বিনোদকুমার সাউ
এটিএমের বাইরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করছে জনা তিনেক যুবক। বার বার দেখছে এটিএমে কেউ ঢুকল কি না। এর মধ্যেই ভিতরে ঢুকলেন বছর পঞ্চান্নর এক ব্যক্তি। কিছু ক্ষণ পরেও তিনি না বেরোনোয় যুবকদের এক জন এটিএমে ঢুকে জানতে চাইল, টাকা তুলতে অসুবিধা হচ্ছে কি না। ওই প্রৌঢ় অসুবিধার কথা বলতেই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল যুবকটি। প্রৌঢ়ের এটিএম কার্ড পাঞ্চ করে তাঁর পাসওয়ার্ড জেনে তা টাইপ করল। কিন্তু টাকা বেরোল না। তখন যুবকটি ওই ব্যক্তিকে জানাল, তাঁর কার্ডে গোলমাল আছে। ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করতে হবে। এই বলে কার্ডটি তাঁকে ফেরত দিল। পরের দিন ওই ব্যক্তি এসএমএসে জানতে পারলেন, ওই কার্ড ব্যবহার করেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানাচ্ছে, যুবকটি আসলে প্রতারক-চক্রের সদস্য। মূলত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং এটিএমের সঙ্গে সড়গড় নন, এমন গ্রাহকদের সাহায্য করার নামে প্রথমে পাসওয়ার্ড জেনে এবং পরে এটিএম কার্ড পাল্টে নিত তারা। পুলিশ জানিয়েছে, চক্রের এক প্রতারককে সোমবার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের নাম বিনোদকুমার সাউ। বাড়ি হাওড়ার পি কে ব্যানার্জি রোডে। উদ্ধার হয়েছে ৮০ হাজার টাকা এবং কিছু এটিএম কার্ড। তবে ওই যুবকের সঙ্গীরা পলাতক।
পুলিশ জানিয়েছে, বিনোদ ও এবং তার সঙ্গীরা মূলত রক্ষীহীন এটিএম ‘টার্গেট’ করত। কোনও মহিলা বা প্রবীণ গ্রাহক এটিএমে ঢুকে দীর্ঘ সময় নিলেই চক্রের সদস্যেরা বুঝতে পারত, তিনি টাকা তোলার ক্ষেত্রে অপটু। এর পরেই গ্রাহককে সাহায্যের নামে এটিএমে ঢুকে পড়ত তারা। তদন্তকারীদের দাবি, বিনোদ জেরায় জানিয়েছে, প্রথমে তারা গ্রাহককে কার্ড পাঞ্চ করতে বলত। এর পরে তাঁর পাসওয়ার্ড জানত চাইত। পুলিশের দাবি, ভুল পাসওয়ার্ড টাইপ করার পরে অভিযুক্তেরা গ্রাহককে বলত কার্ড খারাপ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে কার্ডটি ফেরত দেওয়ার সময়ে নিজের কার্ডটি বদলে দিত তারা।
তদন্তকারীরা জানান, বিনোদের বিরুদ্ধে বন্দর এলাকায় প্রায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। হাওড়া থানায় রয়েছে প্রায় ১৪টি মামলা। আগেও সে ধরা পড়েছিল। তবে চক্রের মূল পাণ্ডা ভীম এখনও পলাতক।
কী ভাবে খোঁজ মিলল চক্রটির?
পুলিশ জানায়, ১৯ নভেম্বর দক্ষিণ বন্দর এলাকার বাসিন্দা উমেশ রায় টাকা তুলতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে যান। কিন্তু টাকা তুলতে অসুবিধা হচ্ছিল তাঁর। সে সময়ে সেখানে আসে বিনোদ এবং উমেশবাবুকে সাহায্য করার নাম করে তাঁর পাসওয়ার্ড জেনে ডেবিট কার্ডটি পাল্টে দেয়। পরের দিন উমেশবাবু জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ৯০ হাজার টাকা তোলা ছাড়া বিনোদরা হাওড়ার একটি দোকান থেকে পাথর কিনেছিল। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে অন্য জিনিস কেনে। সব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিনোদকে শনাক্ত করেন তদন্তকারীরা। এ দিন আদালতে তার ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy