, ‘‘পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে পলি না সরালে মাছ চাষের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের দূষণও বা়ড়বে।’’
পূর্ব কলকাতার নাটাভেড়ি সমবায় সমিতির সম্পাদক হরিদাস জেলে জানান, আগের থেকে নিকাশি জল কম মিলছে। তাই মাছের উৎপাদন মার খাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘নোংরা জলে মাছের স্বাভাবিক খাবার থাকে। তার ফলে আলাদা করে কৃত্রিম খাবার কিনতে হয় না। জল কম এলে মাছের খাবারের খরচ বেড়ে যায়।’’ মৎস্য দফতরের খবর, জলের জোগানের অভাবের কথা একাধিক বৈঠকে তাঁদেরও জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে। ‘‘এই জলের সমস্যা কাটলে পূর্ব কলকাতার হাত ধরে রাজ্যের মাছের উৎপাদন অনেক বা়ড়ানো সম্ভব,’’ বলছেন এক মৎস্য দফতরের এক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy