Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পায়ে পায়েই হোক স্বপ্নপূরণ, সোনাগাছিতে শুরু প্রশিক্ষণ

ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ে টিভির সামনে থেকে নড়ত না প্রিয়া ঘোষ। মাঠঘাটে ফুটবল খেলা হচ্ছে দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়ত সে। ভাবত, কোনও দিন এ ভাবেই বল পায়ে মাঠ দাপাবে সে-ও।

বলে পা: প্রশিক্ষণে ব্যস্ত সোনাগাছির যৌনকর্মীদের মেয়েরা। সোমবার, দর্জিপাড়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ

বলে পা: প্রশিক্ষণে ব্যস্ত সোনাগাছির যৌনকর্মীদের মেয়েরা। সোমবার, দর্জিপাড়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ে টিভির সামনে থেকে নড়ত না প্রিয়া ঘোষ। মাঠঘাটে ফুটবল খেলা হচ্ছে দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়ত সে। ভাবত, কোনও দিন এ ভাবেই বল পায়ে মাঠ দাপাবে সে-ও। সোমবার নতুন হলুদ-সবুজ জার্সি গায়ে সেই স্বপ্নপূরণের মুহূর্তে তাই অর্ধেক যুদ্ধজয়ের হাসি যৌনকর্মীর সন্তান প্রিয়ার চোখমুখে। কাদাভরা দর্জিপাড়া পার্কে দাঁড়িয়ে মেসিভক্ত এই কিশোরী বলছে, ‘‘দারিদ্রের কারণে লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু ফুটবল ছাড়তে চাই না।’’

বিশ্বকাপের সময়েই ফুটবল খেলার ইচ্ছে মাথাচাড়া দিয়েছিল প্রিয়ার মতো সোনাগাছির অন্য যৌনকর্মীদের সন্তানদের মধ্যে। সেই ইচ্ছেকে সম্মান দিতে তাদের নিয়ে ফুটবল দল তৈরি করেছিল যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি। কিন্তু প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল না এতদিন। সোনাগাছির অলি-গলিতেই খেলে বেড়াত এই মেসি-রোনাল্ডো ভক্তেরা। তাদের খেলার মাঠে সুযোগ দিতেই এ দিন ফুটবল কোচিং ক্যাম্প শুরু হল পদাতিক মহিলা ফুটবল দলের। দুর্বার সূত্রের খবর, স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহনকুমার গুপ্তের অনুমতিতে দর্জিপাড়া পার্কে হবে ওই ক্যাম্প। সপ্তাহে তিন দিন সেখানেই বল পায়ে, জার্সি গায়ে স্বপ্নপূরণের পথে এগোবে সোনাগাছির মেয়েরা।

শুধু স্বপ্নপূরণই নয়, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়াও এই কোচিং ক্যাম্পের লক্ষ্য বলে জানাচ্ছেন দুর্বারের কর্ণধার স্মরজিৎ জানা। তাঁর কথায়,

‘‘নিজেদের পরিচয়ের কারণে এরা অনেক সময়ে লেখাপড়া, খেলা মাঝপথে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয়। সোনাগাছির মেয়েদের আত্মসম্মান ফিরিয়ে দেওয়াই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।’’ জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে মেয়েদের মধ্যে জড়তা থাকলেও এখন আর তার লেশমাত্র নেই। বরং নিজেদের প্রমাণ করতে মুখিয়ে রয়েছে তারা। দুর্বারের সচিব কাজল বসুর কথায়, ‘‘মাঠে নেমে প্রমাণ করতে চায়, ছেলেদের থেকে

ওরাও কম নয়।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্জুন পুরস্কারজয়ী মহিলা ফুটবলার শান্তি মল্লিক বলছেন, ফুটবলের হাত ধরেই লড়াই করার রসদ খুঁজে পাবে এই মেয়েরা। তাঁর কথায়, ‘‘অসাধারণ মেয়ে হিসেবে খেলার মাঠে আত্মপ্রকাশ হচ্ছে ওদের। ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পেলে ওরাই দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে।’’

যৌনপল্লির অন্ধকার গলি নয়, খোলা ময়দানেই এ বার মুক্তির স্বাদ খুঁজছে সোনাগাছির এই ‘ধন্যি মেয়েরা’। তাই বারুইপুর হোমের বাসিন্দা সুনীতা-লিপিকাই হোক বা আমলাশোলের রীতা মুড়া, সকলেরই মন্ত্র— ‘পদাতিক দিল ডাক/ লাজভয় মুছে যাক/ পায়ে পায়ে খেলি বল/ মেয়েরা গড়েছি দল/ ফুটবল ফুটবল’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Practice Football Children Sex Worker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE