ক্যানসারে একটি কিডনি বাদ দেওয়ার পরেও তা ছড়িয়েছে ফুসফুস পর্যন্ত। মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হচ্ছে একটানা ক’দিন।
৬৫ বছরের শেখর চন্দের অবশ্য হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে বিশ্রামের উপায় নেই। এক বেসরকারি বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে অসুস্থ শরীরেই ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। ছ’লক্ষ টাকা ফেরত এবং তাঁকে প্রতারণার বিচার চান তিনি।
বিমা সংস্থার নিয়ন্ত্রণকারী ওম্বাডসম্যানে মামলায় জিতেও গিয়েছেন শেখরবাবু। তাঁকে ছ’লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন সেখানকার বিচারক। কিন্তু সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছে বিমা সংস্থা। কলকাতা হাইকোর্টে শেখরবাবুর আইনজীবী অভিজিৎ বসু বলেন, ‘‘প্রাথমিক শুনানিতে আমরা ওম্বাডসম্যানের নির্দেশ বহাল রাখার আবেদন জানাব।’’ ‘এডেলওয়াইস টোকিয়ো’ নামে ওই বিমা সংস্থার কলকাতার প্রতিনিধি অনিন্দ্য ঘোষদস্তিদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন দিল্লিতে আইন বিভাগের
সঙ্গে যোগাযোগ করতে। নেটে পাওয়া টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে মুম্বইয়ের নম্বর দেওয়া হয়। সেখান থেকে বলা হয়, আপনি ভুল নম্বরে ফোন করেছেন।
শেখরবাবুর অভিযোগ, ২০১৩ সালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে তাঁকে স্রেফ ভুল বুঝিয়ে ছ’লক্ষ টাকা নিয়েছে ওই সংস্থা। শেখরবাবুর দাবি, তাঁকে মুখে বলা হয়েছিল, এককালীন ছ’লক্ষ টাকা দিলে
১২ বছর ধরে বছরে ৯ শতাংশ সুদ পাবেন তিনি। ১২ বছর পরে ছ’লক্ষ টাকা ফেরতও পাবেন। সুবিধের কথা ভেবে বিমা করেছিলেন মেয়ের নামে। তিনি নিজে ছিলেন প্রস্তাবক। সেটা ছিল ২০১৬ সালের মার্চ মাস। ক্যানসার ধরা পড়ে সে বছরের শেষের দিকে।
তার আগেই পলিসির কাগজপত্র হাতে পেয়ে মাথা ঘুরে যায় তাঁর। দেখেন, সেখানে লেখা, এখন থেকে টানা ১২ বছর তাঁকে ছ’লক্ষ টাকা করে দিয়ে যেতে হবে। তা হলে ২৫ বছর পরে তিনি ৭৫ লক্ষ টাকা পাবেন। তাঁর আরও অভিযোগ, সেই পলিসির কাগজে কারচুপিও করা হয়েছে। শেখরবাবুর পেশা হিসেবে দেখানো হয়েছে, তিনি ‘চন্দ অ্যান্ড চন্দ’ নামে একটি সংস্থার মালিক। দেখানো হয়েছে, তাঁর বাৎসরিক আয় নাকি ২০ লক্ষ টাকার বেশি। তাঁর মেয়ের শারীরিক পরীক্ষার যে রিপোর্ট সেখানে দেওয়া হয়েছে, তাও জাল বলে তাঁর অভিযোগ। শেখরবাবু বলেন, ‘‘আমি বছরে ছ’লক্ষ টাকা পেনশনই পাই না।’’
বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগ, থানা বিষয়টিকে আমল না দেওয়ায় পুলিশকর্তাদের দরজায় ঘুরতে শুরু করেন শেখরবাবু। এরই মধ্যে তাঁকে দফায় দফায় হাসপাতালেও ভর্তি থাকতে হচ্ছিল। শেখরবাবুর কথায়, ‘‘প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও শারীরিক কষ্টের মধ্যে বাসে বাসে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যে প্রতারণা করা হয়েছে, তার তদন্ত ঠিক করে হলে এত দিনে সংস্থার কর্তাদের জেল খাটতে হত।’’ তাঁর অভিযোগ, ওম্বাডসম্যানের নির্দেশ বেরোনোর পরে সংস্থার তরফ থেকে তাঁকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলা হয়। শেখরবাবুর দাবি, টাকা ফেরত পেলে অভিযোগ প্রত্যাহার করবেন বললে ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থাটি হাইকোর্টে যায়। পুলিশের একাংশের সঙ্গে বিমা সংস্থার যোগসাজশেরও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘‘অভিযানে আছি। পরে কথা বলব।’’
শেখরবাবুর চিকিৎসক, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সৈকত গুপ্তের কথায়, ‘‘এই অবস্থায় এত ছোটাছুটি এবং মানসিক অশান্তি ওঁর শরীরের উপরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy