Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি দেওয়ার নামে বহু কোটি হাতিয়ে ‘উধাও’ 

মানুষকে ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এর আগে গ্রেফতার হয়েছে, জেলও খেটেছে।

আদিত্যলাল মুখোপাধ্যায়

আদিত্যলাল মুখোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০১
Share: Save:

পুলিশ তাকে খুঁজছে। সল্টলেকে দু’টি বাড়ির ঠিকানা মিললেও বৃহস্পতিবার কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি।

মানুষকে ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এর আগে গ্রেফতার হয়েছে, জেলও খেটেছে। কিন্তু পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসার পরে নতুন করে আবারও তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। অথচ বহাল তবিয়তে সে সল্টলেকে থাকছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর লক্ষ লক্ষ টাকা হারানো মানুষগুলি এক বার ক্রেতা সুরক্ষা, এক বার পুলিশের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ছেন। যাঁদের মধ্যে অবসর নেওয়া, সারা জীবনের সঞ্চয় হারানো মানুষের সংখ্যাই বেশি। পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, এতটাই ‘বুকের পাটা’ তার যে জেনে-বুঝে আইপিএস অফিসারদেরও ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছে সে।

অভিযুক্ত এই ব্যক্তির নাম আদিত্যলাল মুখোপাধ্যায়। বয়স আনুমানিক ৫৭। সল্টলেকের সিএফ ১৫৭ নম্বরে তাঁর ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সির অফিস। বৃহস্পতিবার সেই বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সামনে অফিসের শাটার নামানো। পাশ দিয়ে গিয়ে অন্য দরজায় কড়া নাড়তে ভিতর থেকে পুরুষকণ্ঠ বলেন, ‘‘সামনের দিকে আসুন।’’ সামনের দিকে গেলে, খুলে যায় শাটার। দুই যুবক বেরিয়ে জানান, আদিত্য অসুস্থ। তাই অফিসে আসছে না। তাঁরা শাটার নামিয়ে ভিতরে বসে কিছু জরুরি কাজ সারছেন। আদিত্য বাড়িতে আছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাড়ি কোথায়? বলা হয়, এ-ই ২২৮। সেই বাড়ির সামনে বিয়ের কনে সাজানোর বোর্ড। ভিতরে উঁকি দিয়ে এক নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আদিত্যবাবু এখানে থাকেন।’’ দেখা করতে চাইলে অপেক্ষা করতে বলা হয়। একটু পরে এসে বলা হয়, সে নেই। এই যে তিনি বললেন যে আদিত্য অসুস্থ? উত্তর, ‘‘হয়তো ডাক্তার দেখাতেই গিয়েছেন!’’

আদিত্যর হাতে যাঁরাই প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে সে কথা বলত যে সহজেই তাঁরা বিশ্বাস করে নিতেন। বরাহনগরে গঙ্গার ঠিক পাড়ে ২০ কাঠা এমন একটা জমি বার করেছিল, যেখান থেকে উল্টো পাড়ে বেলুড় মঠ দেখা যায়। সেখানে একটি দোতলা বাড়ির কাঠামো দাঁড় করানো। নাম ‘মায়ের বাড়ি’। খবরের কাগজে এবং অন্যত্র বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়েছেন প্রধানত অবসরপ্রাপ্তেরাই। তাঁদেরই এক জন বছর সত্তরের অনিল পোড়ে বায়ুসেনা থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা স্বামী-স্ত্রী রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিত। ফ্ল্যাটে বসে বেলুড় মঠ দেখতে পাব! ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে ১৪ লক্ষ টাকা দিই। কিন্তু সেই ফ্ল্যাট পাইনি। আদালতে মামলা করেছি।’’ ২০১৩ সালের পর থেকে অনিলবাবুর মতো অনেকেই প্রতারিত হয়েছিলেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে আদিত্যকে। জেলে থেকেছে সে। তবে হাইকোর্ট থেকে জামিনও পেয়ে গিয়েছে।

বছর পঞ্চাশের পার্থ দাস জীবনবীমার অফিসার। তিনি প্রতারিত হয়েছেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে। পার্থ বলেন, ‘‘ওঁর কথায় ভুলে আমি ২১ লক্ষ টাকা দিয়েছি। আমাকে পাশাপাশি তিনটি ফ্ল্যাট দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু কোথায় ফ্ল্যাট! শুরুতে বিল্ডিং যতটা তৈরি ছিল, তার পরে আর এতটুকুও বাড়েনি। কোর্ট পেপারে চুক্তি করেছিলেন। এমনকি, যে ফ্ল্যাট তৈরিই হয়নি, তার রেজিস্ট্রেশনও করে দিয়েছিলেন।’’ প্রতারিত অনেকেই জানিয়েছেন, গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত আদিত্য। পরিবারের ভালমন্দের খবর রাখত। পার্থ বলেন, ‘‘আমাকে আদিত্য বলেছিলেন—আপনার মেয়ে পড়াশোনা করছে। আমার মেয়ে সিঙ্গাপুরে বড় চাকরি করে। আপনার মেয়েকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দিন। আমার মেয়ে ওকে ভাল চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে।’’

শহরের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত অরিজিৎ রায়। তিনি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মোট ২৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছিল পাশাপাশি দু’টি ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। অভিযোগ, সে টাকাও আত্মসাৎ করেছেন আদিত্য। অরিজিৎ বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, এখন তিনি বলে বেড়াচ্ছেন যে তাঁর কিডনি বদলাতে হবে। তিনি নাকি অসুস্থ।’’

শুধু থানা নয়, ক্রেতা সুরক্ষা দফতরেও প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে আদিত্যের নামে। এখনও বিচারের অপেক্ষায় সেই অভিযোগকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, নতুন করে আদিত্যলালের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Kolkata Police Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE