Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অ্যানিমেশনের পাঠ চালুর ভাবনা স্কুল স্তর থেকেই

স্কুল থেকে ফিরে খেতে খেতে বা পড়াশুনার পরে ফাঁক পেলেই টিভি চালিয়ে সোজা কার্টুন চ্যানেল। আর ছুটি থাকলে তো কথাই নেই, সে দিন তো একটু বেশিই ছাড়। অফিস থেকে ফিরে বাবা-মায়ের টিভি দেখাও ওঠে শিকেয়।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০০:৩০
Share: Save:

স্কুল থেকে ফিরে খেতে খেতে বা পড়াশুনার পরে ফাঁক পেলেই টিভি চালিয়ে সোজা কার্টুন চ্যানেল। আর ছুটি থাকলে তো কথাই নেই, সে দিন তো একটু বেশিই ছাড়। অফিস থেকে ফিরে বাবা-মায়ের টিভি দেখাও ওঠে শিকেয়। সিরিয়াল বা রিয়্যালিটি শো থেকে চ্যানেল পাল্টে টিভির পর্দায় তখন অ্যানিমেশনের নানা চরিত্র। কেউ বিভোর হয়ে ঢোলকপুর পৌঁছে গিয়েছে ‘ছোটা ভীম’-এর সঙ্গে, কেউ মুগ্ধ ডোরেমনের নতুন নতুন গ্যাজেট-এ, কারও আবার মজে টম ও জেরির খুনসুটিতে।

এই ছবি এখন ঘরে ঘরেই। শুধু টিভিতেই নয়, অ্যানিমেশন এখন সর্বত্রই জনপ্রিয়। জামা থেকে পুজোর প্যান্ডেল, বইয়ের স্টিকার, টিফিন বাক্স, জলের বোতল, চাদর— সবেতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কার্টুন চরিত্র। অ্যানিমেশনের প্রতি ছোটদের এই ঝোঁকের কথা মাথায় রেখেই এ বার কলকাতা ও আশপাশের এলাকার বেশ কিছু স্কুলে শুরু হচ্ছে অ্যানিমেশনের পাঠ। বাংলা, ভূগোল, ইতিহাসের পাশাপাশি অ্যানিমেশন নিয়ে সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ক্লাস করানো হবে বলে জানালেন স্কুলের কর্তারা।

শহর ও শহরতলিতে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অ্যানিমেশনের নানা রকম কোর্স রয়েছে। সেখান থেকে মেলে স্নাতক স্তরের ডিগ্রিও। কিন্তু স্কুলের পাঠ্যক্রমে অ্যানিমেশন কোর্স এই প্রথম বলেই দাবি বিভিন্ন স্কুল-কর্তৃপক্ষের। তাঁরাই জানালেন, শুধু নির্দিষ্ট ক্লাসই নয়, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে আয়োজন করা হবে বিভিন্ন কর্মশালারও। অর্থাৎ পড়ুয়ারা যাতে কার্টুন চরিত্রগুলিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখার পাশাপাশি নিজে থেকেও সেগুলি তৈরি করতে পারে, সে পথেই এগোচ্ছে স্কুলগুলি।

সোদপুরের সেন্ট জেভিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের অধ্যক্ষা লিপিকা ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই অস্থায়ী ভাবে এই কোর্স শুরু করে দিয়েছি। তবে ইচ্ছে আছে এ বার থেকে অ্যানিমেশনের একটি পৃথক ক্লাস রাখার। যাতে শিশুরা কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে পারে।’’ তবে এ নিয়ে কাউকেই কোনও চাপ দেওয়া হবে না বলে জানালেন তিনি।

বরাহনগরের সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক নবারুণ দে বললেন, ‘‘নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রতি সেমেস্টারে যে প্রজেক্টের কাজ করতে হয়, এ বছর থেকে তাতে থাকবে অ্যানিমেশনও।’’ স্কুলের তরফে পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। অভিনব ভারতীর অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্ত বলেন, ‘‘এ বছর আমাদের স্কুলে অ্যানিমেশন নিয়ে একটি কর্মশালা হয়েছে। সামনের বছর থেকে এ নিয়ে কোর্স চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।’’

কলকাতায় এ রকম অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পরেই অ্যানিমেশনের কোর্স করা যায় এবং সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়। পরে মেলে চাকরির সুযোগও। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় শিক্ষার মান নিয়ে। অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার এম ডি অঙ্কুশ নন্দী বলেন, ‘‘অ্যানিমেশনের জগৎটা খুবই বড়। যদি ছোট থেকে এই বিষয়ে কোনও জ্ঞান না থাকে, তা হলে শুধু স্নাতক পাশ করলেও অ্যানিমেশন শিক্ষা ঠিক ভাবে নেওয়া হয় না। তাই অবশ্যই স্কুল স্তর থেকেই এই বিষয়ের সঙ্গে সংযোগ থাকা প্রয়োজন।’’ অগস্ট মাসে কলকাতায় এ নিয়ে তাদের সংস্থার একটি কর্মশালাও করা হবে বলে জানান তিনি। কর্মশালা হবে শহরের বিভিন্ন স্কুলেও। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে শিক্ষকদেরও। তাঁরাই শেখাবেন পড়ুয়াদের। ‘‘বহু স্কুল কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন’’— বললেন অঙ্কুশবাবু। গোটা বিষয়টি নিয়ে বেশ ইতিবাচক সাউথ পয়েন্ট স্কুল। স্কুলের মুখপাত্র কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘ভাবনাটি খুব ভাল। ছোট বয়স থেকে অ্যানিমেশন শেখাতে পারলে তা বেশ ভাল হয়। আমরাও এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Animation schools subjects
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE