Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

আগুনের ৮ মাস পরেও গোরাবাজার ‘জতুগৃহ’

বে-হুঁশ: তারের যেমন সংযোগ থেকে আগুন লেগেছিল, তেমন সংযোগ রয়েছে এখনও। সোমবার, দমদম গোরাবাজারে। নিজস্ব চিত্র

বে-হুঁশ: তারের যেমন সংযোগ থেকে আগুন লেগেছিল, তেমন সংযোগ রয়েছে এখনও। সোমবার, দমদম গোরাবাজারে। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১৫
Share: Save:

সরস্বতী পুজোর আগের রাতে চিঁড়েমুড়ি-পট্টির কাছে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল দমদমের গোরাবাজার। ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। তিনশোর বেশি দোকান ভস্মীভূত হয়েছিল। তার আট মাস পরেও গোরাবাজার আছে গোরাবাজারেই। বাতিস্তম্ভ থেকে সরাসরি তার টেনে দিব্যি চলছে বাজারের বিদ্যুৎ পরিষেবা!

সোমবার ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, ফরেন্সিক তদন্তে শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হয়েছিল। ২১ জানুয়ারি গভীর রাতে ওই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘিরে পুর-বাজারের অগ্নি-সুরক্ষা বিধিকে কাঠগড়ায় তুলেছিল দমকল। বাজারের চারপাশে কুণ্ডলী পাকানো তারের একাধিক সংযোগ যে ভাবে সেলোটেপ দিয়ে মোড়া ছিল, সেটাই বিপদ ডেকে এনেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে বক্তব্য ছিল দমকলেরও। আট মাস পরেও এই ধরনের তারের সংযোগের দেখা মিলল বিশ্বকর্মা পুজোর গোরাবাজারে। মাছবাজার, সবজি পট্টি, চিঁড়েমুড়ি পট্টির কাছে ঝুলের মধ্যে তারের যা অবস্থা তাতে যে বিপদ হতেই পারে, সে কথা মেনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। তাঁদেরই একাংশ কী ভাবে বাইরের বাতিস্তম্ভ থেকে নীল-সাদা বিদ্যুৎবাহী তার ‘হুকিং’ করে বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর দোকানে আলো দেওয়া হয়েছে তা দেখিয়েও দিলেন।

ব্যবসায়ীদের দাবি, অগ্নিকাণ্ডের সময়ে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আলো দেওয়ার জন্য পুরসভাই অস্থায়ী ভাবে বাইরের বাতিস্তম্ভ থেকে সরাসরি তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ টানার ব্যবস্থা করে। আট মাস ধরে সেই ব্যবস্থাই বহাল রয়েছে। বাতিস্তম্ভ থেকে বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের ছাদের উপর দিয়ে সেই তার গিয়ে মিশেছে বাজারের মধ্যে থাকা বাতিস্তম্ভের মিটার বক্সে। ওই পিলারের উপরে আবার পাখি বাসা তৈরি করেছে। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আগুন লাগার পরে কিছু ব্যবসায়ী সিইএসসি-র কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়েছেন। কেউ কেউ নিজের উদ্যোগে ইলেকট্রিক ওয়্যারিং যে ভাবে করা দরকার তা করেছেন। কিন্তু হুকিংয়ের তার যদি চাপ নিতে না পারে ফের আগুন লাগে, কেউ বাঁচবে?’’ আর এক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘পুরকর্মীদের বারবার বলেও লাভ হয়নি। খুব বেশি তো বলাও যায় না!’’

গোরাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘৫০-৬০টি দোকানে অস্থায়ী ভাবে বিদ্যুতের যে লাইন দেওয়া হয়েছিল সেটাই রয়েছে। ছাদের উপর দিয়ে যে ভাবে তার টানা হয়েছে তা যে বিপজ্জনক মানছি। কিন্তু নিজেরা যেটুকু করার করেছি। পুরসভার কাছ থেকে তো কোনও পরামর্শও পাইনি। বাজারের সংস্কার নিয়ে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সে সবেরও তো দেখা নেই।’’ দমদম ক্যান্টনমেন্ট বিজনেসম্যান ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘পুরসভারও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সব বলছে করে দেব। কিন্তু কখন?’’

দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরীন্দ্র সিংহের দাবি, ‘‘যতদূর জানি ওই তারে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তার হয়তো খোলা হয়নি।’’ ব্যবসায়ীদের অন্য অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এত পুরনো বাজারের সংস্কার করতে গেলে নতুন ভাবে সব করতে হবে। ব্যবসায়ীদের আবার ব্যবসাও করতে দিতে হবে। স্থায়ী সমাধানের জন্য সকলকে একমত হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calamities Fire Extinguisher Gorabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE